ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে ইউজিসির নতুন দিকনির্দেশনা

জিইডি কোর্স সম্পন্ন করে আর স্নাতকে ভর্তি হওয়া যাবে না

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

জিইডি কোর্স সম্পন্ন করে আর স্নাতকে ভর্তি হওয়া যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চার মাস মেয়াদীনামসর্বস্ব জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (জিইডি) কোর্স শেষ করে আর স্নাতকে ভর্তি হওয়া যাবে না। চার মাস মেয়াদী আন্তর্জাতিক মানের এই জিইডি কোর্সকে দেশের শিক্ষা বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সমমান করে এতদিন স্নাতকে ভর্তি হওয়া যেত। আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর জিইডি ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কোন কোর্সে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এদিকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম পয়েন্ট ফাইভ বা দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। ভর্তির এ নির্দেশনাকে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদসহ বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীন স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জিইডি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চার মাস মেয়াদী জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (জিইডি) কোর্স শেষ করে স্নাতকে ভর্তি হওয়া যাবে না। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর জিইডি ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কোন কোর্সে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত সব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এতদিন চার মাস মেয়াদী আন্তর্জাতিক মানের এই জিইডি কোর্সকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সমমান হিসেবে গণ্য করা হত। একজন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এই কোর্স সম্পন্ন করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারত। এই সুযোগে দেশের অলিতে গলিতে গজিয়ে উঠেছে নামসর্বস্ব কিছু বাণিজ্যনির্ভর কনসালটেন্সি সেন্টার, যারা বিদেশের মানহীন কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে সনদও দিয়ে থাকে। নানা আকর্ষণীয় অফার দিয়ে এরা শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এসব বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারনেটে পরীক্ষা দিয়ে জিইডি সার্টিফিকেট পাওয়া যেত। এ ডিগ্রী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এইচএসসি সমমান পাস হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এইচএসসির সমমান হিসেবে এই কোর্স স্বীকৃত ছিল। দেশে অনেক শিক্ষার্থী এভাবে জিইডি পাস করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়ন করছেন। কিন্তু নামসর্বস্ব সনদ নিয়ে দেশের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সনদের সমান স্বীকৃতি প্রদান নিয়ে আপত্তি ওঠে দেশের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। শিক্ষা বোর্ডগুলোও প্রশ্ন তুলেছে চার মাসের নামকাওয়াস্তে অনলাইনে শিক্ষা কেন দেশের দুই বছর মেয়াদী শিক্ষার সমান হবে? বোর্ডগুলোর আপত্তি ও বিভিন্ন মহলের আপত্তিকে আমলে নিয়ে ইউজিসি জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর জিইডি ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কোন কোর্সে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেছেন, জিইডি পাসকে এইচএসসির সমমান ধরা হলেও তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এইচএসসি কোর্স দুই বছর মেয়াদী আর জিইডি মাত্র চার মাসের ডিপ্লোমা কোর্স। এ কারণে এটিকে সমমান বলা যাবে না। ইউরোপ-আমেরিকার সিলেবাস আর আমাদের সিলেবাসে পার্থক্য রয়েছে। তাই অন্য দেশে এই কোর্স সমমান হলেও আমাদের দেশে তা হতে পারে না। এ কারণে এই কোর্সের গ্রহণযোগ্যতা বাতিল করা হয়েছে। তাই এখন থেকে জিইডি কোর্সধারীরা বাংলাদেশের বেসরকারী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের কোন কোর্সে ভর্তি হতে পারবে না। এদিকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম পয়েন্ট ফাইভ বা দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে বলেও জানিয়েছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন স্বাক্ষরিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউজিসির থেকে প্রোগ্রাম বা কোর্সের অনুমোদনপত্র প্রাপ্তি ছাড়া কোন বিষয় বা কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বা বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস থাকতে হবে বা দুটি মিলে মোট পয়েন্ট ফাইভ (এসএসসিতে ২.৫ এবং এইচএসসিতে ২.৫) থাকতে হবে। যদি কেউ একটি পরীক্ষায় জিপিএ-২ পায় তবে তাকে দুটি মিলে পয়েন্ট-৬ থাকতে হবে। তবে সে ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীদের ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক কোর্সে ভর্তির জন্য ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫টি বিষয় এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ২টি বিষয় অবশ্যই নির্বাচন থাকতে হবে। এ দুটি পরীক্ষায় তাকে ন্যূনতম জিপিএ-২ পেতে হবে। তবেই তাকে ভর্তি করা যাবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় মোট পয়েন্ট ফাইভ থাকতে হবে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডিপ্লোমা পর্যায়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদভুক্ত প্রোগ্রামে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় কেবল বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে হবে। অন্য কোন বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না। স্নাতকোত্তর ডিগ্রী গ্রহণেচ্ছু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম জিপিএ-২ ধারীদের ভর্তি করানো যাবে।
×