ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ও অপপ্রচার প্রতিরোধ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদবিরোধী সচেতনতা তৈরিসহ নানা বিষয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়

তপন বিশ্বাস ॥ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও সমান তালে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ মন্ত্রণালয়টির কাজ এখন শুধু নামাজ-রোজা আর হজব্রত পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং দেশকে এগিয়ে নিতে এ মন্ত্রণালয়ও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে উদার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সার্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মাদক ও নারী-শিশু পাচার, যৌতুক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাপক আর্থিক সাহায্যও দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্তধারণা ও অপপ্রচার প্রতিরোধ, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদবিরোধী সচেতনতা তৈরি, আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং সামাজিক বৈষম্য নিরসন করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জঞ্জাল সাফ করে একে একটি দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। বর্তমান সরকারের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত প্রকল্প হচ্ছে ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প। মসজিদসমূহ নির্মিত হলে ৩১৪০০ জন মহিলাসহ প্রায় ৪.৫০ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়া উক্ত মসজিদসমূহে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম, হেফজখানা, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি, হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণ, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা রয়েছে। হজ ব্যবস্থাপনা ॥ ২০০৯-১৭ পর্যন্ত মোট ৯,৫৪,৪৬৮ হজযাত্রী পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালের হজযাত্রীর সংখ্যা ১,২৭,১৯৮। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার ফলে হজযাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে হজ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। িি.িযধলল.মড়া.নফ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় হজ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ২০১৬ সাল হতে বছরব্যাপী হজে গমনের জন্য হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন এবং ক্রমিক নম্বর অনুসারে নির্ধারিত কোটার বিপরীতে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক সকল হজযাত্রীর তথ্য ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করে অনলাইনে ভিসা লজমেন্ট ও হজের আনুষঙ্গিক তথ্যাবলী সৌদি দূতাবাস ও মুয়াসসাসাকে প্রেরণ করা হয়। হজযাত্রী ও এ সংক্রান্ত সকল প্রকার সেবা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা হজ অফিসসহ সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় আইটি হেল্পডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ওয়েববেইজড হজ ব্যবস্থাপনা সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে। অনলাইনে হজযাত্রীদের আবেদন গ্রহণ করা ও আবেদনের তথ্যাবলীর ভিত্তিতে ডাটাবেইজ তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। মক্কা এবং মিনায় আইটি হেল্পডেস্ক থেকে হজযাত্রীদের চাহিদা মোতাবেক ম্যাপ বিতরণসহ সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করা হয়েছে। ২০০৯ সাল হতে হজ মৌসুমে হজ অফিসের কার্যক্রমের জন্য মক্কায় হজ অফিস স্থাপন। ২০১১ সাল হতে জেদ্দার হজ টার্মিনালে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য আনুমানিক ৪০ লাখ ব্যয়ে হজ প্লাজা ভাড়া করা হয়। সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য মক্কা ও মদিনায় দূরবর্তী পুরাতন ও পাহাড়ের ওপর বাড়ি ভাড়া করার পরিবর্তে নিকটবর্তী সমতল ভূমিতে নতুন বাড়ি ভাড়া করা হয়। ঢাকা, আশকোনা হজ ক্যাম্পে হাজীদের সুবিধার্থে আমি ২০১০ সনে হজ ক্যাম্পের ডরমেটরিতে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। ২০১০ সালে হজক্যাম্পে হজযাত্রীদের বিমান/কাস্টমস/ ইমিগ্রেশন এলাকায় সেন্ট্রাল এসি স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুদান ও সাহায্য প্রদান ॥ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে ২০০৯ সাল থেকে এ যাবৎ মোট ১,০১,৫৫৪টি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুস্থদের সর্বমোট ১৭৫,৯২,১৬,০০০/- টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বৃহৎ প্রকল্প। জানুয়ারি ১৯৯৩ থেকে শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে ৬ষ্ঠ পর্যায়ে চলমান রয়েছে। বর্তমানে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্প এর মাধ্যমে দেশের মসজিদের ইমামগণ মসজিদ কেন্দ্রে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদের বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজী, আরবি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০০৯ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬৪ লক্ষ ২০ হাজার শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান, ২৯ হাজার ২০০ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীকে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা প্রদান এবং ৭৬৮টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৭৩ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পে নব্য ও স্বল্প শিক্ষাপ্রাপ্তদের জন্য জীবনব্যাপী (অব্যাহত) শিক্ষা চর্চা ও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য সারাদেশে ২০৫০টি রিসোর্স সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রকল্প কার্যক্রম সংক্রান্ত অন্যান্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের যেসব এলাকায় স্কুল নেই সেখানে এ প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত অঞ্চল, হাওড়-বাঁওড়, দ্বীপ ও চরাঞ্চল এবং নদী-ভাঙ্গন এলাকাসমূহের মধ্যে যেখানে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেসব অঞ্চল/এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় ২টি করে মোট ১০১০টি ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা’-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা পর্যায়ক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঝে ঋণ/অনুদান প্রদানের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ইমাম-মুয়াজ্জিনগণের কল্যাণে গত মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত ‘ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট’-এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার মোট ৭ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে মঞ্জুরি প্রদান করেন। ট্রাস্টের সদস্যভুক্ত স্বল্প আয়ের ৬ ৫০ জন ইমাম-মুয়াজ্জিনকে ৭ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা সুদ মুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়। এছাড়া ৭ হাজার ৪০ জন অসহায় দুস্থ ও দরিদ্র ইমাম-মুয়াজ্জিনকে মোট ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ১২ লাখ ২০ হাজার শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান এবং ২৫০টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে । উক্ত সময়ে প্রকল্প প্রকল্পটির জন্য ১৮৫.৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। হিন্দু ধর্মীয় নেতা তথা পুরোহিত ও সেবাইতদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করার জন্য আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ২৫ হাজার ৬০০ পুরোহিত ও সেবাইতকে ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর হতে বৌদ্ধ শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘প্যাগোডাভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ প্রকল্পে আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এ পাঁচ জেলায় ১০০টি বৌদ্ধ বিহারে ১০০টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ২ হাজার বৌদ্ধ শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা সম্পন্ন করেছে। তৃণমূল পর্যায়ে ১০০টি বৌদ্ধ বিহারে ১০০টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ২ হাজার বৌদ্ধ শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা সম্পন্ন করেছে। তৃণমূল পর্যায়ে ১০০ জন বৌদ্ধ মহিলা ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটা ট্রাস্টের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ৯৬.০০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ২,০০০ শিশুকে প্রাক প্রাথমিক প্রদান করা হয়েছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমন এবং মাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে প্রচার কার্যক্রম ॥ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় জেলা, উপজেলা, পর্যায়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মনিটরিং কমিটির উদ্যোগে নিয়মিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারের জন্য ইমাম, খতিব, আলেম, ওলামাদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভা, পথর‌্যালি, সেমিনার এবং সমাবেশের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ইসলাম’ শীর্ষক ২ বছর মেয়াদী একটি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ইসলাম’ শিরোনামে মোট পাঁচ লাখ কপি পুস্তিকা মুদ্রণ করে বাংলাদেশের প্রতিটি মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভাগীয় শহরগুলোতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজনের মধ্য দিয়ে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক উদ্যোগে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের নিয়ে মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববী কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন নাসির আল খুযাইম এবং পবিত্র মসজিদুন নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম এ মহাসম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সমাবেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে মুসলমানদের করণীয় বিষয়ে ইমাম সাহেবরা আলোচনা করেন। ওআইসির মহাসচিব কর্তৃক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আগারগাঁও প্রধান কার্যালয়ে ‘হালাল ল্যাব’-এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নিরসন এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামগণকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০০৯ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর জাতীয় ইমাম সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার এবং বিশ্ব বাজারে হালাল খাদ্য, ভোগপণ্য, প্রসাধন সামগ্রী ও ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের অনুমোদনক্রমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০১০ থেকে হালাল সনদ প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০০৯ সাল থেকে সরকারীভাবে যাকাত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ২,৯৫,২০৩ জনকে প্রায় ১৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। মাদক ও নারী-শিশু পাচার, যৌতুক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে উদার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সার্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বর্তমান অর্থবছরে নিম্নোক্ত মোট ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছেÑ প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম বিষয়ক নতুন প্রকল্প ॥ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্তধারণা ও অপপ্রচার প্রতিরোধ, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষার জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদবিরোধী সচেতনতা তৈরি, আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং সামাজিক বৈষম্য নিরসন করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতাবৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিবেচ্য প্রকল্পটি ৪৮২০.০০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং জুলাই ২০১৮ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ইত্যাদি। ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
×