ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি॥ বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি॥ বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কিশোরগঞ্জ ও রংপুর জেলায় বজ্রপাতে কিশোরসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কালবৈশাখীতে ভোলা, বরিশাল ও মাদারীপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে ফসলি ধান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অর্ধ শতাধিক কাঁচা বসতঘর ভেঙ্গে গেছে। মঙ্গলবার এসব ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভে-াবাড়ী ইউনিয়নের দেওবদপুর গ্রামে বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, জয়নাল (৩৭) ও রাসেল (৭)। পীরগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা তাহের উদ্দিন জানান, সকালে বৃষ্টির সময় বাড়ির বাইরে থাকায় বজ্রপাত ঘটলে জয়নাল ও রাসেল নিহত হয় বলে জানান তিনি। কিশোরগঞ্জ ॥ জেলার হাওড় অধ্যুষিত অষ্টগ্রামে ইমান হোসেন (১২) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার বারইপুর গ্রামের হেলিম মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশে হাওড়ের মধ্যে জমি থেকে গরু আনতে যায় ইমান। এ সময় আকস্মিক বৃষ্টিপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ভোলা ॥ ভোলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে মঙ্গলবার দুপুরে জেলার ২ উপজেলায় স্কুলসহ তিনশতাধিক কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে লালমোহন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও ঝড়ের কবলে পড়ে সিমেন্ট বোঝাই কার্গো জাহাজ ও একটি জেলে নৌকা ডুবে যায়। এ সময় নৌকার এক জেলের মৃত্যু। অপর দিকে মনপুরা উপজেলার ব্যবসায়ী আমির হোসেন হাওলাদার জানান, দুপুর ২টার দিকে ঝড়ের কবলে পড়ে মেঘনা নদীর ঘাটে বেঁধে রাখা ৩ হাজার বস্তা সিমেন্টসহ তার একটি কার্গোবোট কাত হয়ে ডুবে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বোটটি উদ্ধার করা সম্ভব হলেও প্রায় ১৫ লাখ টাকার সিমেন্ট নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে মনপুরার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাউফল ॥ মঙ্গলবার দুপুরে বাউফলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুপুর ১টা ২০ মিনিটের সময় হাঠাৎ এই কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয় এবং ১টা ৪৫ মিনিটে শেষ হয়। ২৫ মিনিট স্থায়ী এই ঝড় ও দমকা বাতাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার গাছ গাছালি, কাঁচা ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিধস্ত হয়েছে। রবি ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে পৌর শহরের হাইস্কুল মার্কেট ব্যাপক ধংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। এ এলাকা থেকে পটুয়াখালী, বগাও ঢাকা ও কালাইয়া-ঢাকাগামী নৌ-রুটে দোতলা লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। বরিশাল ॥ মঙ্গলবার দুপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আকস্মিক ঝড়ো বাতাসে জেলার দশটি উপজেলায় গাছপালা ভেঙ্গে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা বসত ঘর ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া বোরো ধানের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুত সংযোগের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গৌরনদী উপজেলায়। ঝড়ের সময় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর সাউদেরখালপাড় নামক এলাকায় যাত্রীবাহী মাহেন্দ্রার ওপর গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে পাঁচজন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। ঝড় শুরুর পর থেকে জেলার দশ উপজেলায় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে। মাদারীপুর ॥ মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। কালবৈশাখীর তা-বে রাজৈরের ৩ ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঝড়ের তা-বে রাজৈর উপজেলা কদমবাড়ি, সাতপাড় (রাজৈর অংশ) ও খালিয়া ইউনিয়নের শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ি, শত শত গাছ, দোকান-পাট এবং কাঁচা-পাকা ধান ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কদমবাড়ি ইউনিয়নে। এদিকে মাদারীপুরের কালকিনিতে কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে করে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ ঝড়ের তা-ব চলে। মুন্সীগঞ্জ ॥ মঙ্গলবার দুপুরে গজারিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুরা গ্রামে বজ্রপাতে মোঃ ইসমাইল (৫৫) একব্যক্তি নিহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসমাইল গজারিয়া ইপিআই শিল্প পার্কের পশ্চিম পার্শ্বের জমি থেকে গবাদি পশু আনতে গেলে হঠাৎ ঝড়ে আটকা পড়ে। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে সে প্রাণ হরায়। ইসমাইল লক্ষীপুরা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র। এদিকে মঙ্গলবারের ঝড়ে মুন্সীগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক পুল উপড়ে এসে এবং তার ছিঁড়ে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
×