ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমনওয়েলথ ওমেনস ফোরাম আয়োজিত প্লেনারি সেশনে প্রধানমন্ত্রী

নারী ক্ষমতায়নকে মূল স্তম্ভে নিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

নারী ক্ষমতায়নকে মূল স্তম্ভে নিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই

উত্তম চক্রবর্তী, লন্ডন থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নকে মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড় করিয়ে ভবিষ্যতে আমরা দারিদ্র্য ও সংঘাতমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সরকারের মূল দর্শনই হচ্ছে মানবিক উন্নয়ন অর্জনে নারী-পুরুষরা হাতে হাত ধরে কাজ করবে। কেননা জাতি হিসেবে আমাদের যাত্রায় নারীরা সমান অংশীদার। উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়নও সম্ভব নয়। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের রানী এলিজাবেথ কনফারেন্স সেন্টার-২ তে কমনওয়েলথ ওমেনস ফোরাম আয়োজিত ক্ষমতায়নে শিক্ষা ঃ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারীর জন্য গুণগতমানের প্রাথমিক শিক্ষা ও বাস্তবভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সমতা আনয়ন’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে মূল বক্তব্যে উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের আমন্ত্রণে এই সেশনে মূল বক্তব্য প্রদান করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সেশনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া জিলার্ড। বক্তব্য রাখেন সিয়েরালিয়নের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র আমন্ত্রণে ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল ২৫তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১ টায় সৌদি আরব থেকে লন্ডন পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সফরের প্রথম দিনেই ওই প্ল্যানারি সেশনে মূল বক্তব্যে উপস্থাপন ছাড়াও ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। মূল বক্তব্যে উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নেয়া কমনওয়েলথভুক্ত সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশ্য করে জাতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় নারীর অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের যাত্রায় নারীরা সমান অংশীদার। আমাদের নারীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ হিসেবে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাই বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের পুনর্বাসনে একাত্তর সালে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের সংবিধানে লিঙ্গ সমতা এবং মৌলিক অধিকার সমতা নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে ব্যাপক নারী ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অগ্রপথিক। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসেব অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়নে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। আর আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব না। নারী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার একগুচ্ছ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ বছর কমনওয়েলথ সম্মেলনের (সিএইচজিএম) মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘অভিন্ন ভবিষ্যত অভিগামী’। সম্মেলন উপলক্ষে লন্ডনের সম্মেলনের স্থলের আশপাশে গড়ে তোলা হয়েছে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলন স্থলে আগমনকে সামনে রেখে সম্মেলন স্থলের চতুর্দিকে বসানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একমাত্র সম্মেলনে আসার অনুমতিপ্রাপ্ত কার্ড ছাড়া সম্মেলনের আশপাশে কাউকে ঘেঁষতেও পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। এ দিকে প্ল্যানারি সেশন শেষে সম্মেলন স্থলেই মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহায়তা বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মরড্যান্ট এমপির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা ওডিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিঃ নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় লন্ডনের লর্ড মেয়র কর্তৃক আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজেও অংশ নেন তিনি। সফরকালে আজ বুধবার এশীয় নেতাদের অংশগ্রহণে ‘ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোইং?’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনাতে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকের উদ্বোধনী ও অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া কমনওয়েলথ মহাসচিবের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেয়া নৈশভোজেও প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। ২০ এপ্রিল সম্মেলনের সমাপনী কার্যনির্বাহী অধিবেশনে অংশ নেয়ার পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি (আরসিএস) আয়োজিত সংবর্ধনা এবং ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আট দিনের এই সফর শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে আয়োজিত প্ল্যানারি সেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের দু মেয়াদে নারী শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের সরকার বাংলাদেশে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছে। এ ছাড়া ২ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন শিশুর জন্য স্কুলে খাদ্য কর্মসূচী চালু করেছে। আর বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে যে, আমাদের সরকার ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে আসছে। এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ৩৬২ মিলিয়ন পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ২০ দশমিক ৩ মিলিয়নের মতো শিক্ষার্থীকে সরকার থেকে উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে ছাত্রী। আর বর্তমান সরকারের আমলে দেশের শতভাগ শিশু এখন স্কুলে যায়। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে স্কুলগামী মেয়েদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ, তা আমাদের সরকারের সময় বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে। শিক্ষার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০০৯ সাল থেকে ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান সংসদের ২২জন নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। আর সম্ভবত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদই বিশ্বের মধ্যে একমাত্র সংসদ যেখানে স্পীকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা চারজনই নারী। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে সবখাতে নারীদের ব্যাপক ক্ষমতায়নের উদাহরণ তুলে ধরে কমনওয়েলথ নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন নারীরা বিমানের পাইলট, ট্রেন চালক, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। এ ছাড়াও জেলা জজ, উপকমিশনার (ডিসি), পুলিশ সুপার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক ও রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোতেও দক্ষতার সঙ্গে আমাদের নারী কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের ১৯০ জন নারী সদস্য কাজ করছেন। এমনকী বাংলাদেশের নারীরা এভারেস্টসহ বিশ্বের বড় বড় পর্বতমালা জয় করেছেন। খেলাধূলাতেও বাংলাদেশের নারীরা দেশে-বিদেশে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। প্রায় ২০ মিলিয়ন নারী কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন সেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের রফতানির ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প থেকে আসে। আর তৈরি পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশের মতোই হচ্ছে আমাদের নারী শ্রমিক। এ ছাড়া নারীর উদ্যোক্তাদের আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। তারা বিনা জামানতে মাত্র ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ঋণ নিতে পারে। নারী উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ‘আমার ইন্টারনেট আমার আয়’ প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নারীদের সাবলম্বী করতে এবং চাকরি বাজারে তাদের প্রবেশ বাড়াতে খাত ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হচ্ছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীরা বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সাবলম্বী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা, সামজিক ও মানবিক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে আমরা ২০১০ সালের শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছি। প্রথমবারের মতো আমাদের সরকার এক বছরের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। আমাদের মোট জনসংখ্যা ৬০ শতাংশ তরুণ। তাদেরকে ভবিষ্যতের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং গ্রামীণ নারীদের জীবন মান উন্নয়নে নারী শিক্ষা ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পারিবারিক ও শোষণের ঘটনা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। নারী শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাল্যবিবাহ হ্রাসে ব্যাপক অবদান রাখছে। এ ছাড়া উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, গতমাসে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। এ অর্জনে বাংলাদেশেই প্রথম এ স্বীকৃতি অর্জনে প্রদত্ত তিনটি শর্তই পূরণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দূরদর্শন হচ্ছে মানবিক উন্নয়ন অর্জনে নারী-পুরুষরা হাতে হাত ধরে কাজ করবে। তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নকে মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড় করিয়ে আমরা ভবিষ্যতে দারিদ্র্য, বৈষম্যহীন ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে চাই। লন্ডনে উষ্ণ সংবর্ধনা ॥ সৌদি আরবে একদিনের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ শেষে সোমবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১টার দিকে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে যোগ দিতে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি সরকরের একটি বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডনের লুটন বিমানবন্দনে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান ব্রিটিশ সরকারের কমনওয়েলথ ও বিদেশ অফিসের প্রটোকল পরিচালক নেইল হলান্ড এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন। বিমানবন্দর থেকে গাড়ির বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আনা হয় হোটেল ক্ল্যারিজে। সাতদিনের লন্ডন সফরকালে এই হোটেলেই থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে আসতে রাত হলেও লুটন বিমানবন্দর এবং হোটেল ক্যারিজের সামনে যুক্তরাজ্যে ও ইউরোপ প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালীরা দীর্ঘক্ষণ রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাত নেড়ে সবাইকে অভিনন্দনের জবাব দেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২১ এপ্রিল শনিবার প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্রিটিশ ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া ওই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে বিপুল বাঙালী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রীতিমতো জনসভার রূপ প্রদানে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
×