ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আক্কাস মাহমুদ

মিনার ছিলেন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

মিনার ছিলেন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর

তারুণ্য দীপ্ত বিবেচনাহীন জীবনযাপনের লাল মোরগের টুঁটির মতো লাল হোন্ডা দাবড়ানো মিনার মাহমুদ। মফস্বল ফরিদপুর থেকে গল্পকার হওয়ার স্বপ্নে আসা ‘মনে পড়ে রুবি রায়’খ্যাত মিনার মাহমুদ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় খোচান ক্যান? কিসের বিতর্কিত আমি...? দিয়ে সাংবাদিকতায় নিজের আগমন জানান দিয়েছিলেন মিনার। ১৯৮৭ সালে নিজেই প্রকাশ করেন তারুণ্যের সাপ্তাহিক বিচিন্তা। হাজারো তারুণ্যের মানসিক তৃপ্তি সাপ্তাহিক বিচিন্তার পাঠক প্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে। দেশে প্রথাবিরোধী সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ছিলেন মিনার মাহমুদ। যা সবার কাছে সোজা মিনারের কাছে তা বিপরীত। জীবনটাকে উল্টে-পাল্টে দেখেছেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার অন্যতম তারকা মিনার মাহমুদ। আন্ডার গ্রাউন্ড অপরাধ চক্র, ছাত্র সন্ত্রাস আর চোরাচালান জগতের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন তিনি। লেখনিতে নির্ভীক মন, আত্মবিশ্বাসী ও রংচটা জিন্সের স্মার্ট সংবাদপত্রের মাসুদ রানা মিনার মাহমুদের বিচিন্তায় প্রবল তারুণ্যের উপস্থিতি আর আধুনিকতা ছিল। প্রচলিত রাজনীতি আর সমাজ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা আর নির্মোহভাবে ইতিহাস পূর্ণপাঠ করার দুঃসাহস ছিল মিনার মাহমুদের। মিনার মাহমুদের বিচিন্তায় তিনটি ইনিংস। রাজকীয় প্রথম ইনিংসটি ছিল কাব্য ও গতিময়। স্বৈরাচার আর রাজাকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জেল-জুলুম সহ্য করে দেশে এলো গণতান্ত্রিক (!) সরকার। শুরু হলো দ্বিতীয় ইনিংস- একের পর এক মামলায় হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত মিনার। দ্বিতীয় ইনিংস বিরতি দিয়ে অতঃপর দেশত্যাগ। আমেরিকার ডিজিটাল কুন্তা-কিন্তে ১৮ বছরের দাসত্ব জীবন শেষ করে ২০০৯-এর এক সন্ধ্যায় প্রিয় জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন। এসেই ধাক্কা! সাংবাদিকতা বদলে গেছে। শুরু করলেন বিচিন্তার তৃতীয় ইনিংস। কর্পোরেট ও বাণিজ্যিক সাংবাদিকতা দেখে মিনার মাহমুদের স্নায়ু চাপ বাড়ে। বিজ্ঞাপনের জন্য সম্পাদককে যেতে হবে এটা ছিল তার কাছে অকল্পনীয়। বিজ্ঞাপন ছাপা হলে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে কিছু লেখা যাবে না- এই আপোসকামি সাংবাদিকতা মিনার কখনও করেননি। তৃতীয় ইনিংসে সরাসরি বোল্ড। মিনার মাহমুদের হাতে গড়া সাংবাদিকদের অনেকেই এখন সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত নাম। সহকর্মী অন্তপ্রাণ মিনারের গর্বের শেষ ছিল না তাদের নিয়ে। কারও করুণা বা সাহায্যের প্রত্যাশী ছিলেন না। কোন কিছুতেই আপোস করেননি কখনও। নিজের পায়ে পথ চলেছেন, পথ দেখিয়েছেন অন্যদের। ২০১২ সালের ২৯ মার্চ প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন মিনার মাহমুদ।
×