ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরের আঁখিরা গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

দিনাজপুরের আঁখিরা গণহত্যা দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ আজ ১৭ এপ্রিল দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ‘আঁখিরা গণহত্যা’ দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের আঁখিরা নামক পুকুরপাড়ে খান সেনাদের হাতে নির্মম ভাবে প্রাণ হারিয়েছিল ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। আজও অনেকে ওই ঘটনার বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আজও সংরক্ষণ করা হয়নি ঐতিহাসিক ঐ বদ্ধভূমিটি। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ওই ঐতিহাসিক স্থানটি এবং এর নির্মম হত্যাযজ্ঞ কাহিনী। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে ফুলবাড়ী উপজেলার রামভদ্রপুর, নবাবগঞ্জ উপজেলার খোশলামপুর ও পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বাধদিঘী গ্রামের এবং রংপুর জেলার বদরগজ্ঞ উপজেলার ফুলবাড়ী সংলগ্ন গ্রামগুলোর প্রায় ৫ শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশু ভারতে আশ্রয় নেয়ার জন্য পালাতে থাকে। ফুলবাড়ী উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে সোনা ও নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়। ৫ শতাধিক মানুষের ওই দলটি শিবনগর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের মধ্য দিয়ে সমশেরনগর গ্রাম হয়ে বারাইহাট পার হয়ে আঁখিরা পুকুরপাড়ে পৌঁছা মাত্র রাজাকার কেনান সরকার ও তার সঙ্গীরা তাদের হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদার বাহিনী সদস্যরা ৫ শতাধিক মানুষকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে গণহত্যা চালায়। ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাওয়া ওই দলের সহযাত্রী ফুলবাড়ী উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা রাখাল চন্দ্র (৬০) জানান, কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকারের কথায় বিশ্বাস করে যাত্রা শুরু করেছিল ৪ উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। কিন্তু তাদের বিশ্বাস এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে তারা বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেননি। ঝাড়ুয়ারবিল সংবাদদাতা বদরগঞ্জ রংপুর থেকে জানান, ১৭ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের ‘ঝাড়ুয়ারবিল গণহত্যা’ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে সেখানে সহস্র্রাধিক শিশু-নারী-পুরুষকে হত্যা করে। তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সেই স্মৃতি স্তম্ভে আজ মঙ্গলবার সকালে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের এই দিনে কালের সাক্ষী ঝাড়ুয়ারবিলে সহস্রাধিক নিরীহ শিশু- নারী ও পুরুষকে জড়ো করে ব্রাশ ফায়ার ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদরবাহিনী। সন্তানহারা শত শত মায়ের দীর্ঘশ্বাস কালের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকলেও দেশের মানুষ এতদিন জানতে পারেনি ওই গণহত্যার কাহিনী। অবশেষে বর্তমান সরকারের সময়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহযোগিতায় ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতি স্তম্ভ।
×