ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেত্রকোনায় বোরো জমিতে ‘নেকব্লাস্ট’ রোগ ॥ ধানে চিটা

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

নেত্রকোনায় বোরো জমিতে ‘নেকব্লাস্ট’ রোগ ॥ ধানে চিটা

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে ॥ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বোরো জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে ‘নেকব্লাস্ট’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব কলমাকান্দা উপজেলায়। এ ছাড়া খালিয়াজুরি ব্যতীত অন্য আট উপজেলাতেও কিছু কিছু জমি আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত জমিতে ধানের বদলে ‘চিটা’ হয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, এ পর্যন্ত ১শ’ ৩০ একর জমি নেকব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৫ একর জমি। আক্রান্ত ইউনিয়নগুলো হচ্ছেঃ রংছাতি, খারনৈ, বড়খাপন ও কলমাকান্দা সদর। স্থানীয় কৃষকরা জানান, আক্রান্ত হওয়ার শুরুতে পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা দেয়। পরে দাগগুলো লম্বা হয়ে চোখাকৃতি ধারণ করে। দাগের মধ্যভাগ ছাই রঙের এবং বাইরের দিক গাঢ় বাদামি রংয়ের হয়। এক পর্যায়ে পুরো পাতাসহ কা- ও শীষ আক্রান্ত হয়ে ধানের বদল চিটা হয়ে যায়। কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে জানান, ‘নেকব্লাস্ট’ মূলত ছত্রাকজনিত রোগ। পাহাড়ি এলাকার মাটিতে এর জীবাণু অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। কলমাকান্দাও একটি পাহাড়ি এলাকা। তাই এখানে আক্রমণ কিছুটা বেশি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বৃষ্টির পর এ জীবাণু বেশি ছড়িয়েছে। এক ক্ষেত থেকে তা দ্রুত অন্য ক্ষেতে ছড়িয়ে যায়। এ ছাড়া তাপমাত্রার ওঠা-নামার সঙ্গেও এ রোগের সম্পর্ক আছে। রোগাক্রান্ত ধান গাছের খাদ্য ও পানি গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ধান চিটায় পরিণত হয়। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বিআর-২৮ জাতের ধানে নেকব্লাস্ট-এর আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। গেলবারের অকালবন্যার পর এ অঞ্চলের কৃষকদের বিআর-২৮ জাতের ধান আবাদেই বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে। আক্রান্ত জমির পরিমাণ খুব বেশি না হলেও তা কাক্সিক্ষত ফলনের কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে বলে স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নেক ব্লাস্ট প্রতিরোধে এরই মধ্যে পর্যাপ্ত লিফলেট, মাইকিং, ওঠান সভাসহ কৃষকদের অতি দ্রুত ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আক্রান্তের হার বেশি হলে সপ্তাহ পর পর কমপক্ষে দুইবার স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি। প্রসঙ্গত, গেলবারের অকাবলবন্যায় জেলার হাওড়াঞ্চলের শতভাগ বোরো ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই ‘নেকব্লাস্ট’ এর প্রাদুর্ভাব কৃষকদের নতুন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের স্থানীয় উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল জানান, নেকব্লাস্ট-এ বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জমি আক্রান্ত হয়েছে। তবে তা পরিমাণে খুব বেশি নয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য আমরা কৃষকদের জমিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ ‘নেটিভো’ ও ‘ট্রুপার’ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। বেশিরভাগ কৃষক স্প্রে করেছেন। তাই আশা করা যায় অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
×