ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

অভিমত ॥ সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধাদের পারিবারিক সুবিধার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে কোটা পদ্ধতির শুরু। যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী চাকরিতে ২৫৮ ধরনের কোটায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরিসংখ্যান মোতাবেক প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ ভাগ, জেলায় ১০ ভাগ, নারী ১০ ভাগ, উপজাতি ৫ ভাগ ও প্রতিবন্ধী ১ ভাগ নিবন্ধিত। মূলত দেশের অনগ্রসর মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য কোটা পদ্ধতি বিদ্যমান থাকলেও দৃশ্যমান যে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংখ্যা বেশি। হয়তো মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্যই পুরস্কার হিসেবে এ কোটা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে সেই পুরস্কার অনেকটাই তিরস্কারে সমাদৃত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করতে ‘মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষিত আইন’ প্রণয়নসহ বিবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান বিশেষভাবে আলোচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা তীব্র সমালোচিত। বিশেষভাবে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের ক্ষেত্রে ৩২ বছর এবং নাতি-নাতনি পর্যন্ত যার পরিসীমা বিস্তৃত। যুক্তিসঙ্গতভাবে সংবিধানে স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। সম্মানিত বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীবৃন্দের প্রতি গভীর সমবেদনাসমেত আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ বাঞ্ছনীয়। কেননা, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকেই অনেক সাধনা ও পরিশ্রম করে বিসিএস পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষায় অনির্বাচিত হয়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বেরিয়ে যেতে হয়। মেধা বিকাশে সঠিক মর্যাদা না পাওয়ায় গুমরে মরা এই জীবনগুলো বংশপরম্পরায় বহুদিন ধরে ধাবমান। যার রেশ আমাদের আজকের প্রজন্ম সামলে উঠতে না পেরে এমন আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তবে, এমন কোন সংঘাতই আন্দোলনের মূল উপজীব্য হতে পারে না যা একজন ছাত্রকে তার শিক্ষককে অপমান করতে অগ্রসর করে। তাই সাধারণ ছাত্র জনতার ওপর অন্যায়ভাবে অমানবিক হামলা যেমন সমালোচিত, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের বাসায় হামলাও ক্ষমার অযোগ্য। দ্বিধা যখন কোটা ব্যবস্থা নিয়ে, সেক্ষেত্রে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে নান্দনিক সাধুবাদ জানাতে হয় যে ‘কোটা পদ্ধতি বাতিল’ ঘোষণার জন্য। একজন মুক্তিযোদ্ধা তথা বঙ্গবন্ধুকন্যা হয়েও সাধারণের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্ত সবারই আশার সঞ্চার জুগিয়েছে। আমরা যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, দেশপ্রেমকে হৃদয়ে নিঃস্বার্থভাবে আলিঙ্গন করি, তাদের জন্য এ সিদ্ধান্ত সত্যিই গৌরবোজ্জ্বল। ক্রোধ কখনও সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করতে পারে না। তাই, যে ছাত্রছাত্রীরা রাজাকারের ফাঁসিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আলোর মিছিলে মুখরিত ছিল তারা আজ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সংবেদনশীল। মুখবন্ধে এতটুকুই সীমাবদ্ধ যে, আমাদের বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে বিষয়ভিত্তিক কোর্স ছাড়াও পাশ্চাত্য দেশগুলোর ন্যায় ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণের কিছু বিষয় নিবন্ধিত করা উচিত। যার দ্বারা আমাদের আলোকিত ভবিষ্যত তারুণ্য তাদের কৃতকর্মে লজ্জিত না হয়ে পূর্বের ইতিহাসের ন্যায় মাথা উঁচু করে বিশ্বে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিশেষ মর্যাদায়। লেখক : গবেষক
×