ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ ॥ সৌদি আরবের সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ ॥ সৌদি আরবের সঙ্গে

এম শাহজাহান ॥ পনেরোটি খাত সামনে রেখে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশী পণ্যের একটি বড় বাজার হতে যাচ্ছে দেশটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সৌদি আরব সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেসব জটিলতা রয়েছে তা দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে সৌদি আরব ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। গার্মেন্টস আইটেম, সিরামিকস পণ্য, অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি তেল ও গ্যাস, ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও ওষুধ, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, পর্যটন, কৃষি এবং খাদ্য ও পানীয় খাতে দেশটির আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, মুসলিম প্রধান মধ্যপ্রাচ্যের এদেশটিতে জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে থাকলেও পণ্য রফতানিতে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ আমদানি করছে বেশি, রফতানি করছে কম। ফলে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। সংশ্লিষ্টদের মতে, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্য আমদানি করতে পারে সৌদি আরব। বিশেষ করে সব ধরনের হালাল খাবার সৌদি আরবে রফতানি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্য আমদানি ও ভোগ করতে পারে সৌদি আরব। ধর্ম এক হওয়ার কারণে আমাদের কাছ থেকে হালাল খাবার নিতে পারে। অথচ এই দেশটি বাংলাদেশ থেকে রফতানিযোগ্য তেমন কোন পণ্য নিচ্ছে না। তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী তাদের সেবা দিচ্ছেন। তাদের দেশের ছোট ছোট কাজ করছেন। কিন্তু আমরা এখন বাণিজ্য বাড়াতে চাই বিনিয়োগ ও পণ্য রফতানির মাধ্যমে। শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ হালাল খাবার উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়-চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সৌদি আরব এসব খাদ্যপণ্য নিতে পারে। এছাড়া গার্মেন্টস, সিরামিকস, টেরিটাওয়েলসহ অন্যান্য পণ্যতো রয়েছেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরের মধ্য দিয়ে আশা করছি এসব বিষয়ের সমাধান হবে। ইতোমধ্যে সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও এদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বেশকিছু সমঝোতা স্মারক চুক্তি করা হয়েছে। এখন এসব চুক্তির বাস্তবায়নও প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরবের উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসেন। ওই সফরের সময় এফবিসিসিআইর উদ্যোগে ‘বিজনেস টু বিজনেস’ আলোচনা সভা করা হয়। বাংলাদেশ বিনেয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডার) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি, এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সৌদি আরবের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের সভাপতি মোসাবাব আবদুল্লাহ আলকাহতানির নেতৃত্বে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল সভায় অংশ নেন। ওই সময় বস্ত্র, সিরামিকস অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি তেল ও গ্যাস, ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও ওষুধ, হিমায়িত খাদ্য, পাট, পর্যটন, কৃষি এবং খাদ্য ও পানীয় প্রভৃতি খাত সৌদি আরবের প্রতিনিধি দল আগ্রহ দেখান। এছাড়া সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারার ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আলফানার এনার্জির মধ্যে একটি ‘সমঝোতা স্মারক’ সই হয়। স্বাক্ষরিত স্মারক অনুযায়ী আলফানার এনার্জি বাংলাদেশে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুত প্রকল্প স্থাপন করার ঘোষণা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আসবে বলেও আশা করছেন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সৌদি আরবের উদ্যোক্তারা যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন তাহলে তারা লাভবান হবেন। কারণ আমরা বেশির ভাগ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাই। এখানে বিনিয়োগ করে অন্য দেশে পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। সৌদি আরব চাইলে যে কোন একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আমরা সব ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করব। এদিকে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬০ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে দেশটি। বিপরীতে আমদানি করেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ আমদানি করছে জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার ও সার উৎপাদনের কাঁচামাল প্রভৃতি। এ হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৪২ কোটি ২ লাখ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসেবে গত অর্থবছরে সৌদির সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের তাগিদ রয়েছে। এ কারণে নতুন নতুন পণ্য রফতানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের একটি প্রস্তাব রয়েছে সৌদি আরবের। একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, একটি সার কারখানা, কাগজ কল, বিদ্যুত কেন্দ্র, সৌরপ্যানেল ও সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্য খাতে এ বিনিয়োগ করবেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও ভোলায় সার কারখানা করার কথা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে ডাই এ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানা করতে চায় সৌদি আরব। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এ বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে কর্ণফুলী পেপার মিলসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি নতুন কাগজ কল, বিদ্যুত কেন্দ্র ও সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ এবং কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।
×