ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবার স্বর্ণ জিতলেন ৩৫ বছর বয়সী এ ভারতীয় নারী বক্সার

অবশেষে মেরি কমের সোনালি দিন

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

অবশেষে মেরি কমের সোনালি দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাঁচবার বিশ্ব এ্যামেচার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পকে একমাত্র ভারতীয় নারী বক্সার হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরে তো ব্রোঞ্জ জিতে বিশ্বব্যাপী হৈচৈ ফেলে দেন। ভারতের মনিপুরী উপজাতি মেরি কম তাই বক্সিং বিশ্বে নাম পেয়ে যান ‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’। কিন্তু কমনওয়েলথ গেমসে সাফল্য আসেনি। মাঝে দীর্ঘ বিরতি নিয়েছেন সন্তানের মা হওয়ার জন্য। আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে অবশেষে কাক্সিক্ষত সাফল্যটা পেলেন। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বক্সিং স্বর্ণ জিতলেন এবারের কমনওয়েলথ গেমসে। তাও আবার ৩৫ বছর বয়সে। গোল্ড কোস্টে মহিলাদের লাইট ফ্লাইওয়েট ইভেন্টের ফাইনালে তিনি হারিযেছেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিস্টিনা ও’হারাকে। ফাইনালে অবশ্য কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ক্রিস্টিনার সঙ্গে কমের। পয়েন্টে ফয়সালা হয়েছে চ্যাম্পিয়নশিপ। শেষ পর্যন্ত স্বর্ণ নিজের পক্ষে আসার পর কম কোচের কাঁধে মাথা রেখে অশ্রুসজল কম বিজয় উৎসবের প্যারেডে যোগ দেন। এটাই তার কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সে কারণেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ৩৫ বছর বয়সী ভারতের এ কিংবদন্তি নারী বক্সার। ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই পেয়েছেন। ৫ বার শিরোপা জিতেছেন বিশ্ব এ্যামেচার বক্সিংয়ে। লন্ডন অলিম্পিকে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ। ২০১৪ সালে তাকে নিয়েই ভারতে একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ডও পাননি অংশ নেয়ার জন্য। কিন্তু দমে যাননি তিন সন্তানের জননী কম। এবার কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ জিতে নিজেকে ভালভাবেই প্রমাণ করলেন। এখন পরবর্তী অলিম্পিকের দিকে মনোযোগী তিনি। তবে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক আসতে এখনও ২ বছর বাকি। এ সময়ের মধ্যে নিজেকে ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেটাও একটি প্রশ্ন। এ বিষয়ে কম বলেন, ‘এটা বলা কঠিন, কিন্তু আমি চেষ্টা করব।’ অলিম্পিকে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে সেখানে কোন লাইট ফ্লাইওয়েট ক্যাটাগরি নেই। এ কারণে তাকে ফ্লাইওয়েট ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। অর্থাৎ আরও শক্ত প্রতিপক্ষ ও বড় লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার প্রয়োজন হবে। এ কারণেই কম বললেন, ‘আমি যদি আরও একটা বছর এ রকম দুর্দান্ত ফিটনেস ধরে রাখতে পারি তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করব অংশ নেয়ার। কিন্তু যদি পর্যাপ্ত ফিটনেস না থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো অবসরই নিয়ে নেব।’ ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি হতদরিদ্র একটি গ্রাম থেকে উঠে আসা এক মেধা যেখানে ক্রীড়াক্ষেত্রে চরম অনগ্রসরতা রয়েছে। কিন্তু তিন পুত্রের (যমজ দুটি ১০ বছরের এবং ৫ বছরের আরেকটি) মা হয়েও এখন তিনি অন্যতম তারকা ও সেলিব্রেটি। কিন্তু তার বাচ্চারা কেউ বক্সিং ভক্ত নয়। সর্বকনিষ্ঠ ছেলের জন্ম দেয়ার পর আবার বক্সিংয়ে ফিরে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কম বলেন, ‘খুব কঠিন কাজ ফিরে আসাটা। কিন্তু আমার স্বামী ও বাবা-মা খুবই সমর্থন দিয়ে গেছে। তবে এরপরও নিজে যদি শক্ত না থাকতাম ফিরে আসা সম্ভব ছিল না।’ কারণ ভারতে মেয়েদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। কিন্তু কম বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিক দৃঢ়তাই পারে সবকিছু জয় করতে। বিশেষ করে পরিবারকে ছেড়ে, খুব ছোট ছোট বাচ্চাদের ছেড়ে এমনটা করতে আসার জন্য শক্ত মনমানসিকতার নারী হতে হবে।’
×