মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগকেই (বিসিএল) এখন প্রাধান্য দিচ্ছেন মুমিনুল হক। চলমান এ লীগ ছাড়া অন্য কোন কিছু নিয়ে ভাবতে নারাজ। জুনের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই বিসিএলের পর জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য আর কোন দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ নাও থাকতে পারে। তাই সবার একটিই প্রশ্ন, তাহলে কী বিসিএলকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রস্তুতি হিসেবে ধরা হচ্ছে? মুমিনুল সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘আপাতত বিসিএল নিয়েই ভাবছি।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘বিসিএল শেষ হলে হয়তো ওইটা নিয়ে চিন্তা করব।’
বিসিএলের তিন রাউন্ড পর্যন্ত মুমিনুল হকই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রথম রাউন্ডেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান। চতুর্থ রাউন্ডে গিয়ে তুষার ইমরান (৫৫৮ রান) দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে মুমিনুলের স্থান দখল করে নেন। লিটন কুমার দাস (৪২৭ রান) সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন। পূর্বাঞ্চলের মুমিনুল (৩৮২ রান) তিন নম্বরে চলে যান। ওমরাহ হজ করতে গিয়ে চতুর্থ রাউন্ডই খেলা হয়নি মুমিনুলের। মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া পঞ্চম রাউন্ডে খেলবেন। মুমিনুলের মাথায় সেরা রান সংগ্রাহক হওয়া নয়, দলকে চ্যাম্পিয়ন করানোর চিন্তাই কাজ করছে। পূর্বাঞ্চল যে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। অন্য তিন দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মুমিনুল তাই পূর্বাঞ্চলকে শিরোপা এনে দিতে চান, ‘না, এই জিনিসটা আমার মাথায় থাকবে না। আপনি যখনই সর্বোচ্চ রান করার চেষ্টা করবেন, চিন্তা করবেন, তার মানে হলো আপনি নিজের জন্য চিন্তা করছেন। এভাবে আগে চিন্তা করতাম, সেটা ভুল ছিল, এখন বুঝি। সুতরাং আমি ওভাবে চিন্তা করে খেলব না। দলকে চ্যাম্পিয়ন করানোর চেষ্টা করব। একটা দল যখন চ্যাম্পিয়ন হবে, তখন দেখবেন যে তালিকায় তাদের ব্যাটসম্যানরাই ওপরে থাকবে।’
আরও দুটি ম্যাচ আছে বিসিএলে, নিশ্চয়ই বড় কিছু করতে চান, কী বলবেন এ বিষয়ে? মুমিনুল এবার বড় কিছু করার কথাই বললেন, ‘একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তো সবসময় ইচ্ছে থাকে কোন আসরে বড় বড় স্কোর করার। অনেক বেশি রান করার ইচ্ছে আমারও আছে। সেই চেষ্টাও করব। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, দল হিসেবে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব ভাল সম্ভাবনা আছে। দেখা যাক কি হয়।’ ওয়েস্ট উইন্ডিজ সফরের আগে এই দুইটা ম্যাচই সম্ভবত দীর্ঘ পরিসরে ম্যাচ অনুশীলনের শেষ সুযোগ। অনুশীলনটা কিভাবে শেষ করতে চান? মুমিনুল জানান, ‘আপনি যেটা বললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার আগে এটাই হয়তো শেষ চারদিনের ম্যাচ। এরপর খেললেও খেলতে পারি, জানি না। ওই মানসিকতা নিয়েই খেলার চেষ্টা করব, যেভাবে টেস্ট খেলি।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশন তো কঠিন, সেখানে উইকেট বাউন্সি হয়, অনুশীলনে সেই বিষয়টা কী মাথায় রাখছেন? বিসিবির একাডেমি মাঠে রবিবার মুমিনুল জানান, ‘কন্ডিশনের ব্যাপারটা হলো, আপনি যদি কঠিন মনে করেন, তাহলে কঠিন। আমার কাছে মনে হয়, আমরা প্রস্তুতি নিয়ে নিব ইনশাল্লাহ। আশাকরি ভাল কিছু হবে।’
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য বিসিএল খেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মুমিনুল গুরুত্ব দেখছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে, জাতীয় লীগ বলেন, বিসিএল বা যাই বলেন, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য সবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার তো শুধু টেস্ট খেলা হয়, সুতরাং আমি খুব মন দিয়ে খেলি।’
পরের দুই রাউন্ডের খেলা একটু বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে। জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার খেলবেন। তাছাড়া উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ম্যাচটি হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। মুমিনুল এ নিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিশেষ করে মিরপুরে যেটা হবে, সেটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটু বেশিই থাকবে। এটা নিয়ে একটু উত্তেজনা কাজ করছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা থাকলে মনোযোগ দিয়ে খেলে। অন্যরাও ভাল করে খেলে।’
তুষার ইমরানের খেলা কিভাবে দেখেন? মুমিনুলকে প্রশ্ন করতেই জানান, ‘আমি উনার বিপক্ষে যখন খেলেছি, তখন দেখেছি, তার সফল হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে। কারণটা হলো উনি চারদিনের খেলার প্যাটার্নটা ভাল বোঝেন। কখন আক্রমণ করবেন, কখন রক্ষণাত্মক খেলবেন তা উনি ভাল বোঝেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উনি সেশন বাই সেশন চিন্তা করে খেলেন। এ জন্য মনে হয় চারদিনের ম্যাচে তিনি খুব সফল। চারদিনের খেলার বিষয়টা উনি ধরে ফেলেছেন এ জন্য নিয়মিত রান করেন।’
স্বাভাবিকভাবেই তুষারের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনার প্রশ্ন চলে আসে। মুমিনুলকে তুষারের ফেরার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই বলে দেন, ‘এটা তো সম্পূর্ণ বোর্ডের ব্যাপার। উনি যদি আবার সুযোগ পান, তাহলে ভাল করবেন ইনশাল্লাহ, আমি সেই দোয়া করি।’
মুমিনুল ওয়ানডে নিয়ে ভাবছেন না। তবে টেস্টে যদি খুব ভাল কিছু করেন, ওয়ানডেতে ডাক পড়বে; সেই বিশ্বাস আছে মুমিনুলের, ‘এ বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। একই উত্তর দেই ওয়ানডেতে আমার খেলতেই হবে সেভাবে চিন্তা করি না। টেস্টে যদি খুব ভাল ও ব্যতিক্রমী পারফর্ম করি, তাহলে এমনিতেই ওয়ানডেতে সুযোগ পাব।’
