ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া ডিগ্রীধারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

ভুয়া ডিগ্রীধারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহারকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্কবার্তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)সহ কয়েকটি সংস্থার অভিযান কার্যক্রমও চলে সীমিত পরিসরে। তাদের পক্ষেও অলিগলিতে বসে থাকা মোট ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহারকারী চিকিৎসকের দশভাগের কাছে পৌঁছা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের কেউ কেউ নিজেকে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ লেখা দেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। শুধু তাই নয়, আইন অমান্য করে কোন কোন চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্ত না হয়েও অনেকে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি’র দেয়া এমন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি অমান্য করার প্রতিযোগিতা। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীরা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক রোগী। রোগী ও তাদের স্বজনেরা পড়ছেন আর্থিক ক্ষতিতে। বিএমডিসি আইনের কিছু অংশ উল্লেখ করে চিকিৎসকদের বারবার সতর্ক করে দেয় বিএমডিসি। বিএমডিসি’র সতর্কীকরণ বার্তায় বলা হয়, স্বীকৃত ডিগ্রীপ্রাপ্ত অনেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ব্যতীত চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করছেন। কোন কোন নিবন্ধিত চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে, পিজিটি, এফসিপিএস(পার্ট-১,২), এমডি(ইন কোর্স, পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব), এম,এস(পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব, সিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা কোন স্বীকৃতি অতিরিক্ত চিকিৎসা যোগ্যতা নয়। তাছাড়া স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, গাইনী বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবার কোন কোন চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ। নিবন্ধিত চিকিৎসকদের উপরোল্লিখিত আইন পরিপন্থী কাজ হতে বিরত থেকে যথাযথাভাবে অনুসরণকরত চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করার জন্য জানানো যাচ্ছে। ২২(১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ব্যতীত এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোন আইনে যা, কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমত, ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই ধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদ- অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-নীয় হবেন। ২৯(১) ধারা অনুযায়ী ভুয়া পদবি, ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করতে পারে। যদি না তা কোন স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা-শিক্ষাগত যোগ্যতা বা স্বীকৃতি ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। কোন ব্যক্তি এই উপধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদ- বা ১ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-নীয় হবেন এবং উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ের অতিরিক্ত হিসাবে দ-নীয় হবেন। এদিকে, দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি আইনের লঙ্ঘন। স্বীকৃত চিকিৎসা থেকে ডাক্তার হয়েও অনেকে ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রী লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এ ধরনের চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য। রোগীদের ভাল-মন্দ বিবেচনায় রাখেন না তারা। মহান পেশা চিকিৎসাসেবা তাদের কাছে হয়ে উঠে ‘রোগী মেরে টাকা উপার্জনের সেন্টার’। স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি অস্বীকৃত কোয়াক চিকিৎসকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। দেশে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ‘কোয়াক চিকিৎসক’। এ ধরনের চিকিৎসকদের থাকে না কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতা। কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যায়। এতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারী অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের চিকিৎসকেরা প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্সের মধ্যেও পড়ে না বলে জানিয়েছেন এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মহাসচিব ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী। বেসরকারী চিকিৎসা সেবা আইন না থাকায় কোয়াক চিকিৎসকেরা নিজেদের বিভিন্নভাবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের চিকিৎসকেরা প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্সের মধ্যেও পড়ে না। তবে তাদের অনেকে কাজ করতে করতে চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর ভাল অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। এ ধরনের চিকিৎসকদের একটি শ্র্রেণীতে ফেলে দিয়ে তাদের কার্য পরিধি নির্ধারিত করে দেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এর সভাপতি, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদী-ই-মাহবুব।
×