ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ছাড়া কোন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না ॥ খন্দকার মোশাররফ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

বিএনপি ছাড়া কোন অংশগ্রহণমূলক  নির্বাচন হবে না ॥ খন্দকার মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বিএনপি ছাড়া এদেশে কোন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া সেটা হতে পারে না। তাই খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। রবিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রাখার প্রতিবাদে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি। রাজশাহী নগরীর ভুবন মোহন পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলের সমাবেশ এই ছোট জায়গায় করা সম্ভব নয়। আপনারা ছোট জায়গা দিয়ে আমাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরো রাজশাহী আজ সমাবেশে পরিণত হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়া, ২০ দল ও বিএনপি নেতাদের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় সরকার। কারণ তারা জনগণকে ভয় পায়। তারা ক্ষমতায় এসে শেয়ার বাজার লুট করে মানুষকে পথে বসিয়েছে। আজকে ১০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকায় মোটা চাল কিনতে হচ্ছে। ড. মোশাররফ বলেন, জনগণের ওপরে শেখ হাসিনার কোন আস্থা ও বিশ্বাস নেই। তাই সমাবেশে হাত উঁচিয়ে তিনি নৌকায় ভোট চান। গণতন্ত্রের মুক্তি মানেই খালেদা জিয়ার মুক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। আজকে যদি নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে জনগণ আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। সেজন্য শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, জনগণকে ভয় পায়। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া সেটা কি হতে পারে না। খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করেই তার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। আগামীতে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কেউ জানতাম না, হঠাৎ করে একটা আন্দোলন হলো। আগামী দিনে গণতন্ত্রের আন্দোলন, জনগণের অধিকারের আন্দোলনও সেরকম হবে। জনগণ যখন রাস্তায় নামবে তখন তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। সেই আন্দোলনে রাজশাহীবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, দেশের জনগণ জানে, সরকারও জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। আর বিএনপির জনপ্রিয়তা টের পেয়ে সরকার দলের নেতাকর্মীদের সারাদেশে কোন নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে দিচ্ছে না। বিএনপিকে প্রশাসন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশের সর্বত্রই বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বন্দী রাখা হচ্ছে। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, মিজানুর রহমান মিনু ও সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, কর্নেল (অব) এম এ লতিফ, যুগ্ম-মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু প্রমুখ। এর আগে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, সরকারের লোকেরা কোটি টাকা লুট করে ছোট্ট ছোট্ট বিনিয়োগকারীদের সর্বস্ব নিয়ে গেছে। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এ সরকারের আমলে ব্যাংক লুট হচ্ছে অভিনব কায়দায়। দেশের জনগণ এসব কিছু দেখছে। তারা সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। জুলুমবাজ সরকারকে কঠোর জবাব দেবে তারা- শুধু মুখিয়ে আছেন। তিনি আরও বলেন, দেশে খোলাখুলি দুর্নীতি হচ্ছে। কোন রাখঢাক নেই। যে যেখানে যেমন করে পারছে দুর্নীতি করে , লুট করে হাতিয়ে নিচ্ছে দেশের সম্পদ। জনগণের সম্পদ। এর জবাব একদিন তাদের পেতেই হবে। কাউকে বিচার ছাড়া যেতে দেয়া হবে না। সরকারের জনপ্রিয়তা যে একটুও নেই সেটা কিন্তু প্রমাণ হয়েছে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনে। তেমনি আন্দোলনের জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস সমাবেশে বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে সেসব মামলা ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দীনের আমলের। একই সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু এ সরকার শেখ হাসিনার মামলাগুলো তুলে নিলেও খালেদা জিয়ার মামলাগুলো রেখে দিয়েছে শুধু হয়রানি করার জন্যই। জনগণ এসব ঠিকই বুঝে। তারা একদিন সুদে-আসলে এর হিসাব কড়ায় গ-ায় আদায় করে ছাড়বে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় সমাবেশে বলেন, বিএনপি এরশাদের বুটের তলা থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছিল। সেই বিএনপি এবার শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দীন খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে পারেনি। শেখ হাসিনাও আটকে রাখতে পারবে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন। ড. মঈন খান সমাবেশে বলেন, দেশে এখন একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা চলছে। একদিন বাকশালের পতন হয়েছিল। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার বাকশালের পতন ঘটানো হবে। বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, পাতানো নির্বাচনের ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। সরকার কৌশল করে বিএনপিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এবার তারা প্রহসনের নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ করেছে। জনগণ এসব মানবে না। তারা রাজপথে নেমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই ছাড়বে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্রে বাঁধ দিলে যেমন টেকে না, তেমনি বেগম জিয়াকে কারাগারেও রাখা যাবে না বেশিদিন। বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজন হলে কারাগার ভেঙ্গে বিএনপি নেত্রীকে মুক্ত করবেন।
×