বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব গেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে রবিবার বিকেল চারটা ৩৫ মিনিটে সৌদি আরবের দাম্মামের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক এবং উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি দাম্মাম কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান সৌদি আরবে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্ এবং সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে শেরাটন দাম্মাম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আজ সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর একটায় সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় আল জুবাইল প্রদেশে অনুষ্ঠেয় ‘গাল্ফ শিল্ড-১ নামের একটি যৌথ সামরিক মহড়ার কুচকাওয়াজ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি সৌদি বাদশাহ ও দুটি পবিত্র মসজিদের হেফাজতকারী সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। সৌদি আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে ২৩ বন্ধুপ্রতীম দেশের অংশগ্রহণে মাসব্যাপী এই সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। গত ১৮ মার্চ শুরু হওয়া এই মহড়ায় বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে।
গাল্ফ শিল্ড-১ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে (সিএইচওজিএম) যোগদানের জন্য সৌদি সময় আজ বিকাল পাঁচটায় একটি বিশেষ ফ্লাইটযোগে লন্ডনের উদ্দেশে দাম্মাম কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। রাতেই লন্ডনের হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটির অবতরণের কথা। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বর্তমান চিত্রটি অন্য সদস্যগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সামনে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ বছর সিএইচওজিএমের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অভিন্ন ভবিষ্যত অভিগামী।’ প্রধানমন্ত্রী ১৭ এপ্রিল সকালে ওয়েস্ট মিনিস্টারের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ নারী ফোরামের ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার : মেকিং ইকুইটেবল এ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন এ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস এক্রোস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী বিকেলে যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বৈদেশিক উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (ওডিআই) আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তিনি ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি : নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
১৮ এপ্রিল শেখ হাসিনা এশীয় নেতাদের ‘ক্যান এশিয়া কীপ গ্রোইং’ রাউন্ডটেবিলে অংশ নেবেন। বিকেলে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান ও পরে নৈশভোজে যোগ দেবেন। ১৯ এপ্রিল শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকের (সিএইচওজিএম) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসির দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি সরকার প্রধান ও তাদের স্বামী/স্ত্রীদের সম্মানে বাকিংহাম প্যালেসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেয়া সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগদান করবেন।
২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তিনটি ‘রিট্রিট সেশন’ ও শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী কার্যনির্বাহী অধিবেশনে অংশ নেবেন। ২১ এপ্রিল তিনি রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি (আরসিএস) আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকার প্রধানদের জন্য সংবর্ধনা এবং রানীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী এক কমিউনিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এছাড়া শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২৩ এপ্রিল সকাল সোয়া নয়টায় দেশে ফিরবেন।
