ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ মামলার তদন্তে তথ্য পেয়েছে পুলিশ

কোটা আন্দোলন খালেদার মুক্তির দাবিতে রূপ দিতে চেয়েছিল বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

কোটা আন্দোলন খালেদার মুক্তির দাবিতে রূপ  দিতে চেয়েছিল বিএনপি

শংকর কুমার দে ॥ কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনে পরিণত করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পরিণত করার ছক কষেছিল বিএনপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালানো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মৃত্যু, রগকাটা, লন্ডন থেকে ঢাকায় টেলিফোনের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশে যে সহিংসতা সৃষ্টি করার অভিযোগে দায়ের করা পাঁচটি মামলার তদন্ত করতে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে পুলিশের দাবি। শাহবাগ থানা ও রমনা থানায় দায়ের করা পাঁচটি মামলার তদন্ত করছে পুলিশ, পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বিএনপির নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য সেই রাতে ভিসির বাসভবনে হামলার জন্য ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নিজেরা ছিল মুখোশ পরিহিত অবস্থায়। এ ছাড়া ভাড়াটিয়া পেশাদার সন্ত্রাসীদের এনেছিল এই দুটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এসব ঘটনার কোন কিছুই আঁচ করতে পারেনটি কোটার দাবিতে আন্দোলনরত মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। তাদের আন্দোলন বেগবান করতে লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। কোটা আন্দোলনকে আরও সংগঠিত (অর্গানাইজড) করতে টেলিফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে নির্দেশ দেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুনকে। অধ্যাপক মামুন নিজেও তারেক রহমানের সঙ্গে কথোপকথনের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তার আগেই বিএনপির নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন তারেক রহমান। টেলিফোনের কথোপকথনের অডিও টেপটি এখন পরীক্ষা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে হামলার জন্য শাহবাগ থানায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এসএম কামরুল আহসান। অপর তিনটি মামলার বাদী পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি ও শাহবাগ থানার পুলিশ। ভিসির বাসায় হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম কাজ করছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৮ এপ্রিল রাত একটা থেকে দেড়টার মধ্যে ভিসির বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা মূল গেট ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে পড়ে ব্যাপক ভাংচুর এবং কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। মামলাগুলোর আনুষ্ঠানিক তদন্ত করছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। কোট সংস্কার আন্দোলনের সময় মৃত্যু ও রগ কাটার মতো উস্কানিমূলক মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রচার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যারা সহিংস করে তুলেছে তাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। জানা গেছে, পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রাথমিকভাবে দু’শ’টির মতো এ্যাকাউন্টকে সন্দেহ করে তা শর্টলিস্টে এনে প্রায় এখন দাঁড়িয়েছে ত্রিশটি এ্যাকাউন্টে। এখন এ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করে উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারকারী ও গুজব রটনাকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক ও টুইটারে ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্ট এবং কিছু অনলাইন পোর্টাল রয়েছে বলে জানা গেছে। গত বুধবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পক্ষ থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে (আইসিটি) রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে কোন আসামির নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এর সঙ্গে বিভিন্ন ফেসবুক আইডির নাম এবং পোস্টও যুক্ত করা হয়েছে। ছাত্রী মোর্শেদার রগ কাটার অভিযোগে এশা নামের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল তা প্রত্যাহর করা হয়েছে। কারণ, ছাত্রী এশার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়েছিল। অনুরূপভাবে আন্দোলনের সময় এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে যে গুজব ছড়ানো হয় তাও মিথ্যা প্রমাণিত। আইসিটি এ্যাক্টে গত বুধবার রাতে যে মামলাটি দায়ের করা হয় তাতে কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরগরম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুজব ছড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের রাজপথের আন্দোলনে নেমে আসতে উস্কানি দেয়া হয়েছে। রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি ফেসবুকেও সরব থেকে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ায়। বিশেষ করে আন্দোলনের মধ্যেই ফেসবুকে আবু বকর নামে একজনের মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়, হলে বিদ্যুত লাইন বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের মরধর করা হচ্ছে গুজবটি রটানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রীকে মারধর ও তার পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে। এর পর ওই রাতে হঠাৎ ফেসবুকে একটি রক্তাক্ত পায়ের ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়। বাস্তবে ফেসবুকের এসব তথ্যের কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে ফেসবুকের এসব গুজব আন্দোলনকারীদের ওপর কখনও কখনও প্রভাব ফেলে এবং আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কোটা আন্দোলনে উস্কানিমূলক অপপ্রচারের অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৩ মে দিন ধার্য করেছে আদালত। সূত্র জানায়, কয়েকটি ফেসবুক আইডি, পেজ ও গ্রুপ, ইউটিউব, টুইটার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ, ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা এও বলেছেন, ‘বাইরের সন্ত্রাসীরা’ এই হামলা চালিয়েছে।
×