ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা বলছে মিয়ানমারের নিয়োজিত গুপ্তচর

৭ লক্ষাধিক আশ্রিতের মধ্য থেকে প্রত্যাবাসিত হলো মাত্র একটি পরিবার!

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

৭ লক্ষাধিক আশ্রিতের মধ্য থেকে প্রত্যাবাসিত হলো মাত্র একটি পরিবার!

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে আসা সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্য থেকে প্রত্যাবাসিত হয়েছে মাত্র একটি পরিবার। সে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। মিয়ানমার সরকারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এই খবর জানিয়ে দাবি করা হয়েছে যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়েছে। আর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলছে, ফিরিয়ে নেয়া পরিবারটি তাদেরই গুপ্তচর। কারণ কথিত এই প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়নি। এদিকে, মাত্র এক পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টিকে হাস্যকর হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সুন্দর সমঝোতার মাধ্যমে সকল রোহিঙ্গাই ফিরে যাবে এমন আশাবাদও রয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মিয়ানমার সরকারের অফিসিয়াল পেজে বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ১৪ এপ্রিল শনিবার সকালে রাখাইন প্রদেশের তাওংপিওলেতুই শহরের প্রত্যাবাসন শিবিরে ফিরে এসেছে একটি পরিবার। এ খবরের সঙ্গে পরিবারের কর্তা আকতার আলম, দুই নারী, এক কিশোরী এবং একটি ছোট ছেলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ গ্রহণের ছবিও পোস্ট করা হয়। জানানো হয় যে, এরা মংডু শহরে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নেতারা মাত্র একটি পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টিকে এক ধরনের তামাশা হিসেবে দেখছে। তারা বলছেন, পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের যে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে তা সেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য। তাদের কোন ধরনের নাগরিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। অথচ, রাখাইনের নিজ ভিটেবাড়িতে নাগরিক হিসেবে বসবাসের পূর্ণ অধিকার রোহিঙ্গাদের রয়েছে। ওই একটি পরিবার কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন উদ্দেশে ফিরে গেল তা বোধগম্য নয়। এটিকে সকল রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখতে রাজি নন তারা। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে মাত্র একটি পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি যেমন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনিভাবে কেউ কেউ এটিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের ইচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবেও দেখতে চান। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মাত্র একটি পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন। তবে সকল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসিত হবে, এমন আশাবাদও রযেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রীর। জাতিসংঘ এর মধ্যেই সতর্ক করে বলেছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার গত জানুয়ারি মাসে শুরু করেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শুরুর তারিখ নির্ধারিত হলেও দফায় দফায় সে সময় পিছিয়েছে। এর জন্য মিয়ানমার সরকার দায়ী করেছে বাংলাদেশকে। প্রথমে বলেছিল বাংলাদেশই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে রাজি নয়। কারণ, এ রোহিঙ্গার কারণে আন্তর্জাতিক নানা সহায়তা আসছে। মিয়ানমার যে কোন সময় রোহিঙ্গা গ্রহণে প্রস্তুত হলেও বাংলাদেশই বিলম্ব করছে বলে অভিযোগ সে দেশের সরকারের। এ ধরনের বক্তব্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পর মিয়ানমার সরকার আগের মতোই জানায় যে, সকল রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৮০৩২ জনের নাম পাঠালেও মিয়ানমার সরকার মাত্র ৩৭৪ জনকে সে দেশের বাসিন্দা হিসেবে স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এ পরিবারগুলোকে ফিরিয়ে নেয়ার তৎপরতাও লক্ষণীয় নয়। সর্বশেষ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন সে দেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আবারও তিনি জানান যে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক। সে আন্তরিকতা প্রকাশের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ফিরে গেল মাত্র একটি পরিবার। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে এখনও অবস্থান করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। এদের যাচাই বাছাইয়ের কোন প্রয়োজন নেই। অথচ, মিয়ানমার সরকার এক্ষেত্রেও গড়িমসি এবং টালবাহানা করে চলেছে। আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ এবং বাইরের চাপ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলায় মিয়ানমার সরকার নমনীয় হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের গতি লক্ষণীয় নয়। বরং ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা কমে গেলে তারাও নতুন করে নেতিবাচক কারণ উপস্থাপন করে।
×