ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাঁটাতারের বেড়া বিভক্ত করতে পারেনি দুই দেশকে

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

 কাঁটাতারের বেড়া বিভক্ত করতে পারেনি  দুই দেশকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৫ এপ্রিল ॥ কাঁটাতারের বেড়া দু’দেশকে বিভক্ত করলেও রক্তের বাঁধন ছিন্ন করতে পারেনি। তাই তো বাংলাদেশ ও ভারতে বসবাসরত আত্মীয় পরিজনদের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি অব্যাহত রাখতে ঠাকুরগাঁওয়ের আটটি সীমান্তে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিজিবি ও বিএসএফের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হলো দু’বাংলার মিলন মেলা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রবিবার হাজারো মানুষ প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে একনজর দেখা করতে ছুটে আসেন ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার হরিপুর থেকে রানীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তে। জেলার হরিপুর, কান্দাইল, বেতনা, কাঠালডাঙ্গী, ডাবরী, বুজরুক, ধর্মগড় ও জগদল সীমান্তের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুই বাংলার লাখো মানুষের উপস্থিতিতে পরিণত হয় মিলন মেলা। হাজারো মানুষ তাদের নিকট আত্মীয়দের দেখা করার জন্য পরিবারের সন্তান সন্ততি নিয়ে সীমান্তে হাজির হয়। কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ তাদের টেনে আনে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছাকাছি। এতে সহযোগিতা করেন বিজিবি ও বিএসএফ। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে মানুষজন ছুটে আসেন এখানে। ঠাকুরগাঁও সীমান্তের ৮টি বিওপি এলাকাজুড়ে দু’দেশের বাংলাভাষী লোকজন ছুটে আসেন তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে। রবিবার সকাল ১০টায় বিজিবি ও বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া বরাবর এলাকায় আগত লোকজন যাওয়ার অনুমতি দেয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ঠাকুরগাঁও-৫০ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ হোসেন জানান, ১৯৭৪ সালের পর এ এলাকাগুলো পাক ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয়স্বজনরা দু’দেশে ছড়িয়ে পড়েন। তাই সারা বছর কেউ কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করতে পারেন না। অপেক্ষায় থাকেন এ দিনটির। পঞ্চগড়ে দুই বাংলার মিলন মেলা স্টাফ রিপোর্টার পঞ্চগড় থেকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুই বাংলার মিলন মেলা। প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে এক পলক দেখা করতে সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে লাখো মানুষের ঢল নামে। মুহূর্তে ওই সীমান্ত দুই বাংলার মিলন মেলায় পরিণত হয়। তবে স্থানীয়দের দাবি পঞ্চগড়ের সীমান্তে একটি সীমান্ত হাট স্থাপনের। প্রতিবছর বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন জেলা সদরের অমরখানা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে দুই বাংলার মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে নববর্ষের দ্বিতীয় দিন পঞ্চগড়ের অমরখানা, মাগুরমারী, শুকানি ও ভূতিপুকুর সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার সকাল থেকেই পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন প্রান্তের নারী-পুরুষ ওপারের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে এসে জড়ো হয়। সকাল ১০টায় বিজিবি ও বিএসএফ দুই বাংলার মানুষদের সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়েই প্রিয় স্বজনদের এক পলক দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। পুরো সীমান্তে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় কেউ স্বজনদের হাত ছুঁয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন আবার কেউ স্বজনদের জন্য আনা উপহার সামগ্রী বিনিময় করে। এবার কেউ কেউ নববর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় স্বজনদের ইলিশ মাছ উপহার দেয়। আত্মীয় স্বজন না থাকলেও মিলন মেলার মহোৎসব দেখতে আসে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাও।
×