ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধু ধান’

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

 ‘বঙ্গবন্ধু ধান’

এই এক নতুন ধরনের ধান। কিন্তু জাতপাত এখনও জানা যায়নি। চেনার কথা যাদের তাদের কাছেও নেই তথ্য-উপাত্ত। বরং এ ধান তারা এই প্রথম দেখেছেন। চাইছেন গবেষণার মাধ্যমে ধানটির বংশলতিকা জানতে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এ ধানগাছ দেখে বিস্মিত হয়েছেন বৈকি। পাতার রং বেগুনি বলেই অবাক হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তারা। ধানের পাতার এমন রং কখনও হয়নি দেখা তাদের। এ ধানের ভেতর দিয়ে হয়ত খুঁজে পাবেন তারা নতুন স্বপ্নের বোনা বীজ। ধান বাংলাদেশের জনগণের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই ধানের বিভিন্ন নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বি) অসম্ভব সব কাজ করছে। বোরো ধানের প্রায় ২৭টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ কারণে বিশ্বের ধান উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। কিন্তু বেগুনি পাতার এই ধান তাদের উদ্ভাবিত নয়। উদ্ভাবক একজন সচেতন কৃষক। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায় ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের পতাকা যেন। চারপাশের জমিতে সবুজ ধানের সমারোহ, মাঝখানে একচিলতে জমিতে বেগুনি রঙের নাম না জানা জাতের বেড়ে ওঠা। দৃশ্যটি বিমোহিত করবেই। মনে হতেই পারে, এ যেন একখ- বাংলাদেশ। এই অসাধ্য সাধন করেছেন কুমিল্লার কৃষক মনজুর হোসেন। আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামের ফসলের মাঠে তার জমিজুড়ে এই অভূতপূর্ব ধান চাষের মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ফসলের মাঠে জাতির পিতার নাম নেই ভেবে তিনি নিজেই এই ধানের নাম রেখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু ধান।’ অবশ্য সরকারীভাবে এই নামকরণের জন্য তিনি আবেদনও জানিয়েছেন। ধানটি পেয়েছেন তিনি সুন্দরবনের এক অজানা চরে। ট্রলারযোগে যাবার সময় চরের মধ্যে ১০-১২টি ধান গাছ দেখতে পান। রং যার বেগুনি। বাঘ, বানর ও হিংস্র পশুর আক্রমণ উপেক্ষা করে ট্রলার থেকে নেমে হাঁটুপানি পেরিয়ে সেখান থেকে দুই শ’ গ্রাম ওজনের ধান সংগ্রহ করেন। পরে এ ধান রোদে শুকিয়ে বীজ হিসেবে তৈরি করেন। ধান গাছগুলো যেহেতু বেগুনি রঙের, তাই ফসলের মাঠে জাতীয় পতাকার কাছাকাছি দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার আগ্রহ থেকে নিজের দুই একর জমির মাঝখানে চার শতক জমিতে এ ধানের চারা রোপণ করেন। ওই জমির চারদিকে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ এবং পায়জম ধান বপন করেন। এখন সবুজ ধানের খেতের মাঝখানে বেগুনি রঙের পাতার ধানের অংশটুকু দূর থেকে দেখলে বড় আকারের জাতীয় পতাকার মতো দৃশ্যমান হয়। নতুন জাতের এই ধান দেখার জন্য প্রতিদিনই উৎসুক জনতার ভিড় জমে। নামহীন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কুমিল্লার এই ফসলি মাঠ থেকেই গত শতকের ষাটের দশকে খ্যাতিমান সমবায় ও কৃষি গবেষক ডক্টর আখতার হামিদ খান উচ্চফলনশীল আইআর-৮ এবং ব্রি-১ নামের নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। এই বেগুনি পাতার ধানও সমৃদ্ধ করতে পারে দেশের কৃষি খাতকে। ডক্টর খান অধিক ফলনের জন্য উন্নত জাতের ধান উৎপাদনের মাধ্যমে কুমিল্লার চেহারাই পাল্টে দিয়েছিলেন। কুমিল্লা ফসলি জমি তিনি নানা জাতের ধানের ফসলে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। কৃষির উন্নয়নে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্বনামখ্যাত ডক্টর খানের অবদান দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন কৃষক মনজুর হোসেনও। তাই ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রতি তার আগ্রহ তীব্র হয়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতক কৃষক মনজুর কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন মহলে উদ্ভাবনী কৃষক হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি পাম গাছ এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফল আর ধান চাষ করে কৃষি বিভাগসহ কৃষক মহলেও সুনাম অর্জন করেছেন। বেগুনি পাতা রঙের ধানের নাম বঙ্গবন্ধু ধান হবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত নেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন এ ধানের ফলন ও পুষ্টিমান কেমন হয় এ নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা চলছে। এই অঞ্চলের ধানের চেয়ে এটা ব্যতিক্রমী ও বেশ হৃষ্টপুষ্ট এবং অনেকটা রোগ প্রতিরোধী বলে ধারণা তাদের। এই প্রজাতিটি নিয়ে কাজ চলছে। ভাল উৎপাদন হলে কৃষকের মাঝে বীজ ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধু ধান’ বাংলাদেশের ধানের জগতে বিরল নাম এবং নতুন অবশ্যই। ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরায় নতুন জাতের বঙ্গবন্ধু ধান নতুনতর স্বাদ যোগাবে, পুষ্টি বাড়াবে এবং অধিক ফলন হবেÑ এমন প্রত্যাশা আমাদেরও।
×