ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়’

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

 ‘কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়’

প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সুফল কতজন পাচ্ছে এটা টেকসই উন্নয়নের জন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। প্রবৃদ্ধির পুরোটাই যদি উচ্চবিত্তের হাতে চলে যায় তাহলে এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেই কৃষক ও শ্রমিকরা অত্যধিক হতাশ হবে। আয় বৈষম্য কেবল ভোগ ও সম্পদের বৈষম্যই তৈরি করে না, সুযোগ এবং ক্ষমতার বৈষম্যও তৈরি করে। ধনবানরাই ক্ষমতাবান। রাষ্ট্রে ও সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা শুধু তাদের জন্য। আয়ের এই সীমাহীন অসমতা সামাজিক বিভাজন তৈরি করে। জন্ম দেয় সামাজিক অসন্তোষ। স্থানান্তরিত ক্রোধের (ট্রান্সফারড এ্যাগ্রেশন) শিকার হয় সমাজের বৈষম্যের জন্য দায়ী নয় এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আলজিরীয় বিপ্লবী ও তাত্ত্বিক ফ্রাঞ্জফ্যানো তাঁর ১৯৫২ সালে প্রকাশিত ‘ব্লাকস্কিন, হোয়াইটমাস্ক’ বইয়ে দেখিয়েছিলেন ‘দীর্ঘ বঞ্চনা, অবদমন, অপমান, নির্যাতনের মধ্যে থাকলে সমাজে হিংসা বেড়ে যায়। যখন বঞ্চিত ব্যক্তিরা মূল কারণে হাত দিতে পারে না বা খুঁজে পায় না তখন সে চার পাশের ওপর আক্রোশবোধ করে।’ আমাদের দেশে কারণে-অকারণে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর স্থানান্তরিত ক্রোধের একটি বাস্তব উদাহরণ। রাজনৈতিক সহিংসতারও একটি ব্যাকরণ আছে। জার্মান রাজনৈতিক তাত্ত্বিক হানাহ্ আরেন্ড ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ‘অন ভায়োলেন্স’ বইয়ে রাজনৈতিক সহিংসতার পক্ষে যে সকল যুক্তি তুলে ধরেছেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল চরম অন্যায় আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় কোন পথচারীর মৃত্যু হলে তার দায়-দায়িত্ব নিরূপণ না করে দুর্ঘটনার জন্য কথিত গাড়িটিসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙ্গার জন্য সবাই যখন উৎসবমুখরভাবে তৎপর হয় তখন বুঝতে হবে এগুলো স্থানান্তরিত ক্রোধেরই বহির্প্রকাশ। আয়ে-উন্নয়নে সকলের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন হচ্ছে নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আমাদের উন্নয়নে পোশাক শিল্প, কৃষি ও প্রবাসী শ্রমিক তথা গরিব মানুষের অবদানই সবচেয়ে বেশি। এই উন্নয়নের ভাগ সবাইকে দিতে হবে। ‘বণ্টনের’ বিষয়টিকে গুরুত্ববহ করে তুলতে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের মূল ‘থিম’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল আমাদের জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’কে। কাঁঠাল পৃথিবীর বৃহত্তম ফল। কাঁঠাল অন্যকে ভাগ না দিয়ে খাওয়া যায় না। লুকিয়ে একা একা খাওয়ারও সুযোগ নেই, কাঁঠালের সুমিষ্ট গন্ধ জানান দেবে কোথায় কাঁঠাল খাওয়া হচ্ছে। কাঁঠালের অবশিষ্টাংশ ছেড়ে দিতে হবে পশু-পাখির খাওয়ার জন্য। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে শোভাযাত্রায় কাঁঠালের পেছনে সঙ্গী হয়েছে কাঠবিড়ালী ও শিয়াল। সব কিছুতে যার যার ন্যায্য হিস্যা বণ্টনের মাধ্যমে নিশ্চিত হোক টেকসই উন্নয়ন। সবাইকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫-এর শুভেচ্ছা। লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
×