পরিসংখ্যান পুরো সত্য কথা বলে না। ১৯০৬ সালে মার্ক টোয়েন তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ‘সংখ্যা কখনও কখনও আমাকে বিভ্রান্ত করে’। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বেনজামি ডিজরেলি নাকি বলেছিলেন, ‘মিথ্যা তিন প্রকার- মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা এবং পরিসংখ্যান।’ যার কারণে পরিসংখ্যানের ঝামেলায় না গিয়েই বলতে পারি বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাড়ছে আয়-ব্যয়, আয়ু, শিক্ষা। বাড়ছে যোগাযোগ, বিদ্যুত, ভ্রমণ, উৎসব। কমছে শিশুমৃত্যু, কমছে ক্ষুধা নিয়ে খালি পায়ে খালি গায়ে থাকা। বড় হচ্ছে বাজেট, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, উঁচু হচ্ছে ভবন, বাড়ছে স্কুল, বাড়ছে ছাত্র। কিন্তু কমছে না বৈষম্য, দুর্নীতি, ধর্মান্ধতা। ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তি বলতে সকল বঞ্চনা, বৈষম্য, শোষণ, সঙ্কীর্ণতা, কূপম-ূকতা ও চেতনার দীনতা থেকে মুক্তি বুঝিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ বছরই আমরা অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা রেখেছি। তাই এ বছর বাংলা নববর্ষ বাঙালীর জীবনে ভিন্ন মাত্রায় পালিত হয়। মাথাপিছু আয় (১৭৫২ ডলার) ও প্রবৃদ্ধি (৭.৬৫%) বাড়লেও জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার দিকে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বৈষম্য। বড় লোকদের আয় বাড়ছে, গরিব মানুষের আয় একই হারে বাড়ছে না বা ক্ষেত্র বিশেষে কমছেও। অবশ্য ঘটনাটি ঘটছে বিশ^ব্যাপী। বর্তমানে বিশ্বের ৬২ জনের হাতে আছে ৩৬০ কোটি জনের সম্পদ, এটা দুই বছর পূর্বেও ছিল ৮৫ জনের হাতে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিবিএস-এর ২০১৬ সালের খানা জরিপে দেশের উপরের ৫ শতাংশ লোকের হাতে ছিল মোট আয়ের ২৭.৯%, যা ২০১০ সালে ছিল ২৪.৬%। অন্যদিকে নিচের ৫% লোকের আয় ২০১০ সালের ০.৭৮% থেকে ২০১৬ সালে ০.২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বাজার অর্থনীতিতে ‘প্রত্যেক ব্যক্তি কেবল তার নিজের লাভ খোঁজে’ (এ্যাডাম স্মিথ, ওয়েলথ অব ন্যাশন, ১৭৭৬), একই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও আয়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যও বাড়ছে। আয় যদি ন্যায্যভাবে বণ্টন না হয় তবে এ বৈষম্য আরও বাড়বে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: