ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবমুখর ‘রাজস্ব হালখাতা’

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

 উৎসবমুখর ‘রাজস্ব হালখাতা’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাঙালীর আবহমান ঐতিহ্য বৈশাখের উৎসবে অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসে চলছে রাজস্ব হালখাতা। বৈশাখ উপলক্ষে দেশের প্রতিটি কর অফিসে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ব্যতিক্রমী এ হালখাতা। করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে হাসিমুখে কর আদায় করতেই দ্বিতীয়বারের মতো এ আয়োজন করেছে এনবিআর। বিভিন্ন কর অঞ্চলের অফিসে রবিবার সকালে দাওয়াত দেয়া হয় করদাতাদের। দাওয়াত পেয়ে অনেকে এসে বকেয়া কর পরিশোধ করছেন। অনেকে এসেছেন সৌজন্য সাক্ষাত করতে। হালখাতার ঐতিহ্য অনুসারে আগতদের মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন এনবিআর। কোন কোন কর অঞ্চলে শুধু মিষ্টিমুখ নয়, দিচ্ছে বইসহ নানা পুরস্কার। সকালে ‘কর অঞ্চল-৮’ এ হালখাতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। পরে ‘কর অঞ্চল-৪’ অয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। করদাতাদের জন্য এ আয়োজন চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী সাদেক বলেন, দেশে কর দেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। কর দেয়ার প্রথমদিকে অনেকের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করলেও পরে তা থাকে না। আর এনবিআর এখন জনবান্ধব। করের আওতায় যারা এসেছেন তাদের সবাইকে কর দিতে হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরা আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছি। সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। আয়করের সঙ্গে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণ যে ভ্যাট দিচ্ছে, তা যেন ঠিকভাবে জমা হয়। তিনি বলেন, গতবছরের চেয়ে এবার আরও উৎসবমুখর পরিবেশে রাজস্ব হালখাতা পালিত হচ্ছে। আশা করছি দিনটিতে অনেক বকেয়া আদায় হবে। অনুষ্ঠানে তিনি করদাতা ও কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা জোড় করে কর আদায় করতে চাই না। ব্যবসায়ীদের বোঝাতে হবে যদি উন্নয়ন তথা দেশের অংশীজন হতে চান তাহলে কর দিতে হবে। আমরা করদাতাদের সব সুবিধা দিতে চাই। তিনি বলেন, আবহমান বাংলার অন্যতম উৎসব হচ্ছে হালখাতা। রাজস্ব হালখাতা আয়োজনের মাধ্যমে এ উৎসবের অংশীদার হতে পেরেছি। করদাতাদের কাছ থেকেও ভাল সাড়া পাচ্ছি। বর্তমানে বকেয়া করের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি বলেও জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট) এবং অন্যান্য কর অঞ্চলেও উৎসবের এমন আমেজ দেখা গেছে। হালখাতা শুরুর পর থেকে বকেয়া কর আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে প্রথম বছরের মতো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ‘রাজস্ব হালখাতা’ আয়োজন করে এনবিআর। প্রথমবারের আয়োজিত হালখাতায় আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসে সারাদেশে মোট ৫৬৬ কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায় করে সংস্থাটি। এর মধ্যে আয়কর থেকে ৩০৬ কোটি, কাস্টমস থেকে ২০৭ কোটি এবং মূসক বা ভ্যাট থেকে ৫৩ কোটি টাকা আদায় হয়। নারায়ণগঞ্জে ২ কোটি টাকা কর আদায় ॥ নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চলে ‘ওপের হাউস ডে’ পরিবেশে বৈশাখী রাজস্ব হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার দিনব্যাপী ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর এইচ আর কমপ্লেক্স ভবনের নারায়ণগঞ্জ কর কমিশনারের কার্যালয়ে ও ২২টি সার্কেল অফিসের মাধ্যমে করদাতাগণ ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা কর পরিশোধ করেন। সর্বস্তরের করদাতাগণ, আয়কর উপদেষ্টাগণ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারী, আধাসরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ রাজস্ব হালখাতা উপলক্ষে রবিবার দিনব্যাপী এই কর পরিশোধ করেন। নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চলের কর কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চল কর কমিশনারের কার্যালয়সহ ২২টি সার্কেলে রাজস্ব আহরণ করে আসছে। চলতি ২০১৭ -২০১৮ অর্থ বছরের (মার্চ-২০১৮ইং পর্যন্ত) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২শ’ ৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জের ১৭টি সার্কেলে উৎস কর ব্যতীত আদায় হয়েছে ৩০ কোটি ২ লাখ টাকা। চলতি বছর ২০১৭-২০১৮ (জুন-২০১৮ইং পর্যন্ত) নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চলের অধীনে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬শ’ কোটি টাকা। বেনাপোলে ১৫ কোটি টাকা আদায় ॥ বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে বেনাপোল কাস্টম হাউসে রবিবার সকালে শুরু হয় ‘বৈশাখী উৎসব ও রাজস্ব হালখাতা’। হালখাতায় সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায় হয়েছে। করদাতা, অংশীজন, ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। শুধু রাজস্ব আদায় নয়, ব্যবসায়ীদের আপ্যায়ন করা হয় পুলি পিঠা, মিষ্টি, মোয়া-মুড়কি, বাতাসা ও পাপর দিয়ে। ‘জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ নির্মাণে সর্বস্তরে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রচলন’ নিয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউস মিলনায়তনে রাজস্ব হালখাতার ওপর আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। ডেপুটি কমিশনার রাফিয়া সুলতানা ও সহকারী কমিশনার দীপারানি হালদারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন, বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম, ডেপুটি কমিশনার শাকিলা পারভিন প্রমুখ।
×