ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর সেই জঙ্গীবাড়ি এখনও ভুতুড়ে

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

রাজশাহীর সেই জঙ্গীবাড়ি এখনও ভুতুড়ে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মুখে জঙ্গীরা জনবহুল এলাকার ছেড়ে আস্তানা গড়ে তুলেছিল দুর্গম চরাঞ্চল কিংবা নিভৃত কোন পল্লীতে। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। রাজশাহী অঞ্চলে গড়ে তোলা এসব দুর্গম চরাঞ্চল কিংবা নিভৃত পল্লীতেও জঙ্গীদের আস্তানা খুঁজে বের করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনই একটি নিভৃত পল্লী গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে সানডেভিল অভিযানে চার জঙ্গীসহ নিহত হয় ৫ জন। গত বছরের ১১ মে ওই বাড়িতে অভিযান চালানোর পর এখন জঙ্গীদের সে আস্তানাটি ভুতুড়ে পরিবেশেই রয়েছে। অভিযানের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই বাড়িটিতে আর কেউ যায়নি। মামলার সুরাহা না হওয়ায় টিনের তৈরি বাড়িটি ওই অবস্থায় রয়েছে। এ ঘটনার ১০ মাস পরেও অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ মামলার দু’জন আসামি কারাগারে আছে এবং আরও একজনকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। এছাড়াও পরিত্যক্ত ওই বাড়িটি ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক আতাউর রহমান বলেন, ‘তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে। দু’জন আসামি এখনও কারাগারে রয়েছে। তবে আরেকজন আসামি জঙ্গী সাজ্জাদের ছেলে সোয়াব এখনও পালাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ওদিকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও বাড়িটির ওপর নজরদারি রয়েছে। পুলিশ জানায় খুব তাড়াতাড়ি এই মামলার চূড়ান্ত চার্জশিট প্রদান করা হবে। জানা গেছে, প্রায় ১০ মাস আগে (গত বছরের ১১ মে) গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুরের জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের ‘সান ডেভিল’ অভিযানে সপরিবারে নিহত হয় জঙ্গী সাজ্জাদ আলী। ঘটনার পর থেকেই জঙ্গী সাজ্জাদের সেই বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। গ্রামের লোকজন বাড়িটির আশপাশেও যান না। বাড়িটির আশপাশে গেলেই তারা আতঙ্কে ভোগেন। ফলে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে গোদাগাড়ীর জঙ্গী আস্তানাটি। ঘটনার পর মাত্র একবার বাড়িটি দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন জঙ্গী সাজ্জাদ আলীর মা মারজাহান বিবি (৮০)। তিনি বলেন, ‘ঘরের কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। আমাদের তেমন জমি-জমা নেই। ফসলের জমিটি নিয়ে সাজ্জাদ বাড়িটি করেছিল। এখন তারা নেই। বাড়িটি এখন ভেঙ্গে আবারও ফসলের জমি করতে চান তিনি। জমি করতে পারলে কিছু ফসল হবে। আমাদের উপকার হবে। কিন্তু বাড়িটি কী করা হবে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি। ফলে বাড়িটি ভাঙতে পারছি না। তাই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।’ মারজাহান বিবি আরও বলেন, ‘আমরা কোনভাবেই টের পাইনি ছেলে জঙ্গী হয়ে গেছে। আগে বুঝতে পারলে ভুলপথ থেকে ফিরিয়ে আনতাম। কিন্তু ওইদিন ১১ মে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘটনাটা জানতে পারি। তখন আর কিছুই করার ছিল না। জঙ্গী সাজ্জাদের শ্বশুর লুৎফর রহমান বলেন, জঙ্গীবাদে জড়িয়ে সাজ্জাদ ঘৃণিত কাজ করেছে। রাষ্ট্র তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে আমরাও সেটা মেনে নিয়েছি। তবে আমরা আগ থেকে কেউ টের পাইনি সাজ্জাদ সপরিবারের জঙ্গী হয়েছে। লুৎফর রহমান আরও জানান, ‘সাজ্জাদ অনেক আগ থেকেই ধার্মিক ছিল। এলাকায় ইসলামের দাওয়াত দিত। ওই বাড়িটি ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেশন ‘সান ডেভিল’ এর নেতৃত্বে থাকা রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘আমরা অপারেশন শেষে বাড়িটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে রেখে আসি। ওই বাড়ি নিয়ে পুলিশের আর কোন বিষয় জড়িত নেই। পরিবারের লোকজন চাইলেই বাড়িটি ভেঙ্গে ফসলের জমি করতে পারে।
×