ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন মেয়েদের ফুটবল শেখালো ছোটনের শিষ্যারা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

মার্কিন মেয়েদের ফুটবল শেখালো ছোটনের শিষ্যারা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবল কাকে বলে ও কত প্রকার তা প্রতিপক্ষকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে-শিখিয়ে দিল বাংলাদেশ অ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানের বারিধারার এআইএসডি ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত একটি প্রীতি ম্যাচে তারা বিশাল ব্যবধানে জয় কুড়িয়ে নেয়। প্রতিপক্ষ ছিল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা। স্কোরলাইন কত ছিল শুনলে আবার ভিরমি খাবেন না যেন। গোলাম রব্বানী ছোটনের সুযোগ্য শিষ্যরা গুনে গুনে দিয়েছে ছয় হালি গোল, মানে ২৪-০ গোলে জিতেছে তারা। প্রতিপক্ষকে নিয়ে রীতিমতো ছেলে খেলায় মেতে উঠেছিল সানজিদা-মারজিয়ারা। স্বপ্না একাই করে ৫ গোল। অল্পের জন্য ডাবল হ্যাটট্রিক করা হয়নি তার। তার গোলগুলো ছিল ৪, ১২, ১৩, ১৪ এবং ২৯ মিনিটে। রোজিনাও কম যায়নি। তারও গোল ৫টি (৩৪, ৪৪, ৪৬, ৬৭ ও ৭১ মিনিটে)। মুন্নি আক্তার করে হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল (৫৬, ৫৭, ৬১, ৬২ মিনিটে)। রাজিয়া, সানজিদা, মারজিয়া জোড়া গোল করে। আর জোছনা, নীতি, ইলা ও আসিয়া করে একটি করে গোল। ম্যাচ শেষে জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে বাংলাদেশ দলের কোচ ছোটন বলেন, ‘যেমনটি আশা করেছিলাম, মেয়েরা তেমনটিই খেলেছে। প্রতিপক্ষকে একদম দাঁড়াতেই দেয়নি।’ কিন্তু এতো অসম লড়াই হয়ে গেল। এমন দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার মানে কী? ‘আসলে এটা আমেরিকান দলের প্রস্তুতি। ওরা সামনে একটা টুর্নামেন্ট খেলবে, তাই অ-১৬ দলকে আমন্ত্রণ জানায় খেলতে। বাফুফেও রাজি হয়ে যায়। তাই আমরা ম্যাচটা ওদের মাঠে গিয়ে খেলি। এতে আমাদেরও অনুশীলন হয়ে গেল।’ ছোটনের ভাষ্য। তিনি আরও জানান, ‘এই দলের সঙ্গেই একই মাঠে ২০১০ সালে আমাদের জাতীয় বা সিনিয়র দল এ রকম আরেকটা প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল, ওই ম্যাচেও বাংলাদেশ জিতেছিল ১০-০ গোলে। অবশ্য আট বছর আগে আমাদের দল এখনকার মতো এত সুগঠিত এবং শক্তিশালী ছিল না।’ এই প্রস্তুতি ম্যাচে অ-১৬ দল খেললেও এই দলে অ-১৫ দলের সেসব মেয়েদেরও খেলানো হয়েছে যারা সবসময় সাইডবেঞ্চে বসে থাকতো এবং যারা হংকংয়ে অ-১৫ জকি ক্লাব গার্লস টুর্নামেন্টে গিয়ে কোন ম্যাচ খেলেনি, যেমন : রোজিনা। সুযোগ পেয়েই রোজিনা ৫ গোল করে নিজের সামর্থ্য ভালভাবেই প্রমাণ করেছে। নজর কেড়েছে ছোটনের। আগামী ২ থেকে ১২ মে থাইল্যান্ডে ফুটসাল খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। এ ধরনের আসরে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ। খেলা হবে ঘাসে বা টার্ফে নয়, ম্যাটে। দ্রুতগতির ম্যাচে খেলবে পাঁচজন করে ফুটবলার। ইতোমধ্যেই পল্টনের এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের ম্যাটে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে ছোটনের শিষ্যারা। অবশ্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মহিলা ফুটবল উইংয়ের স্বপ্নটা আরও বড়। তারা চায় আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। ইতোমধ্যেই ফিফা অ-১৬ মহিলা বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অংশ নিয়েছে এশিয়ার সেরা আট দল নিয়ে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর তারা ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে। তবে আপাতত সে পথে কোচ ছোটন হাঁটছেন ধাপে ধাপে। চলতি বছর তার হাতে আছে আটটি টুর্নামেন্ট। যার একটির মিশন হংকং থেকে সফলভাবে করতে পেরেছে তার শিষ্যারা। বাকিগুলো হচ্ছে : মে’তে এএফসির ফুটবল টুর্নামেন্ট (থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য), আগস্টে কনকাকাফ অ-১৫ ফুটবল (যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য), সাফ অ-১৫ এবং অ-১৮ টুর্নামেন্ট, সেপ্টেম্বরে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব, অক্টোবরে এএফসি অ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব এবং ডিসেম্বরে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। উল্লেখ্য, কোচ ছোটনের অধীনে বাংলাদেশ মহিলা দল বিগত কয়েক বছর ধরে নজরকাড়া সাফল্য পেয়ে আসছে। যেমন : এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার, সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) এবং সর্বশেষ হংকংয়ে চার জাতি অ-১৫ আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক ফুটবল আসরে (২০১৮) একবার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল। এছাড়া তার অধীনে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে একবার রৌপ্যপদক অর্জন (২০১৬), দু’বার সেমিফাইনালিস্ট (২০১০ ও ২০১৪); এসএ গেমস ফুটবলে দু’বার তাম্রপদক (২০১০ ও ২০১৬) অর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল।
×