ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈশাখে অডিও বাজারে মন্দা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

বৈশাখে অডিও বাজারে মন্দা

গৌতম পান্ডে ॥ বাঙ্গালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ পহেলা বৈশাখ। এদিন নানা আয়োজনে ব্যস্ত সময় কাটাবে গোটা জাতী। প্রতিবছর এই দিনটিকে ঘিরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানা প্রস্তুতি। কিন্তু দেশের অডিও বাজার এ প্রস্তুতি থেকে রয়েছে অনেক পিছিয়ে। প্রতি বছর এ উৎসবটিকে ঘিরে বিভিন্ন অডিও কোম্পানির আয়োজন থাকে অনেক। প্রবীন থেকে তরুণ শিল্পীরাও বাঙালির এ বড় উৎসবকে ঘিরে নিজেদের গান প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার সেই চিত্র একেবারেই আলাদা। এবার পহেলা বৈশাখকে ঘিরে নতুন গান প্রকাশের হিড়িক নেই। মূলত ব্যবসায়িক মন্দার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিভিন্ন অডিও কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা। বিশেষ করে ওয়েলকাম টিউন ও এ্যাপস থেকে আয়ের অঙ্ক ৭০ ভাগ কমে গেছে বলে দাবি তাদের। এর ফলে কেবল ইউটিউবের ওপর নির্ভর করে নতুন গান প্রকাশে তেমন একটা আগ্রহ ও সাহস পাচ্ছে না কোম্পানিগুলো। তার ওপর ক’দিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অন্যতম বড় সঙ্গীত বিষয়ক এ্যাপস ‘ইয়োন্ডার মিউজিক’। সব মিলিয়ে এসব কিছুর প্রভাব ভালভাবেই স্পষ্ট পহেলা বৈশাখের অডিও বাজারে। পহেলা বৈশাখে কিছু শিল্পীর হাতে গোনা গান কেবল প্রকাশ হয়েছে। শুধুমাত্র বৈশাখকে ঘিরে গান প্রকাশ হয়েছে খুবই কম। অনেক কোম্পানি আবার আগের করা গানগুলোর কয়েকটি প্রকাশ করেছে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে। সব মিলিয়ে পয়লা বৈশাখকে ঘিরে তেমন কোন উদ্দিপনা নেই অডিও বাজারে। হাতেগোনা যেসব শিল্পীদের গান এবার প্রকাশ হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন এসডি রুবেল, ফাহমিদা নবী, আসিফ আকবর, ইমরান, মিনার, এফ এ সুমন, কাজী শুভ, পূজা, পুতুল, লিজা, তানজীব, মিলন, অনিন্দিতা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীসহ আরো কয়েকজন ফোকশিল্পীর গান। এর মধ্যে বেশ কিছু ভিডিও কোম্পানিগুলো আগেই তৈরি করে রেখেছে। সেসব ভিডিও থেকে কয়েকটি এবার প্রকাশও হয়েছে। সব মিলিয়ে অবস্থা খুব নাজুক বলে জানিয়েছেন এমআইবি সভাপতি ও লেজারভিশনের চেয়ারম্যান একে এম আরিফুর রহমান। এখন অডিও ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত অবস্থাটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন খুব খারাপ অবস্থা। সত্যি বলতে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে অফিস চালানোটাই আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। কারণ, গান থেকে আয়ের অঙ্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন গানে খুব বেশি বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। পয়লা বৈশাখ বাঙালির একটি বড় উৎসব। এ উৎসবে আমরা নিয়মিত গান প্রকাশ করেছি বিভিন্ন শিল্পীর। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। গান আমরা প্রকাশ করছি। কিন্তু তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। সব মিলিয়ে অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা সত্যিই নাজুক। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এ অবস্থা থেকে উত্তরণের। সেলফোন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় এমআইবির হয়ে মিটিং করছি আমরা। আলোচনা করছি। আশা করছি হয়তো কোনো সমাধান বের হয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে সঙ্গীত তারকা আসিফ আকবর বলেন, আমি আমার মতো গান করে যাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি গানের অবস্থা এখন ভাল। আমি প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন গান রেকর্ড করছি। আমার নিজের কোম্পানির বাইরেও অন্য কোম্পানি থেকেও গান প্রকাশ পাচ্ছে। তবে সার্বিক অবস্থা এক নাও হতে পারে। কিন্তু এসব ভেবে গান করা থামিয়ে রাখলে চলবে না। কাজ বন্ধ করলে পিছিয়ে থাকতে হবে। এখন চলতি প্রজন্মের অনেক শিল্পীই গান কম করছে। এটা ঠিক নয়। সবাইকে নিয়মিত গান করতে হবে। না হলে এগুতে পারবে না। এখনতো গান প্রকাশের বিভিন্ন ধরনের উপায় রয়েছে। নিজেও গান প্রকাশ করা যায় স্বত্ব নিজের কাছে রেখে। আবার কোম্পানি থেকেও করা যায়। আমার বিশ্বাস সবাই কাজ করতে থাকলে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য। বিশেষ দিবসগুলোতে নেই এখন গান প্রকাশের তোড়জোড়। থেমে থেমে প্রতি মাসেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে একটি দুটি করে গান প্রকাশ হচ্ছে। গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী কেউ এতে সন্তুষ্ট নন। তবুও অস্তিত্ব প্রকাশের জন্য এমন অবস্থার মধ্যেই সবাই কাজ করার চেষ্টা করছেন। সঙ্গীতাঙ্গনের এই বৈরী বাতাস কবে থামবে সেটিও নিশ্চিত নন কেউ। তবু সকলেই স্বপ্ন দেখছেন। এই প্রসঙ্গে প্রযোজনা সংস্থা জি সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদ বলেন, আমরা গানের সুস্থ পরিবেশটা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। আমি মনে করি, আমাদের এখন গানের বাজার ওঠা-নামা করছে। এটি ঠিক হতে সময় লাগবে। সেটির জন্য আমাদের সকলকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। সিডি বিলুপ্তির পর বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল একটা মার্কেট এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এখন নিয়মিত গান প্রকাশ করছে। এই প্ল্যাটফর্মে যোগ হয়েছে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও। শিল্পীদের ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও দেখলে মনে হয় সত্যি গানের বাজার ভালই যাচ্ছে। কিন্তু সেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই আবার বলা হয় গান দিয়ে কোনো ব্যবসা হচ্ছে না। প্রশ্ন থেকে যায়, যদি ব্যবসা না হয়ে থাকে তাহলে মিউজিক ভিডিওর পেছনে এত পৃষ্ঠপোষকতার কারণ কি? নির্দিষ্ট কয়েকজন শিল্পী সেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুবিধা ভোগ করছে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। ফলে শ্রোতাদের কাছে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয় অনেক শিল্পী ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না।
×