ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু ধর্ষণ ও হত্যা ॥ বিক্ষোভে উত্তাল ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

শিশু ধর্ষণ ও হত্যা ॥ বিক্ষোভে উত্তাল ভারত

জম্মু ও কাশ্মিরে আট বছরের এক শিশুকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আবারও ভারত জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি কাশ্মিরের কাঠুয়া শহরের কাছে মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়ের আসিফা বানু নিখোঁজ হয়। ৭ দিন পর কাছের একটি জঙ্গলে নির্যাতনের পর খুন করা আসিফার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেফতার করে। তরুণের জবানবন্দীর ভিত্তিতে তার চাচা মন্দিরের (যে মন্দিরে আসিফাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়) পরিচালক সাবেক সরকারী কর্মকর্তা সানজি রাম এবং পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়াকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার চতুর্থ ব্যক্তি স্পেশাল পুলিশ অফিসার সুরিন্দর কুমার। তাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলে দেখছিল। ওই তরুণের বন্ধু প্রবেশ কুমারও শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে। তাকে খুঁজছে পুলিশ। পুলিশি তদন্ত এবং ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহকরা নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষায় অভিযুক্তদের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। তিন মাস আগের এ ঘটনা নিয়ে এ সপ্তাহে ভারত জুড়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়। কারণ, গ্রেফতার ব্যক্তিরা হিন্দু হওয়ায় হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুর কয়েকটি হিন্দু রাইট-উইং গ্রুপ তাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। বিবিসি জানায়, জম্মুর হিন্দু আইনজীবীদের একটি দল পুলিশকে আদালতে আসিফা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে বাধা দেয়। অভিযুক্তদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পুলিশকে মোটা অঙ্কে ঘুষের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল, অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে জানায় এনডিটিভি। এমনকী প্রমাণ লোপাট করতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনন্দ দত্ত এবং প্রধান কনস্টেবল তিলক রাজ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করেনি এবং আসিফার পোশাক ধুয়ে ফেলেন বলেও অভিযোগপত্রে বলা হয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই মন্ত্রী অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে করা মিছিলে অংশ নেন বলেও জানায় এনডিটিভি। শুধুমাত্র ধর্মের কারণে এ রকম নৃশংস একটি ঘটনার পরও অভিযুক্তদের মুক্তি দাবি এবং ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রিদের তা সমর্থন করায় পুরো ভারত ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বৃহ¯পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে # হ্যাশট্যাগ কাঠুয়া এবং # হ্যাশট্যাগ জাস্টিস ফর আসিফা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহ¯পতিবার রাতে রাজধানী দিল্লিতে আসিফা হত্যা মামলায় ন্যায় বিচারের দাবিতে ইন্ডিয়া গেট অভিমুখে ক্যান্ডেললাইট মার্চের নেতৃত্ব দেন ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির প্রধান রাহুল গান্ধী। রাহুল বলেন, আমরা কী দেখছি, এ দেশে নারী ও শিশুরা ক্রমাগত ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এটা কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা জাতীয় বিষয়। সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধীও ওই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন। নারী ও শিশুদের অধিক সুরক্ষার দাবিতে দিল্লী কমিশন ফর উইম্যান এর প্রধান শুক্রবার থেকে আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন। গ্রেফতার তরুণের জবানবন্দীতে আসিফার সঙ্গে ভয়ঙ্কর নৃশংসতার কথা উঠে আসে। ওই তরুণ একটি ঘোড়া খুঁজে দিতে সাহায্য করার কথা বলে আসিফাকে জঙ্গলে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সে আফিসাকে জোর করে গ্রামের একটি ছোট্ট মন্দিরে টেনে নিয়ে যায় এবং নেশাদ্রব্য খাইয়ে দেয়। ওই তরুণ, মন্দিরের পরিচালক সানজি রাম ও পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া শিশুটিকে তিন দিন ধরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। ওই তিন দিন শিশুটিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখা হয়েছিল এবং কিছু খেতে দেয়া হয়নি। পরে তারা ভারি পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে আসিফাকে হত্যা করে তার লাশ জঙ্গলে ফেলে দেয়।
×