ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওয়াজের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের সর্বসম্মত রায়

রাষ্ট্রীয় পদে আজীবন অযোগ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

রাষ্ট্রীয় পদে আজীবন অযোগ্য

দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে রাষ্ট্রীয় পদে আজীবন অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রীমকোর্ট। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন সুপ্রীমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়ে নওয়াজের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নিয়ে সৃষ্ট অস্পষ্টতা দূর করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণ সৎ চরিত্রের নেতা পাওয়ার দাবিদার। ডন নিউজ। গত বছর ২৮ জুলাই পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি মামলায় পাকিস্তানের হাইকোর্ট সংবিধানের ৬২ ধারা অনুযায়ী নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন। ওই রায়ের পর পদত্যাগ করেন নওয়াজ। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেও পার্লামেন্টে তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ- নওয়াজ (পিএমএল-এন) সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় একটি আইন সংশোধনের মাধ্যমে তিনি পিএমএল-এনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গত ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে সব সরকারী কাগজপত্র থেকে পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নওয়াজ শরিফের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়। সাতদিনের মধ্যে নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফকে পিএমএল-এনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাচিত করা হয় এবং নওয়াজকে দলের আজীবন নেতা ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে কোন পদে না থেকেও পিএমএল-এনের লাগাম নিজের হাতে রেখে দেন নওয়াজ। পাকিস্তান সংবিধানের ধারা ৬২(১) অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো ব্যক্তিকে সাদিক ও আমিন (সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ) হতে হবে। একই ধারায় গত ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা জাহাঙ্গীর তারিনকে অযোগ্য ঘোষণা করে পাকিস্তান হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ওই দুই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ১৭টি আপীল ও পিটিশন জমা পড়ে বলে জানায় পাকিস্তানের দৈনিক ডন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, পার্লামেন্ট সদস্য বা সরকারী পদে থাকা কোন ব্যক্তি সংবিধানের ৬২ ধারা অনুযায়ী নিষিদ্ধ হলে তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আজীবন নাকি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। শুক্রবারের এই রায় ওইসব প্রশ্নের অবসান ঘটিয়েছে। অর্থাৎ নওয়াজ এবং পিটিআই নেতা জাহাঙ্গীর আর কখনও কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বিচারপতি উমর আতা বানদিয়াল শুক্রবারের রায় পাঠ করেন। রায়ে বলা হয়, ধারা ৬২ অনুযায়ী কোন পার্লামেন্ট সদস্য বা সরকারী কর্মী অযোগ্য ঘোষিত হলে সেটা আজীবনের জন্য হবে এবং ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তি কোন নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা পার্লামেন্ট সদস্য হতে পারবে না। এদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আওরঙ্গজেব এক প্রতিক্রিয়ায় রায়কে একটি কৌতুক বলে বর্ণনা করেছেন। সংবিধানের ৬২ (১) (ফ) ধারা অনুযায়ী এটি এমন এক কৌতুক যা এর আগের পাকিস্তানের সাবেক অনেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই করা হয়েছে। ঠিক একই ধরনের রায়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল, বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছিল এবং সর্বশেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। আওরঙ্গজেবের দাবি সুপ্রীমরকার্টের এই সিদ্ধান্তটি আলী বাবাকে এবং চল্লিশ চোরের একটি ষড়যন্ত্রের ফল। আওরঙ্গজেব নওয়াজ শরিফের এই রায়ের কুশিলব হিসেবে পেছনে যারা ছিলেন তাদের কাপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেন, তিনি বলেন তারা বিশ্বাস করে আদালতের মাধ্যমে অযোগ্য ঘোষিত হলে একজন রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক কর্মজীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। সাংবাদিকরা আওরঙ্গজেবকে পিএমএল-এন আদালতের মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শরীফ এবং পিএমএল-এন বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সর্বদা সম্মান করে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণার পর নওয়াজকে পিএমএল-এন প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এফবিসিসিআই নির্বাচনে একটি বিতর্কিত সংশোধনী পাস করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নওয়াজ শরীফকে দলের নেতৃত্বে পুনর্নির্বাচনের পথ তৈরি করে দেয়। পার্টি প্রধান হিসেবে তাকে অযোগ্য ঘোষণার পর, পিএমএল-এন নওয়াজকে আজীবনের নেতা বলে ঘোষণা দেয়। আওরঙ্গজেব বলেন, যতদিন নওয়াজ শরীফ জনগণের হৃদয়ে বাস করবে, ততদিন তাকে অযোগ্য ঘোষণার কোন অর্থ থাকবে না। তিনি আরও বলেন পাকিস্তানের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এখন জেগে ওঠেছে, দেশে কি ঘটছে সবাই এখন তা দেখছে এবং এর পেছনে কি কারণ রয়েছে তাও তারা বুঝে। আওরঙ্গজেব বলেন, পাকিস্তানে মাইনাস এক এর স্লোগান আবার উত্থাপিত হচ্ছে। নওয়াজ শরিফ এমন এক প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশ থেকে লোডশেডিং এবং সন্ত্রাসবাদ দূর করেছেন। এই জন্যেই তাকে আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। শরীফ বিরোধীরা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ভয় পান কারণ তিনি ভোটের প্রতি সম্মান দিয়ে জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করছিলেন। শরীফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কোন আদালতে প্রমাণিত হয়নি বলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন।
×