ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর ২৬ কিমি নতুন রেললাইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর ২৬ কিমি নতুন  রেললাইন হচ্ছে

মতিউর রহমান খান ॥ পাবনার ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ ও সংস্কার করছে সরকার। দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে নির্মিত হচ্ছে পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। এটির উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করতে রেললাইন তৈরির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতেই এই লাইনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। এ লাইনে দ্রুতগতির মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে একই সঙ্গে প্রকল্পের পূর্তকাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য মালামাল সড়ক পথের বিপরীতে রেলপথে পরিবহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের জন্য সিগনালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ শ ৩৬ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক রেল মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করবে। রেলসূত্র জানায়, একনেকে পাস হওয়ায় রেল মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ মাসেই অনুমোদন দেয়া হবে। এরপরই মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করবে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই প্রকল্পটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন বিধায় এটি একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। বর্তমানে এটির নির্মাণকাজ চলছে। উক্ত প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি ও মালামাল রেলপথে আনার জন্য সুপারিশ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্প এলাকায় রেল সংযোগ স্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উক্ত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বিদ্যুতকেন্দ্রের সার্বিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপনে সহায়তা করতে প্রকল্পটির প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য সার্বিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপনে সহায়তা করা, ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট হতে বিদ্যুতকেন্দ্র পর্যন্ত রেলযোাগাযোগ স্থাপন করে নিরাপদ, দ্রুত ও মালবাহী ট্রেন চালু করার মাধ্যমে রেলওয়ের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। পরিবহন তথা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতেই নতুন এ লাইনটি নির্মাণ হলে একই সঙ্গে ঈশ্বরদী ইয়ার্ড আধুনিকায়ন করা ও লোকোশেডটি ব্রডগেজ থেকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কাজটি অতি দ্রুততার সঙ্গে শুরু করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৩ শ ৯৫ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটির মধ্যে মোট ২৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে ৯ কিলোমিটার রেললাইন নতুন করে নির্মাণ করা হবে। বাকি ব্রডগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তর করা হবে। বিদ্যুতকেন্দ্রে একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ঈশ্বরদী ইয়ার্ডকে আধুনিকায়ন করা হবে। এছাড়া ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর যেতে মোট ১৩টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৭টি বক্স কালভার্ট, বিদ্যুতকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটার বেইজড কালার লাইট সিগনালিং সিস্টেম স্থাপন করাসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। সূত্র জানায়, রেল কর্তৃপক্ষ অলটারনেটিভ মুড অব ট্রান্সপোর্ট স্থাপন করতে কাজ করবে। অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে জন্য বিদেশ থেকে অতি মূল্যবান ও ভারী ভারী সরাসরি স্থাপনযোগ্য যন্ত্রপাতি আনা হবে। এসব যন্ত্রপাতি স্বাভাবিকভাবেই সড়কপথে আনা হলে রাস্তার ক্ষতি হতে পারে। যার প্রভাবে রাস্তায় চলাচলকারী অন্য সকল যানবাহনের ওপর পড়তে পারে। এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের বর্জ্যসমূহ অতি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরতে পারে বিধায় খোলা যানবাহনে করে আনা নেয়া করতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এমন ধারণার প্রেক্ষিতে আবদ্ধ কন্টেইনারে করে এসব বর্জ্য স্থানান্তর করা হবে। এজন্য রেলপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রেলসূত্র জানায়, ঈশ্বরদী বা আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী বিদ্যুতকেন্দ্র পরিচালনায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা শ্রমিক কর্মচারীদের নিয়মিত যাতায়াতের সুবিধার্থেও এ লাইনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে রূপপুর পারমাণববিক বিদ্যুতকেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করতে রেলসংযোগ স্থাপন করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। গত মঙ্গলবার একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৩০ মাস মেয়াদি প্রায় ৩ শ ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের যে কোন স্থান থেকে প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত করা সহজ হবে। অলটারনেটিভ মুড অব ট্রান্সপোর্ট করতে প্রকল্প কাজে ভারী যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করা, কর্মরত শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের পৌঁছাতে সমস্যা দূর হবে। প্রকল্পটির প্রস্তাব রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর আশা করি মে মাস থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। মহাপরিচালক বলেন, প্রকল্পে মোট ২৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে ৯ কিলোমিটার রেললাইন নতুন করে নির্মাণ করা হবে। বাকি রেললাইনকে ব্রডগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তর করা হবে। বিদ্যুতকেন্দ্রে একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ঈশ্বরদী ইয়ার্ডকে আধুনিকায়ন করা হবে। এছাড়া ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর যেতে মোট ১৩টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৭টি বক্স কালভার্ট, বিদ্যুতকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটার বেজড্ কালার লাইট সিগনালিং সিস্টেম স্থাপন করাসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। এর মাধ্যমে সার্বিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপনে সহায়তা করা, ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট হতে বিদ্যুতকেন্দ্র পর্যন্ত রেলযোাগাযোগ স্থাপন করে নিরাপদ, দ্রুত ও মালবাহী ট্রেন চালু করার মাধ্যমে রেলওয়ের আয় তথা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
×