ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

আজ পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ আজ। শনিবার দিবাগত রাতে আবির্ভাব হবে মহিমান্বিত এই রজনীর। ইসলামে যে কয়টি মহিমান্বিত ও পবিত্র রজনী রয়েছে তার মধ্যে শবে মিরাজ অন্যতম। এ রাতে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা) উর্ধাকাশে গমন করেন। মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বিধানও করা হয় এই মহিমান্বিত রাতে। মুসলিমদের কাছে এ রাত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জিকির-আসকার, নফল নামাজ আদায় ও দোয়ার মধ্য দিয়ে এ রাত অতিবাহিত করবেন মুসল্লিরা। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ উদ্যাপিত হবে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ রাতে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা) সশরীরে স্বজ্ঞানে হযরত জিবরাইল (আ) ও হযরত মিকাইল (আ) এর সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত যান। সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করেন। একই সঙ্গে জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে ফিরে আসেন। এ জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এ রাতের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অনেক। এ দিকে মহিমানিত্ব এ রাতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরানখানি, নফল সালাত, জিকির আসকার, ওয়াজ মাহফিল, দোয়া-দুরুদ পাঠ করবেন। বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিয়ে মুসলিম উম্মার শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করবেন। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল। মিরাজ অর্থ উর্ধ গমন। মিরাজের একটা অংশ হলো ইসরা। ইসরা অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। যেহেতু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ রাত্রিকালে হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। বিশেষত বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশে আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা-১৭ [৫০] ইসরা-বনি ইসরাইল)। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবুওয়াতের একাদশ সালের ২৬ রজবের দিবগত রাতে হযরত মুহম্মদ (সা)-এর হযরত জিব্রাঈলের (আ) সঙ্গে আল্লাহর নির্দেশে বায়তুল্লাহ হতে বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত ‘বোরাক্বে’ ভ্রমণ, অতঃপর সেখান থেকে সপ্তম আসমান পেরিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন ও পুনরায় বায়তুল মুক্বাদ্দাস হয়ে বোরাক্বে আরোহন করে প্রভাতের আগেই মক্কায় নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের ঘটনাকে মিরাজ বলা হয়। এ রাত্রিতে উম্মাতের জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হয়। ফলে এটা খুবই ফজিলতের রাত্রি। অতএব এই রাত্রিতে যতদূর সম্ভব জেগে নফল নামাজ, জিকির-আসকার, কুরআন তিলওয়াত ও দুরুদ শরিফ ইত্যাদি পাঠ করা এবং নফল নিয়্যতে দিবাভাগে রোজা রাখা ভাল। এ রাতে সারারাত জেগে মুসল্লিরা ইবাদত বন্দেগি করলেও শবে মিরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোন আমলের কথা শরিয়তে উল্লেখ করা হয়নি। তারপরও এ রাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশেষ ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করে থাকেন। বিশেষত এ রাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মসজিদে এবং সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করার প্রথা বহুদিন যাবত চলে আসছে। অনেকে এ উপলক্ষে নফল রোজা রাখেন। তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করেন। মিরাজ শেষে রাসুল (সা) পুরো ঘটনা হযরত আবু বকর (রা) এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি রাসুল (সা) এর মুখে শুনেই নিঃসংশয়ে তা বিশ্বাস করেন। এ ঘটনায় রাসুল (সা) তাকে সিদ্দিকি বা বিশ্বাসী খেতাব দেন। মক্কার কাফেররা রাসূলের মিরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করে। বিশ্বের শত কোটি মুসলমান মিরাজের ঘটনাকে বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করেন। তারা বলেন, মহানবীর মিরাজের সফরে প্রথম আসমানে হযরত আদম (আ), দ্বিতীয় আসমানে হযরত ইয়াহিয়া (আ) ও হযরত ঈসা (আ), তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আ), চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিস (আ), পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আ), ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আ), সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। প্রত্যেকের সঙ্গে সালাম, কালাম ও কুশল বিনিময় হয়েছে এ সময়। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন তিনি বায়তুল মামুর গেলেন, যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও প্রস্থান করেন। তাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না। অতঃপর সিদরাতুল মুনতাহার কাছে গেলেন। সেখানে চারটি নদী দেখলেন। দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য দুটি নদী জান্নাতের আর প্রকাশ্য নদী দুটি হলো নীল ও ফোরাত। তারপর বায়তুল মামুরে পৌঁছালে এক পেয়ালা শারাব, এক পেয়ালা দুধ ও এক পেয়ালা মধু পেশ করা হলো। তিনি (সা) দুধ পান করলেন, এটাই স্বভাবসুলভ (ইসলাম)। (বুখারি শরিফ: ৩৬৭৪, খ-: ১, পৃষ্ঠা ৫৪৮-৫৫০)।
×