ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হ্যাকারের কবলে সার্ভার

যশোর বোর্ডের সব তথ্য গায়েব

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

যশোর বোর্ডের সব তথ্য গায়েব

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর শিক্ষাবোর্ডের সব তথ্য অনলাইন থেকে গায়েব হয়ে গেছে! হ্যাকাররাই এ কা- ঘটিয়েছে। কেবল তাই নয়, এক সপ্তাহ ধরে বোর্ডের অনলাইনে সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিল। বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গোপনীয়তা আর থাকেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হওয়ায় বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম অনলাইনে কার্যক্রম শুরু হয় যশোর শিক্ষাবোর্ডে। যার মডেল পরবর্তীতে অন্য শিক্ষাবোর্ডগুলো গ্রহণ করে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)-এর সার্ভার দ্বারা যশোর শিক্ষাবোর্ড পরিচালিত। বোর্ডের সকল প্রকার তথ্য বিসিসির সার্ভারে সংরক্ষিত। এই সার্ভার ব্যবহার করে যশোর শিক্ষাবোর্ডে অনলাইনে সকল প্রকার কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু প্রায় সময় অনলাইন বিভ্রাটের মধ্যে থাকে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অনলাইন কার্যক্রম। এ নিয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকাংশ সময় বিব্রতকর অবস্থায় থাকেন। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে পারেন না। এ কারণে নানা ধরনের ঝুঁকি-ঝামেলায় পড়তে হয় তাদের। এ নিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে শিক্ষকদের বাগ্বিত-ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার জবাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য, নেট না থাকলে আমাদের কী করার আছে। কেন নেট থাকে না-এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেক কর্মকর্তা বলেন, বিসিসি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের ইচ্ছে মতো সার্ভার পরিচালনা করে থাকে। এখানকার কোন কোন কর্মকর্তা বেসরকারী ওয়েবপোর্টাল কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশ করে এ ধরনের কাজ করে থাকেন। আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবা গ্রহীতাদের। অপরদিকে, বিসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার কারণে তারা তাৎক্ষণিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অনলাইন সিস্টেম বিকল হয়ে যায়। বিসিসির সার্ভারে থাকা যশোর শিক্ষাবোর্ডের সব ধরনের তথ্য মুছে ফেলে হ্যাকাররা। বন্ধ হয়ে যায় বোর্ডের সব ধরনের কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় জরুরী কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে শিক্ষাবোর্ডকে সেই পুরানো আমলে ফিরে যেতে হয়। হাতে লিখে ব্যাংক ড্রাফট করা হয় সোনালি সেবার পরিবর্তে। এর বাইরে অন্যান্য সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। মাস খানিক আগেও যশোর শিক্ষাবোর্ডের সার্ভার বিকল ছিল দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে। তখনও সব ধরনের কাজকর্ম বন্ধ ছিল। হ্যাকাররা অনলাইন থেকে সব ধরনের তথ্য সরিয়ে নেয়ায় এক প্রকার বিপদে পড়ে যায় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সব ধরনের তথ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ থাকে। সেখান থেকে তারা ফের আপডেট করেছেন। তাদের দাবি, মঙ্গলবার থেকে সার্ভার নতুন করে কাজ শুরু করেছে। তবে, এবার তারা বিকল্প ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে একটি বেসরকারী কোম্পানির সঙ্গে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের মৌখিক চুক্তি হয়েছে। যশোর শিক্ষাবোর্ডের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী ওয়েবপোর্টাল ব্যবহার করে আসছে। এ কারণে তাদের ঝামেলা অনেক কম। কোন রকম সমস্যা হলেই তাৎক্ষণিক সমাধান করে ফেলতে পারে তারা। অপরদিকে, একমাত্র যশোর শিক্ষাবোর্ড বিসিসির ওয়েবপোর্টাল ব্যবহার করায় কোন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক সেবা মেলে না। এমনকী টেলিফোনেও যোগাযোগ করা যায় না কোন কর্মকর্তার সঙ্গে। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ সময় যশোর থেকে ঢাকায় গিয়ে তাদের তোষামোদ করে কাজ করে নিতে হয়। এসব বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, সার্ভার হ্যাকড হওয়ার কারণে কয়েকদিন কাজ বন্ধ ছিল। আমাদের কাছে বিকল্পভাবে সব ধরনের তথ্য থাকার কারণে নতুন করে আপলোড করা হয়েছে। জরুরী কিছু কাজ করতে হয়েছে ম্যানুয়ালি। বিশেষ করে টাকা জমা নেয়ার বিষয়টি সোনালি সেবার পরিবর্তে ব্যাংক ড্রাপটের মাধ্যমে নিতে হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, সার্ভার হ্যাকড হওয়ায় পরীক্ষা বিভাগে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মাদ আব্দুল আলীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্ভার সমস্যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কাজে বার বার বিঘœ ঘটায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি কোম্পানির সঙ্গে মৌখিক কথাবার্তা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে চুক্তি হবে। কারণ জনগণের কাছ থেকে বোর্ড অর্থ নিচ্ছে। এরপরও ঠিকমতো সেবা দিতে না পারাটা অনৈতিক। ফলে, যাতে সেবা প্রদানে বিঘœ না ঘটে এজন্যেই বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
×