ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুদানী নারী মাজিদির ফুটবল প্রেম

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

সুদানী নারী মাজিদির ফুটবল প্রেম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সুদান। তাই ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়াটা কঠিন। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সুদান। তাই নারীদের ক্রীড়ায় সংশ্লিষ্টতা অলীক স্বপ্ন। কিন্তু এরপরও ফুটবলটাকে মনেপ্রাণেই ভালবাসেন সালমা আল-মাজিদি। যেহেতু ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই, সে কারণে এই ভালবাসার ক্রীড়ায় নিজেকে জড়ানোর একমাত্র উপায় কোচ হওয়া। শেষ পর্যন্ত ২৭ বছর বয়সী মাজিদি কোচই হয়েছেন। তবে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে নারী কোন দলের নয় পুরুষ একটি ফুটবল দলের কোচ হয়েছেন মাজিদি। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা) জানিয়েছে আরবীয় অঞ্চলে প্রথম আরব ও সুদানী নারী হিসেবে তিনি কোন পুরুষ দলের কোচ হয়েছেন। আরব অঞ্চলের অন্যতম ক্রীড়া ফুটবল এবং এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এই ফুটবলপ্রেমটাই বেশি দেখা যায় অন্য যে কোন ক্রীড়ার চেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই মাজিদির কাছেও অনেক প্রিয় হয়ে ওঠে ফুটবল। সুদান পুলিশ ছিলেন তার বাবা। ১৬ বছর বয়সে প্রথম ফুটবলটাকে ভাল লাগতে শুরু করেছিল তার। অবশেষে খার্তুমের পূর্বে অবস্থিত শহর গাদারেফে তিনি কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। তার ক্লাবের নাম আল আহলি আল গাদারেফ। কিন্তু এতকিছু থাকতে ফুটবল কেন? মাজিদি বলেন, ‘কারণ, এটা আমার প্রথম ও অন্যতম ভালবাসা। আমি কোচ হয়েছি কারণ এখনও সুদানে কোন মেয়ের জন্য ফুটবল খেলার সুযোগ তৈরি হয়নি।’ ক্লাবের সবাই তাকে শ্রদ্ধাভরে ‘সিস্টার কোচ’ বলেই সম্বোধন করেন। কোচ হওয়ার ইচ্ছাটা তার হয়েছে ছোট ভাইকে স্কুলের ফুটবল দলে খেলার সময়। তার ছোট ভাইকে অনুশীলন করাতেন যে কোচ সেটা দেখতে যেতেন মাজিদি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি অনুশীলনের সেশন শেষে আমি তার সঙ্গে (স্কুল কোচ) কোচিং কৌশল নিয়ে আলোচনা করতাম। তিনি দেখলেন আমার মধ্যে কোচিংয়ে কৌতূহল আছে এবং সুযোগ করে দিলেন তার সঙ্গে কাজ করার।’ ছোট ভাইয়ের স্কুলে পাওয়া সেই সুযোগটাই মোড় ঘুরিয়ে দিল মাজিদির জীবনের। খুব দ্রুতই দক্ষ হয়ে উঠলেন তিনি এবং অচিরেই পরিপূর্ণ কোচ হলেন আল হিলাল ক্লাবের অনুর্ধ-১৩ ও অনুর্ধ-১৬ দলের। এই ক্লাবটি খার্তুমের সংলগ্ন নীল নদীর পশ্চিমপ্রান্ত ঘেঁষা শহর ওমদুরমানে অবস্থিত। কিন্তু এরপরও অনেকের মনে সন্দেহটা আছে যে তিনি ফুটবল খুব ভাল বোঝেন কিনা এবং কোচ হিসেবে যথেষ্ট দক্ষতা আছে কিনা। তবে স্বীকৃতিই এর উত্তরটা দিয়ে দেয়। আফ্রিকান মহাদেশে কোচিং ক্যারিয়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ‘বি’ ক্যাটাগরির ব্যাজ পেয়েছেন। এর অর্থ তিনি পুরো মহাদেশের মধ্যে যে কোন প্রথম বিভাগ লীগে খেলা ক্লাবের কোচ হিসেবে কাজ করতে পারবেন। আর নিজের ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী মাজিদি। তিনি ২০১৫ সালে বিবিসির জরিপে ‘বিশ্বের সেরা অনুপ্রেরণাদায়ক ১০০ নারী’ তালিকায় ছিলেন। ইতোমধ্যেই মাজিদি সুদানের দ্বিতীয় বিভাগ লীগের আল নাসের, আল নাহদা, নীল হালফা ও আল মুরাদা পুরুষ ক্লাবগুলোর কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তার অধীনে নীল হালফা ও আল নাহদা লীগের শীর্ষস্থান পেয়েছিল। সুদান ফুটবলের আরেক নারী ছিলেন যার নাম ছড়িয়ে গিয়েছিল বিশ্বব্যাপী। ১৯৭০ সালের দিকে মুনিরা রমাদান পুরুষদের ফুটবল ম্যাচে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
×