ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডোর পেনাল্টি গোলে স্বপ্নভঙ্গ জুভেন্টাসের

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

রোনাল্ডোর পেনাল্টি গোলে স্বপ্নভঙ্গ জুভেন্টাসের

গোলাম মোস্তফা ॥ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই এবার বিদায় নেয় বার্সিলোনা। প্রথম লেগে ৪-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরও দ্বিতীয় লেগে রোমার কাছে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় স্প্যানিশ জায়ান্টরা। রোমার অবিশ্বাস্য কামব্যাকের গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই যেন বুধবার রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় জুভেন্টাস। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ইতালিয়ান ক্লাবটি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে সমান ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় জুভেন্টাসও। আর মাত্র এক গোল করতে পারলেই রূপকথার জন্ম দিয়ে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টের শেষ চারের টিকেট কাটবে ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রির দল। ঠিক তখনই নাটকীয় এক পেনাল্টি পায় স্বাগতিকরা। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের ৯০+৩ মিনিটে সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেই রিয়াল মাদ্রিদকে সেমিফাইনালের টিকেট এনে দেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রিয়াল মাদ্রিদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দুর্দান্ত শুরু করে ইতালিয়ান সিরি’এ লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচ শুরুর ৭৬ সেকেন্ডের মধ্যেই জুভেন্টাসকে এগিয়ে দেন মারিও মানজুকিচ। দারুণ এক গোল করে সফরকারীদের এগিয়ে দেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে দ্রুততম গোল হজমের রেকর্ড। প্রথমার্ধের ৩৭ মিনিটে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জুভেন্টাসের এই ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার। সেই সঙ্গে নতুন এক রেকর্ডও গড়েন মানজুকিচ। বার্নাব্যুতে প্রতিপক্ষের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথমার্ধেই রিয়ালের জালে দুইবার বল জড়ানোর রেকর্ড গড়েন তিনি। এর পরের সময়টাতে আর কোন গোলের দেখা পায়নি কোন দল। এর ফলে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় জুভেন্টাস। দ্বিতীয়ার্ধেও দুর্বার গতিতে ছুটতে থাকে জুভেন্টাস। নিষ্প্রভ রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সফরকারীরা। সেই সুযোগটাও পেয়ে যায় এ্যালেগ্রির দল। ম্যাচের ৬০ মিনিটে কেইলর নাভাসকে হতাশায় ডুবিয়ে রিয়ালের জালে তৃতীয়বারের মতো বল জড়ান ব্লেইজ মাতুইদি। দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচের ফলাফল তখন ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ের ৯৩ মিনিটেই কপাল পুড়ে জুভদের। পেনাল্টি বক্সে রিয়াল মাদ্রিদের লুকাস ভাসকেজকে ফাউল করে বসেন জুভেন্টাসের মেধি বেনাশিয়া। পেনাল্টি পায় রিয়াল। আর তখনই রেফারির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় সফরকারীদের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনকে। পেনাল্টির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত এক গোল করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সেই সঙ্গে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টে টানা ১১ ম্যাচে গোল করার বিরল কীর্তি গড়েন সি আর সেভেন। তার এই পেনাল্টিতে করা গোলের সৌজন্যে রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয় লেগে ৩-১ ব্যবধানে হারলেও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়। রোনাল্ডো গোল করলেও এই ম্যাচের নায়ক লুকাস ভাসকুয়েজ। হ্যাঁ, ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে জুভেন্টাসের মেধি বেনাশিয়া লুকাস ভাসকুয়েজকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান ম্যাচ রেফারি। পরবর্তী সময়ে টেলিভিশনের পর্দায়ও দেখা যায় রেফারির সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক। তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই এই পেনাল্টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে সাফাই গাইলেও বিরোধিতা করছেন জুভেন্টাসের খেলোয়াড়রা। তবে এ নিয়ে কোন ধরনের বিতর্ক থাকতে পারে বলে মনে করেন না ভাসকুয়েজ। ম্যাচের শেষে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই এটা পেনাল্টি। আমি যখন বলে আঘাত করতে যাব ঠিক তখনই সেন্টার ব্যাক বেনাশিয়া পেছনের দিক থেকে এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। এটা নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা হতে পারে বলে আমি মনে করি না।’ ম্যাচ শেষে রোনাল্ডোও জানান, এটা পেনাল্টি। তার মতে ভাসকুয়েজকে যদি ট্যাকল না করে তাহলে তো এটা সরাসরি গোল হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কেন জুভেন্টাসের খেলোয়াড়রা বাধা দিচ্ছিল। লুকাসকে পেছন থেকে খুব সুস্পষ্টভাবে ট্যাকল করা হয়। আর এটা যদি পেনাল্টি না দেয়া হয় তাহলে তো গোল। আমার মতে, এই পেনাল্টি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।’ সার্জিও রামোসের নিষেধাজ্ঞায় জুভেন্টাসের বিপক্ষে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন মার্সেলো। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারও সাফ জানিয়ে দেন যে, ‘এটা সুস্পষ্ট পেনাল্টি।’ রিয়াল মাদ্রিদ পেনাল্টির পক্ষে কথা বললেও রেফারির কড়া সমালোচনা করেছেন ইতালিয়ান জায়ান্টরা। হতাশ দলটির অভিজ্ঞ কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রিও। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে এমন পেনাল্টি পাওয়াটা সত্যিই মেনে নেয়া যায় না। আমি তো রামোসকে (সার্জিও) বলেছিলাম, এটা অসাধারণ একটা পেনাল্টি। যদি কৌতুক হিসেবে নেন বিষয়টিকে।’ জুভেন্টাসের অধিনায়ক জিয়ানলুইজি বুফন তো পেনাল্টির ক্ষোভে রীতিমতো গালিগালাজ শুরু করে রেফারিকে। তিনি বলেন, ‘খুব কাছাকাছি থেকেই দেখেছি আমি। ম্যাচের ৯৩ মিনিটে যদি এটাকে পেনাল্টি দেন তাহলে আপনি (রেফারি) মানুষ নন, আপনি একজন পশু।’
×