ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় ঘোষণা

ধর্ষণকারী পরিবহন শ্রমিকদের ধরিয়ে দেবেন মালিকরা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

ধর্ষণকারী পরিবহন শ্রমিকদের ধরিয়ে দেবেন মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবার পরিবহন শ্রমিকদের স্পট জরিমানা চান বাস মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি পরিবহনের বিরুদ্ধে যেসব জরিমানা করে থাকে এর দায়ভার মালিকদের ওপর পড়ে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনাসহ অনেক ঘটনার জন্য সরাসরি শ্রমিকরা দায়ী। তাদের শাস্তি হয় না। এজন্য বিআরটিএর সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আলোচনা করবেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানী ঢাকা শহরে সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি পরিচালনা এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে আলোচনার আয়োজন করা হয়। রাজধানীতে হঠাৎ করেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। চলতি মাসের তিন এপ্রিল সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত ছিঁড়ে যায় কলেজছাত্র রাজীবের। এরপর থেকেই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। যদিও ঘাতক দুই বাস চালককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আহত রাজীবের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলছেন চিকিৎসকরা। অর্থাৎ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাজীব। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার আনন্দ সিনেমা হলের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী রুনী আক্তারের ডান পা থেতলে যায় বাস দুর্ঘটনায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আহত ছাত্রীর ওপর নিউভিশন পরিবহনের বাস তুলে দেয় বেপরোয়া চালক। এ নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারাও অনেকটা উদ্বিগ্ন। তারাও রাজীবের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোন সাড়া মেলেনি। তাই বুধবারের আলোচনায় এ বিষয়টিও নানাভাবে ওঠে আসে বক্তাদের কাছ থেকে। আলোচনায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা জানান পরিবহন মালিকরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, কোন পরিবহনে নারীরা ইভটিজিং বা ধর্ষণের শিকার হলে দোষী বাস স্টাফদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তুলে দিতে সহযোগিতা করবেন মালিকরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার সাভার, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে বাসের মধ্যে ধর্ষণ ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বিব্রত। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারাও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চান। প্রতিটি বাস কোম্পানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পৃথক-পৃথক সচেতনতামূলক বৈঠকের আয়োজন করতে আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি টার্মিনাল ও জেলাভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করতে পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এজন্য সচেতনতা হলো একটি বড় মাধ্যম। দুর্ঘটনা সম্পর্কে পরিবহন শ্রমিকরা সচেতন হলে আমরা আশাবাদী এর সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়া চলন্ত বাসে হকার ও ভিক্ষুক ওঠা নিষিদ্ধ করা, নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো, রাস্তায় আইনভঙ্গকারী চালকদের স্পট শাস্তির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় ওঠে আসে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সচেতনতামূলক কর্মসূচীতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। চালকদের সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি সম্পর্কে জানানোর জন্য মত দেন অনেকেই। তারা বলেন, একটি দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সারা জীবন কষ্ট ভোগ করতে হয়। নিঃস্ব হয়ে যায় অনেক পরিবার। এই বাস্তবতাগুলো চালকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তারা যেন বাস চালানোর সময় এসব বিষয় মাথায় রাখেন। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার বদনাম থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, চালকদের স্পট জরিমানার বিষয়টি আইনে নেই। এ বিষয়ে আমরা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।
×