ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবাসনের আগেই নাগরিকত্ব চায় রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

প্রত্যাবাসনের আগেই নাগরিকত্ব চায় রোহিঙ্গারা

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আয়ে বুধবার উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতিবাচক যে বক্তব্য দিয়ে গেছেন তার বিপরীতে উগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে উস্কানিমূলক তৎপরতা শুরু করেছে। জানান দেয়া হচ্ছে নাগরিকত্ব প্রদানসহ তাদের ছয় দফা দাবি মানা না হলে কোন রোহিঙ্গা যেন প্রত্যাবাসনের পথে পা না বাড়ায়। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সাধারণ রোহিঙ্গারা ভীতসন্ত্রস্ত। প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। এদিকে বৃহস্পতিবার টেকনাফে দুদেশের সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, মাদক পাচার, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে উভয় দেশ কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ দ্বারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বুধবার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন সে দেশের কোন মন্ত্রীর এই প্রথম সফর। মন্ত্রী পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। নাগরিকত্ব প্রদানের কথাও বলে গেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া ও সময়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ করে বলে গেছেন, মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রথমে এনভিসি কার্ড নিতে হবে। পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের নাগরিকত্বও প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রী প্রকারান্তরে নিশ্চিত করেছেন, রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের পর রোহিঙ্গাদের আবেদন ছয় মাসের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে। এতে স্পষ্ট হয়েছে মিয়ানমার পক্ষ এখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে ইতিপূর্বেকার চেয়ে অনেক নমনীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে আবার এটাও ঠিক যে, মিয়ানমার অতীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নানা সিদ্ধান্ত দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে মিশ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে প্রত্যাবাসিত হওয়ার পক্ষে থাকলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু সন্ত্রাসী সদস্য ক্যাম্পে ক্যাম্পে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করেছে। কিছু রোহিঙ্গা নেতা দাবি করছেন, প্রত্যাবাসিত হওয়ার আগেই তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বুধবার মিয়ানমার মন্ত্রী তার সফর শেষ করে ক্যাম্প ত্যাগ করার পর পরই প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গারা মুঠোফোনে প্রতিটি ক্যাম্পে বৈঠক করে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে বার্তা প্রেরণ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে উখিয়া-টেকনাফের ১২ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বুধবার সন্ধ্যার পরই গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওসব বৈঠকে আওয়াজ উঠেছে, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এ উস্কানির পেছনে পুরনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ব্যাপক মদদ আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিজিবি-বিজিপি বৈঠক ॥ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাড়ে ১০টায় টেকনাফ স্থলবন্দরের মালঞ্চ রেস্ট হাউসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ আছাদুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০ ও মিয়ানমারের পক্ষে বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের অধিনায়ক (২) লে. কর্নেল লিন টুট মিন্থ এর নেতৃত্বে ১১ সদস্য বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ আছাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা মাদক পাচার বন্ধ রাখা, অবাধে রোহিঙ্গারা যাতে পালিয়ে আসতে না পারে সেজন্য উদ্যোগী ভূমিকা পালন, মিয়ানমার থেকে আসা যে কোন নৌকায় তল্লাশি, অনবধানবশত কোন নৌকা জিরো সীমানা অতিক্রম করলে পতাকা বৈঠক বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান, সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত না নেয়া ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে নিয়মিত বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট) পর্যায়ে বৈঠক, উভয় দেশ সন্ত্রাসী কর্মকা- দ্বারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্কাবস্থার কথা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও মিয়ানমারের বিজিপির পক্ষ থেকে পাকিস্তানের এক সন্ত্রাসী এদেশে অবস্থানের অভিযোগ করলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ এদেশের মাটিতে সুযোগ পাবে না এবং এদেশ থেকে অন্য দেশের ক্ষতি করবে বাংলাদেশ তা কখনও চায় না।
×