জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঐতিহ্যবাহী বৈসাবির আনন্দে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের পাহাড়ী জনপদ। বাংলা নতুন বর্ষবরণ ও পুরাতন বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নানা সাজে সেজেছে এই অঞ্চলগুলো। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণীরা বৈসাবিকে উদ্যাপন করতে নানা ধরনের কর্মসূচীরও উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে উৎসবের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ‘বিজু’ পালন করা হয়।
এদিন জলে ফুল ভাআনোর মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু করা হয়। Ñখবর পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি ও নিজস্ব সংবাদদাতার পাঠানো।
সকল পাপাচার গ্লানি ধুয়ে মুছে নিতে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ের প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ীরা প্রতিবছর এ সময়। দিনব্যাপী এ উৎসব পালন করে থাকে। বৃহস্পতিবার ছিল উৎসবের প্রথম দিন অর্থাৎ ফুল বিজু। খাগড়াছড়ি’র চেঙ্গী নদীতে পাহাড়ী তরুণ-তরুণীরা ভোরে নদীর জলে দেবতাদের উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে পরিবার ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চেঙ্গী নদীর তীরে উৎসবমুখর মানুষের ঢল নামে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা এ সময় নদীতে হৈহল্লা করে একে অপরকে নদীর জলে ভিজিয়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে।
ফুল ভাসানো শেষে তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে। নদীতে ¯œান শেষে বাড়ি গিয়ে গুরুজনকে প্রণাম করে ও বিভিন্ন ফুল দিয়ে বাড়িঘর সাজায়। এরপর বড়রা বাড়িঘর ও আঙ্গিনায় সোনা রুপার পানি দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র পরিষ্কার করে। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায়, গোয়াল ঘরে এবং নদীর ঘাটে সারি সারি মোমবাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে বৈসাবির প্রথম দিনের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
রাঙ্গামাটি ॥ কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে বর্ণাঢ্যভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের গর্জনতলী ও রাজবাড়ি ঘাট এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের জলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নানা বয়সী নারী-পুরুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী রং-বেরঙের পোশাক পরে ফুল ভাসায়। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘাটে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হ্রদের জলে ফুল ভাসিয়েছেন। এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা আদিকাল থেকে বাংলা বর্ষবরণ ও বর্ষ বিদায়কে কেন্দ্র করে তিনদিনে উৎসব পালন করে আসছে।
নানা আয়োজনে ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবান শহরের রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, ১৪ এপ্রিল বিকেলে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ এপ্রিল বিকেলে মৈত্রী পানি বর্ষন, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সবশেষে ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের।
এদিকে প্রতিছরের ন্যায় এবারও নতুন বছরকে বরণ আর পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সাংগ্রাই উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সাংগ্রাই উদ্যাপন কমিটি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর তীরে ঐহিত্যবাহী পোশাকে সেজে পাহাড়ী তরুণ-তরুণীরা সবার মঙ্গল কামনায় কলাপাতায় করে ভক্তি শ্রদ্ধাভরে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরের শুভ কামনা করে।
এছাড়াও শুক্রবার সকালে নতুন বছরে পিঠা ও মিষ্টান্ন পরিবেশন এবং শনিবার সন্ধ্যায় সমগ্র জাতির শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামানোর লক্ষ্যে বৌদ্ধ বিহারে প্রার্থনার মাধ্যমে ইতি টানা হবে তঞ্চঙ্গ্যাদের বৈসাবি উৎসব।