ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ একটি বছর। দীর্ঘ সময়। অথচ মনে হয় এই সেদিন শুরু হলো। শুরু হতে না হতেই শেষ! সময় আসলেই গতির ঘোড়া। উসাইন বোল্টও যেন এর কাছে হার মানেন। বিশ্বসেরা দৌড়বিদকে পেছনে ফেলে সময় এগিয়ে যায় নিজের নিয়মে। পুরনো হয়। একই নিয়মে পুরনো হলো ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। আজ শুক্রবার বছরের সমাপনী দিন ৩০ চৈত্র। বাঙালী নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করবে। বর্ষ বিদায়ের আচারটিই একসময় প্রধান ছিল বলে জানা যায়। তবে এখন বাঙালীত্বের সবচেয়ে বড় প্রকাশ ঘটে পহেলা বৈশাখে। আগামীকাল শনিবার ১ বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। নববর্ষকে নানা আয়োজনে বরণ করে নেবে বাঙালী। সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসবের জন্য প্রস্তুত এখন দেশ। সারা দেশের মতো ঢাকায়ও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যেদিকে চোখ যায়, আনন্দ। উৎসবের রঙ। মার্কেট শপিংমলে গায়ে গা লাগা ভিড়। লোকায়ত জীবনের কাছে ফেরার তাড়া। শহুরে মানুষ বহুকাল আগে ফেলে আসা গাঁয়ের কথা মনে করছেন। এভাবে বৈশাখের আগেই দৃশ্যমান হয়েছে তৃনমূলের সংস্কৃতি। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ছায়ানট। বর্ষবরণের প্রধান আয়োজনে যোগ দেবে সব শ্রেণী পেশার মানুষ। সকালটা শুরু হবে গানে গানে। কবিতায়। তারপরই মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঋষিজ’র অনুষ্ঠান। গোটা শহরেই থাকবে উৎসব অনুষ্ঠান। সারাদিন ধরে চলবে। হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বাণী দিয়ে বিকেল ৫টার মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে আয়োজিত সব অনুষ্ঠান শেষ করতে বলেছিলেন। সেটি মোটামুটি প্রত্যাখ্যান করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। সাধারণ মানুষও বিধিনিষেধ আরোপের অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে। ফলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান লম্বা সময় ধরে চলবে বলেই আশা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহের অন্যতম আলোচনা সমালোচনা সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন। ইস্যুটি পুরনো। প্রতিবন্ধী, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছিল রাষ্ট্র। যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেশ পাওয়া, সেই দেশ বীরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চনার স্বীকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে কোটা সুবিধার আওতায় আনে। কিন্তু এইসব অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না। মানি না। মানব না। আন্দোলন চলে গত কয়েকদিন। ঢাকা প্রায় অচল। প্রথম হামলাটি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। তিনটি গেট ভেঙে ভেতের প্রবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। তারপর ভাংচুর। আগুন দেয়ার ঘটনা। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে আঘাত করার ঘটনাটি আন্দোলনকারীদের ভেতরের অংশটিকে চিনতে সহায়তা করে। পরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় তা-ব চালায়। ঘটনার প্রকৃতি এমন ছিল যে, গা শিউরে ওঠে। আরও একদফা নিশ্চিত হওয়া যায় নেপথ্যে অন্য কেউ। বিপরীতে আন্দোলনকারীরা একের পর গুজব ছড়াতে থাকে। একজন ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও রটানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। নানা ভাব ও ভাষায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অসম্মান করে তারা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ব্যথিত হন। তাদের একজনের ফেসবুক স্ট্যটাসটি এ রকমÑ আর মাত্র কিছুদিন। ক’টা দিন। মুক্তিযোদ্ধারা চির বিদায় নেবেন। কেউ বেঁচে থাকবেন না। হে ‘মেধাবী’ একটু অপেক্ষা করো। সারা জীবন যারা অসম্মানিত হয়েছেন তাদের শেষ জীবনটাকে আর বিষাধময় করে তুলো না। তাঁরা তোমাদের মতো বড় বড় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে ‘মেধাবী’ হওয়ার সুযোগ পাননি। তবে একাত্তরে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় বিপুলভাবে পাশ করেছিলেন। এর বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা কিছু পাননি। বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে যে যার কাজে ফিরে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে সবই তো তোমাদের। নাও। খাও। আরও উদ্যাপন করো জীবন। তবে বীরদের ছোট করতে এসো না। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বলছি, যা হয়েছে, ইনাফ। খুব বুকে লাগছে। তোমরা এখানেই ফুলস্টপ দাও। থামো। তা না হলে সব অভিশাপ গিয়ে পড়বে বাংলাদেশের উপর। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কাপুরুষের হবে। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এরপরও আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা থেকে সরে আসেনি। বরং এমন আচরণ করা হচ্ছিল যা দেখে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাই বলেছেন, বাতিল করুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা। আমরা আমাদের সম্মানটুকু নিয়ে কোন রকমে বাঁচতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন ক্ষুব্ধ। ব্যথিত। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কার নয়, পুরোপুরি বাতিল করার ইচ্ছের কথা জানান। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় কোটা বিরোধী আন্দোলনের ভয়ঙ্কর অধ্যায়। শহর ঢাকা এখন শান্ত। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে আজ শুক্রবার রাজধানীতে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন- ডিএসসিসি। শুক্রবার সকাল ৯টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবনে সমবেত হবেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এরপর সেখান থেকে গোলাপশাহ মাজার হয়ে জিপিও পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কে ঝাড়ু দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ডিসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীতে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। তখন বহু মানুষ ভুগেছেন। এ অবস্থায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং তাদের সচেতন করতে পরিচ্ছন্ন ঢাকা কর্মসূচীটি নেয়া হয়েছে। চৈত্র সংক্রান্তিতে এ কর্মসূচী গ্রহণ করার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই দিনে আমাদের সংস্কৃতি হলো পুরনো জঞ্জাল পরিষ্কার করে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়া। তাই আমরা রাজধানীবাসীও এই দিনে প্রতীকী কর্মসূচী পালন করে সারাদেশের মানুষের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।
×