ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুজবের বলি ছাত্রলীগের সেই নেত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

গুজবের বলি ছাত্রলীগের সেই নেত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গুজবেরই জয় হয়েছে। আর তার বলি হয়েছেন কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা। একই হলের এক ছাত্রীর পায়ের রগ এশা কেটে দিয়েছে বলে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটে যায়। এমন তথ্যের সত্যতা যাচাই বাছাই না করেই কর্তৃপক্ষ এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। এশাকে আজীবনের জন্যও বহিষ্কারের দাবি করে আন্দোলনকারীদের অনেকেই। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় এশাকে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এখানেই শেষ নয়, তাকে হল থেকে জুতার মালা পরিয়ে মারধর করে অপমান অপদস্থ করার পর বের করে দেয়া হয়। অপমান সইতে না পেরে এশা এখন মোবাইল ফোন বন্ধ করে এক আত্মীয়ের বাসায় নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। ইতিপূর্বে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা-ভাংচুর ও যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়া ছাড়াও দেশে মারাত্মক অরাজকতার ঘটনা ঘটানোর ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। এশার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। শুধু এশা নয়, উপাচার্য ভবনে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাতে সুকৌশলে গোপনে মুখে মুখে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। তারই জেরে ভিসির বাসভবনে হামলা হয় বলে জানা গেছে। এশার বিষয়টি তদন্ত করছে ছাত্রলীগ। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এশার বহিষ্কারাদেশ তুলেনি। তদন্তকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, গুজবের নেপথ্যে স্বাধীনতাবিরোধীরা কলকাঠি নেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলছিল। গত ৮ মে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ওইদিন রাতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্র্ষ হয়। তদন্তকারী একাধিক সূত্র বলছে, ওই রাতেই ভিসির বাসভবনে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানোর ক্ষেত্র তৈরি করে স্বাধীনতাবিরোধীরা। স্বাধীনতা বিরোধীরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পরোক্ষ মদদে পুলিশ নির্বিচারে ছাত্রদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে মুখে মুখে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এমন গুজবে কান দেয় অনেকেই। গুজব রটনাকারীরা ছড়িয়ে দেয়, পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর এমন অত্যাচার করলেও ভিসি ছাত্রদের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসছেন না। তার অর্থই হচ্ছে, ভিসি পুলিশকে পরোক্ষভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালানোর জন্য মদদ যোগাচ্ছেন। এমন গুজবের রেশ ধরেই রবিবার রাতে স্বাধীনতা বিরোধীরা ভিসির বাসভবনে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। তাতে না বুঝে অংশ নেয় অনেক আন্দোলনকারী। হামলাকারীরা ভিসির বাসার সব তছনছ করে দেয়। প্রথম পরিকল্পনা সফল হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সভাপতি এশার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। এমন গুজবের পর এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাৎক্ষণিকভাবে স্বাধীনতা বিরোধীরা এশাকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার দাবি করে। দাবিকারীরা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী। অনেকেই না বুঝেই তাতে সর্মথন করে। এমন ঘটনার মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফেসবুকে মিথ্যা গুজবে কান দিয়ে এশাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের পর এশাকে জুতার মালা পরিয়ে, গায়ের কাপড় টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। সেইসব দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। পুরো ঘটনাটিই ছিল পরিকল্পিত। হলের ছাত্রীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মোর্শেদাসহ হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী ছাত্রীরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করে মঙ্গলবার রাতে হলে ফিরেছিলেন। যারা ফিরছিলেন তাদের ডেকে এশা গালিগালাজ করেন। এমন আচরণের পর মোর্শেদা নামের এক ছাত্রী তীব্র প্রতিবাদ করেন। মোর্শেদা রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দরজা বন্ধ থাকায় মোর্শেদা তা লাথি দিয়ে খোলার চেষ্টা করেন। কাচ ভেঙ্গে মোর্শেদার পা কেটে যায়। রাত চারটার দিকে এশা এমন ঘটনার জন্য ছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চান। এরপর ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা এ ঘটনার জেরে এশার ওপর হামলা করে। ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে এশার ওপর হামলাকারী ছাত্রীরা নিজেরা গা বাঁচাতে চায়। তারা সুকৌশলে এশা এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয় ফেসবুকে। এরপরই শুরু হয় ঝড়। তারই ধারাবাহিকতায় এশা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়। পরদিন এশাকে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই তীব্র সমালোচনা চলছে। এমন ঘটনার পর ছাত্রলীগের তরফ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ জানায়, ঘটনাটি চার সদস্যের একটি কমিটি তদন্ত করছে। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন, ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান নুপুর ও নিশীতা ইকবাল নন্দী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। এমন ঘটনার পর এশা মোবাইল ফোন বন্ধ করে অপমানে এক আত্মীয়ের বাসায় নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। ঘটনাটি ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ খতিয়ে দেখছে। শাহবাগ মডেল থানার ওসি আবুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, এশা নির্যাতনের ঘটনায় কেউ কোন মামলা বা অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হবে।
×