ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোটা তুলে নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা;###;কোটা সংস্কারে কাজ শুরু করেছে সরকার;###;প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ;###;প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধিতে ভূষিত করলেন আন্দোলনকারীরা

আন্দোলন স্থগিত ॥ দ্রুত গেজেট প্রকাশ ও মামলা প্রত্যাহার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

আন্দোলন স্থগিত ॥ দ্রুত গেজেট প্রকাশ ও মামলা প্রত্যাহার দাবি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার কথা ঘোষণা করার একদিন পর কিছু দাবি তুলে কর্মসূচী স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। দ্রুত গেজেট প্রকাশ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলে আন্দোলন স্থগিত করলেও তারা দাবি করছেন, ‘আমরা কোটা বাতিল চাইনি, সংস্কার চেয়েছিলাম।’ প্রধানমন্ত্রীকে তারা ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধিতেও ভূষিত করেছেন। এদিকে সংস্কারের দাবি তুলে শিক্ষার্থীদের সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। সংস্কারের দাবি তোলা বহু বুদ্ধিজীবীও নাকি এবার বলা শুরু করেছেন কোটা বাতিল চাননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, কোটা পদ্ধতির সংস্কারে কীভাবে কাজ এগোবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে তারা। সরকারী চাকরিতে কোটাই তুলে দেয়া হবে- বুুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর পরই রাজপথ ছেড়েছিলেন কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে নানা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। টানা চারদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে তা-ব, সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজপথ দখল করে অচলাবস্থা সৃষ্টির পর তারা হলে ফিরলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে। ঘোষণা অনুসারে কয়েকটি দাবি রেখে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছের তারা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন স্থগিতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণ সমাজের প্রাণের দাবি মেনে নিয়েছেন। আমরা আমাদের কর্মসূচী প্রজ্ঞাপন জারি করা পর্যন্ত স্থগিত করলাম। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর লিখিত বক্তব্যে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। বিভিন্ন দাবি তুলে আন্দোলনকারীরা বলেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। গত কয়েক দিনের কর্মূসচীর মধ্যে গ্রেফতার আন্দোলনকারীদের সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ-ভাংচুরের ঘটনায় যেসব মামলা করেছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। ‘পুলিশী নির্যাতনে’ আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করতে হবে। আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের যাতে পরবর্তীতে কোনভাবে হয়রানি করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নুরুল হক নূর বলেন, কোন রকম হয়রানি করা হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আবার আন্দোলন শুরু করা হবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে এই আন্দোলনে সহমত পোষণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ধন্যবাদ জানান আন্দোলনকারীরা। হাসান আল মামুন, নুরুল হক নূর ছাড়াও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রাশেদ খান ও মোঃ ফারুক হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। নূরুল হক নূর আরও বলেন, আমরা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদার অব এডুকেশন উপাধিতে ভূষিত করলাম। দেশরতœ শেখ হাসিনা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরাও বলছি, আমরা আপনার পাশে আছি, পাশে থাকব। ফারুক হাসান বলেন, ছাত্র সমাজের মধ্যে কোটা বাতিল নিয়ে কিছু কনফিউশন কাজ করছে। সেগুলো দূর করার জন্য গেজেট প্রকাশ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যান। সেখান থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিথ্যা তথ্য আর গুজব নির্ভর একটি বিভ্রান্তিকর আন্দোলন ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া গুজবগুলো নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে মিডিয়া ও সমাজকে। আন্দোলনের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর বেশি নির্ভর করেছে মানুষ। গণমাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর এই নির্ভরশীলতার কারণেই নতুন নতুন গুজবে ভর করে এগিয়ে গেছে আন্দোলন। গুজবের শুরু হয়েছিল রবিবারই। শাহবাগ ঘিরে যখন এই আন্দোলন চলছে তখন পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলন পথ করে দেয়। এদিন রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যায়, পুলিশের হামলায় নিহত হয়েছে এক যুবক। এবি সিদ্দিক শাওন নামের ছেলেটি হালকা আহত অবস্থায় হলে ফিরে জানতে পারে, তার মৃত্যুর কারণে নতুন করে শুরু হয়েছে আন্দোলন। এরপর নিজ ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে মৃত্যু হয়নি বলে পোস্ট দেন শাওন নিজে। কিন্তু তারপরও ফেসবুকে চলতে থাকে অপপ্রচার। যে ব্যক্তি মারা গেছে তার নিজের পোস্ট দেয়া সত্যেও জাকিরস বিসিএস স্পেশালসহ আন্দোলনকারীদের বেশকিছু ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ থেকে জানানো হয়, এখনও নিশ্চিত নয় ব্যক্তিটি মারা গেছে কিনা। উল্টো ছেলেটি মারা যায়নি বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু রাতের মধ্যেই যখন নিশ্চিত হয় কেউ মারা যায়নি। তখন আন্দোলন আবার দুর্বল হয়ে পরে। দ্বিতীয় গুজব ছড়ানো হয় সোমবার। এদিন জানানো হয়, পুলিশ ও ছাত্রলীগ একত্রে হামলা চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে অহিংস আন্দোলন কিছুটা সহিংস রূপ নেয়। জামায়াত-শিবিরের ফেসবুক পেজ বাঁশেরকেল্লা, এনালাইসিসবিডি অপপ্রচার চালায়, ‘ঢাবিতে ছাত্রলীগের গোপন বৈঠক’ অস্ত্র প্রস্তুতি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এ্যাকশনে যাচ্ছে ছাত্রলীগ! অথচ জানা যায়, পুলিশ বা ছাত্রলীগ কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেনি সোমবার। রবিবার রাতের পর আন্দোলনকারীরা শাহবাগের পরিবর্তে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ওপর আর কোন হামলা হয়নি। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্র আহত হওয়ার খবরও মেলেনি। মঙ্গলবার রাতে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তার ফল হিসেবে অকারণে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে একজন নারীকে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে মিলে সেই নারীকে হয়রানি করে। অথচ বিষয়টি জামাায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রিক ফেসবুক পেজের নেহায়েত গুজব ছাড়া আর কিছু ছিল না। এ কাজে সক্রিয় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সক্রিয় সরকারবিরোধী উগ্রবাদী ছাত্র ও ছাত্রীদের হলে সক্রিয় জামায়াতী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মেয়েরা। এ গুজব ছড়ানোতে ছিল বাঁশেরকেল্লার অনবদ্য অবদান। ফেসবুক পেজটি তাদের নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল থেকে ভিত্তিহীন সংবাদ শেয়ার করে যার শিরোনাম ‘মধ্যরাতে উত্তপ্ত ঢাবি : ছাত্রীর রগ কাটল ছাত্রলীগ (ভিডিও)। সুফিয়া কামাল হলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী মুর্শিদা আক্তার আহত হওয়ার পর তার বক্তব্য ছাড়াই গুজব ছড়ানো হয়, ‘সুফিয়া হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফত জাহান এশা আন্দোলনকারী মুর্শিদা আক্তারের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ‘রগ কাটা’ শব্দটির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক সকলেই জানে। ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনার পর ওই রাতেই তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হয়রানি করা হয় এবং এ ক্ষেত্রেও মিডিয়ার ওপর দোষ চাপানো হয়, তারা ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করছে না। দায়িত্বশীল মিডিয়াগুলোর দিকে এক নজর তাকালেই বোঝা যায়, ছাত্রলীগ নেত্রীর এই সংবাদে মিডিয়াগুলো বিচলিত এবং সেই নারী নেত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের সংবাদটি বড় করে ছাপা হয়েছে অধিকাংশ মিডিয়ার অনলাইনে। কিন্তু প্রিন্ট পত্রিকায় তা বড় স্থান দখল করতে পারেনি। কেননা এরই মাঝে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, নেহায়েত গুজবের মাধ্যমে এক নারীকে হয়রানি করা হয়েছে। গুজবের উপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে উঠেছিল আন্দোলনকারীরা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নিজ দলের সক্রিয় একজন নেত্রীর বিষয়ে জামায়াতী গুজবেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কোন কিছু বাছাই না করেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেনই বা নির্যাতনের শিকার নেত্রীকে আরেক দফা হয়রানি করেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাজনীতি এখন গণমাধ্যমে নেই, চলে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকের গুজব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বলেন, ভায়োলেন্স এগেইনস্ট ভায়োলেন্স কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফেসবুকে, মুখে মুখে গুজব এলো একটি মেয়েকে অন্য একটি মেয়ে পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এর ফলে ওই মেয়েকে সবাই মিলে ধরে জুতার মালা পরিয়ে দিল। এগুলো ঠিক নয়। নিরীহ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হবে নাÑ ঢাবি উপাচার্য ॥ বাসভবনে হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা চার মামলায় কোন নিরীহ শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বলেন, যারা আসলেই বাসভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি পেতেই হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আইন আইনের গতিতে চলবে, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। যারা জড়িত তাদের শাস্তি পেতেই হবে। কেউ রেহাই পাবে না। তিনি বলেন, ঢাবি পরিবার বিশ্বাস করে না বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে যদি সত্যিই এ রকম কেউ জড়িত থাকে, তবে তা আমাদের জন্য লজ্জার। জড়িত থাকলে তাকে বা তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র যদি এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে এটি গোটা জাতির জন্য লজ্জার। তিনি আরও বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি, নিরীহ কোন শিক্ষার্থীকে যেন সন্দেহের ভিত্তিতে হয়রানি করা না হয়। তদন্ত করে আসলেই যারা জড়িত কেবল তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কোন ধরনের গুজবে কান না দেয়ার জন্য ঢাবির শিক্ষার্থীদের এ সময় আহ্বান জানান তিনি। হতাশ ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতিবাদ ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক প্রশাসন গড়ার স্বার্থে সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের বীরদের সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্পেশাল নিয়োগের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি দেয়ারও দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হওয়ার নয়। অথচ ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অস্ত্র জমা দিয়ে যার যার ঘরে ফিরেছিলেন যারা, তাদের বহুকাল ভুলে ছিল বাংলাদেশ। বীরদের অমর্যাদা করার কারণ আজ দেশে একটি ভীরু নপুংশক প্রজন্ম সৃষ্টি হচ্ছে। অতিসম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের আরেক দফা অসম্মান করেছেন। এর প্রেক্ষিতে সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে এই কোটা সুবিধা বহাল রাখা জরুরী। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা একটি অসাম্প্রদায়িক জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন স্বাধীনতা বিরোধীমুক্ত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সরকারী কোটা থাকলেও এই কোটায় যোগ্যতার দোহাই দিয়ে ইচ্ছাপূর্বক তাদের মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রিলিমিনারি, লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার আর কি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে? মৌখিক পরীক্ষা কখনোই যোগ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র মানদ- হতে পারে না। বার বার বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যায় না। অথচ এখনও বহু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেকার সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতিনিধিত্বকারী আরেক সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আমরা জানি জাতির জনকের পর তার কন্যাই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক। দেশে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই নিয়েছেন। তবে, আমরা চাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মান জাতির জনক দিয়েছেন তার স্মৃতিচিহ্নটি যেন তাঁরই কন্যার হাত দিয়ে নষ্ট না হয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাদের বিমুখ করবেন না। তারা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল না করা হলে ৭১-এর পরাজিত শক্তির দল জয়ী হবে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান-অপদস্ত করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার ফলে তারা আজ উল্লাসে মেতে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের নীল নক্সা বাস্তবায়ন হতে চলেছে। পাশাপাশি কোটা নিয়ে যারা গুজব ছড়িয়েছেন ও ভিসির বাসভবনে হামলা করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সমাবেশ করবে। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ॥ কোটা পদ্ধতির সংস্কার বা বাতিল ইস্যুতে সরকার কীভাবে কাজ এগোবে সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের সচিব। জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ মোজাম্মেল হক খান বৃহস্পতিবার তার দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো শুনেছি। তিনি কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করেছেন, আবার তিনি প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যাতে স্বার্থ সংরক্ষিত হয় সে বিষয়ে পৃথক ব্যবস্থা নেবেন সে আশ্বাসও দিয়েছেন। আমি এখন অপেক্ষায় আছি প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেভাবে অগ্রসর হতে বলবেন আমি সেভাবে বাকি কাজ করব। সব কোটা বাতিল হবে কি না- এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল বলেন, সেটা যখন প্রজ্ঞাপন জারি করব তখন আরও বিশ্লেষণ করে সেগুলো স্পষ্ট করব। সেগুলো সরকার প্রধানের কাছ থেকে সুস্পষ্ট পরামর্শ, নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রজ্ঞাপন কবে হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, এটা খুব জরুরী না এখন, কারণ এখন তো নিয়োগ হয়ে যাচ্ছে না। কাজেই আমরা যদি একটু সময় নিই, তাহলে দেশের কোন ক্ষতি হবে না। আন্দোলন যেভাবে হয়েছিল, তাতে ৭ মে পর্যন্ত আল্টিমেটাম ছিল, তারপরেও আবার নতুন করে আন্দোলন করেছে। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন ঘোষণা দেয়াটা জরুরী, তাই দিয়েছেন। আমি মনে করি, পরবর্তী কাজ এখন আমাদের নির্দেশনার অপেক্ষা, সেটা হলেই আমরা করে ফেলব। শুধু বিসিএস চাকরি, নাকি সব কোটা বাতিল হচ্ছে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, সকল প্রকার নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে এ কথা বলি যে, আরও ছোট ছোট দফতর, টেকনিক্যাল অনেক পদ আছে সেগুলোর সঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না, এগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থান সংসদে তুলে ধরার পর কোটা পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর সার্কুলার জারি করে কোটা সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপরই কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে শীঘ্রই ওই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
×