ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত বোরো ক্ষেত ॥ দিশেহারা কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১২ এপ্রিল ২০১৮

নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত বোরো ক্ষেত ॥ দিশেহারা কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ, ১১ এপ্রিল ॥ ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ও ভায়াবহসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট দেখা দেয়ায় কৃষকরা চরম হতাশায় ভুগছে। উপজেলার মল্লিকবাড়ী ও ভায়াবহ গ্রামে বোরো ধানে নেক ব্লাষ্ট রোগের আক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করায় ধান মরে চিটা হওয়ায় অনেক কৃষক এখন সর্বস্বান্ত। অনেকেই শেষ চেষ্টা করতে ছুটছেন কীটনাশকের দোকানে। সরেজমিন মল্লিকবাড়ী ও ভায়াবহ গ্রামে গেলে ভায়াবহ গ্রামের কৃষক মঞ্জুর মিয়া জানান, তার ৩ একর জমির সম্পূর্ণ ধান মরে চিটা হয়ে গেছে, কয়েকবার ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হয়নি, এ বছর এক ছটাক ধানও তিনি ঘরে তুলতে পারবেন না। তার পাশে খসরু মিয়ার এক একর জমি আক্রান্ত হয়েছে। মল্লিকবাড়ী বাজারসংলগ্ন নদীর পূর্ব পাড়ে মাহাম্মদ আলীর প্রায় ৪ একর জমিতে মহামারি আকারে নেক ব্লাস্ট দেখা দেয়ায় ক্ষেতের ৮০% ধান মরে সাদা চিটা হয়ে গেছে। মল্লিকবাড়ী বাজারে এক দোকানে কীটনাশক কিনতে আসা ওই গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন জানান, তিনি ২২ কাঠা জমিতে ব্রি ধান ২৮ জাতের আবাদ করেছেন। তার ধান পাকা শুরু হওয়ার পর নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অর্ধেক জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকিটুকু ফেরাতে তিনি দোকান থেকে ১ হাজার ২ শ টাকার ওষুধ নিয়েছেন, তিনিসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন কৃষি বিভাগের কারও সঙ্গে এ পর্যন্ত তাদের দেখা মেলেনি। ভায়াবহ গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, তার প্রায় ২ একর জমিতে ব্রি ধান ২৮ জাতের আবাদ করেছেন। গাছ দেখে মনে হয়েছিল ফলন ভাল হবে কিন্তু হঠাৎ করে এই রোগ দেখা দেয়ায় ধান মরে শেষ হয়ে গেছে। তিনি ৫ বার কীটনাশক স্প্রে করেও কোন সুফল পাননি বলে জানান। মল্লিকবাড়ী গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ২০ কাঠা, মেহের আলীর ২ একরসহ বহু কৃষকের শত শত মণ ধানের ক্ষেত নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে তারা এখন সর্বস্বান্ত। অপরদিকে ওই দোকানে ওষুধ নিতে আসা মল্লিকবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, তিনি ১৫ কাঠা জমিতে ব্রি ধান ২৮ জাতের বোরো আবাদ করেছেন। তিনি জমিতে সেমকো কোম্পানির সেলটিমার সঙ্গে কাপ ও জিঙ্ক স্প্রে করেছেন মোট ৩ বার। চতুর্থ বারের জন্য তিনি সেলটিমা কিনে নিয়েছেন। তিনি জানান, সেলটিমা ব্যবহার করায় তার জমি নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়নি। ওই গ্রামের আবদুল হাই ৪ একর, আশ্রাব উদ্দীন নায়েবের প্রায় ৩ একর, ভায়াবহ দক্ষিণ পাড়ার আব্দুস সালাম ১ একর জমিতে সেলটিমা স্প্রে করে নেক ব্লাস্ট হতে ধান রক্ষায় উপকৃত হয়েছেন। এ ছাড়াও উপজেলার মল্লিকবাড়ীর লোহাবৈ, ডাকাতিয়ার পাঁচগাঁও, ছিটালপাড়া, হবিরবাড়ীর পাড়াগাঁও গ্রামে কোন কোন কৃষকের বোরো ক্ষেতে এই রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার ভালুকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কয়েকটি ইউনিয়নে নেক ব্লাস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল জানান, নেক ব্লাস্ট ব্যাপক হারে দেখা দেয়নি তবে কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে নদীর পাড়ের যে সকল জমিতে মিল ফ্যাক্টরির কালো বর্জ্য পানি নামে সেসব জমিতে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তারা এ বিষয়ে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
×