ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে এনজিও উধাও

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১২ এপ্রিল ২০১৮

গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে এনজিও উধাও

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চৌগাছায় রূপান্তর বহুমুখী সমবায় সমিতি নামে একটি স্থানীয় এনজিও প্রতারণা করে গ্রাহকের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে। প্রতারক চক্রটি উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের ধর্মীয় সংখ্যালঘু (হিন্দু) এলাকা রানিয়ালি, দুড়িয়ালি, হাউলি, মালিগাতি ও সুরেশ্বরকাঠিসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২শ’ সনাতন ধর্মাবলম্বী (সংখ্যালঘু) পরিবারকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চৌগাছা প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। একই চক্র হাউলি গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফার নিকট থেকে ব্যবসার উদ্দেশে ১৯ লাখ পাঁচ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুক্তার আলী ওই চক্রের হোতা সৈয়দ আলী ও নবাব আলীর নামে ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের মালিগাতি বাজারে ২০১১ সালে একটি অফিস ভাড়া নিয়ে রূপান্তর বহুমুখী সমবায় সমিতি নামে একটি এনজিও যার রেজিঃ নং-১০৯ ঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করে প্রতারক চক্রটি। এনজিওর মালিক হাউলি গ্রামের মৃত নুর আলীর ছেলে সৈয়দ আলী এবং তার ভাইকে নবাব আলীকে সংস্থাটির সভাপতি সাজিয়ে গ্রামগুলোর সহজ-সরল মহিলাদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের নামে ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬শ টাকা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে এনজিওটি তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়ী গ্রাহকদের টাকা দেয়া হবে বলা হলেও দেয়া হচ্ছে না। প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নিকট বার বার অভিযোগ করে চলেছেন। সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শনকালে গ্রাহকরা বলেছেন এনজিওটির মালিকপক্ষ কৌশলে প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশে মহিলা সদস্যদের নিকট থেকে বই নিয়ে নিয়েছে। পরিদর্শনকালে সুরেশ্বরকাঠি গ্রামের দশরথ বিশ্বাসের স্ত্রী মিরা রানী বিশ্বাস, রবিন শিলের স্ত্রী শিল্পী রানী শিল, অলক শিলের স্ত্রী বিথিকা রানী শিল, পরান শিলের স্ত্রী শিউলি রানী শিল, প্রবান বিশ্বাসের স্ত্রী লক্ষী রানী বিশ্বাস, তাপস শিলের স্ত্রী সাধনা রানী শিল, কোমল শিলের স্ত্রী সরমা রানী শিল, সাধন কুমার বিশ্বাসের স্ত্রী বিথি রানী বিশ্বাস বলেন তারা রূপান্তর নামক এনজিওটির নিকট থেকে তাদের সঞ্চয়কৃত অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না। গ্রাহকদের একেকজন ৫ হাজার, ২ হাজার তিনশত, চৌদ্দশত এমনিভাবে একেকজন একেক অঙ্কের টাকা পাবেন সংস্থাটির নিকট। এছাড়া গত বছর দুর্গাপূজার সময় টাকা দিয়ে দেয়া হবে বলে তাদের কাছ থেকে পাস বই হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করছে রানীয়ালী গ্রামের অসিম তরফদারের স্ত্রী অঞ্জলী রানী তরফদার, ইন্দ্রভূষণের স্ত্রী ভক্তি রানী ও চিরনজিৎ ম-লের স্ত্রী দুলালী ম-ল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির স্থানীয় নেতা বলাই তরফদার ও রবিন প্রাামাণিক বলেন, প্রতারক চক্রটি এলাকার সনাতন ধর্মীয় (সংখ্যালঘু) প্রায় ৫শটি পরিবারের নিকট থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও বিষয়টি প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বাগেরহাট স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, ‘চলন্তিকা যুব সোসাইটি’ নামে এনজিও গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। ফলে এ এনজিওতে আমানতকারী হাজারও সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বুধবার রামপাল এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা গ্রাহক উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুষার কুমার পাল ও রামপাল থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমানের নিকট অভিযোগ জানিয়েছেন। তারা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছেন। জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে সদর ও রামপাল উপজেলা ফয়লাহাট বাজার ও গিলাতলা বাজারে তিনটি শাখার মাধ্যমে চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামে একটি এনজিও তাদের কার্যক্রম শুরু করে। অধিক লাভ দেয়ার প্রতিশ্রিুতি দেয়ায় খুব দ্রুত সাধারণ লোকজন এ সংস্থায় ভিড়তে থাকেন। ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ৩ বছর ও ৬ বছর মেয়াদের ডিপিএস কার্যক্রম শুরু করে। ১২ বছর পর গত রবিবার ৮এপ্রিল থেকে অফিস তালাবদ্ধ করে সকলে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এনজিওটি কীভাবে এত বড় ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বা তাদের এনজিও ব্যুরোর কোন অনুমোদন আছে কী না, সংশ্লিষ্ট সবার মোবাইল বন্ধ থাকায় তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত রোমানা পারভিন ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পিযুস কান্তি জানান, এনজিওটি হাজার হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকে লাভের আশায় আমানত করে এখন সর্বস্বান্ত। মানুষের জনরোষে ইতোমধ্যে সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গা-ঢাকা দিয়েছে।
×