ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বার্সিলোনার বিদায়

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১২ এপ্রিল ২০১৮

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বার্সিলোনার বিদায়

গোলাম মোস্তফা ॥ গত মৌসুমে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিল বার্সিলোনা। ব্যর্থতার সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে আরও আগেই কোপা ডেল’রের ফাইনালের টিকেট কেটে ফেলেছে বার্সিলোনা। স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধারেরও খুব কাছাকাছি তারা। আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রোমাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে এবারও ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন দেখছিল কাতালান ক্লাবটি। কিন্তু কাতালানদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল ইতালির ক্লাব রোমা। ন্যুক্যাম্পে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ আটের প্রথম লেগে ৪-১ গোলে পিছিয়ে থাকা রোমা মঙ্গলবার দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত করে বার্সিলোনাকে। এর ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ফলাফল দাঁড়ায় ৪-৪। কিন্তু এ্যাওয়ে গোলের সৌজন্যে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় ইতালিয়ান সিরি’এ লীগের দল রোমা। ফুটবল সত্যিই রোমাঞ্চকর। তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। তা না হলে ৪-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরও কি ৩-০ ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে বার্সিলোনা। তাও আবার লিওনেল মেসি-লুইস সুয়ারেজ-আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাদের মতো তারকানির্ভর দল। অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে। কেননা কাতালানদের অভিজ্ঞ এই তিন সেনানীর সঙ্গে এদিন দলে ছিলেন পিকে, সার্জি, আলবা, উমতিতি, বুসকুয়েটস কিংবা রাকিটিচও। কিন্তু স্বাগতিকদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের কাছে এদিন ভালভার্দের শিষ্যরা ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। মেসি-সুয়ারেজ-ইনিয়েস্তাদের ব্যর্থতার দিনে স্ট্যাডিও অলিম্পিকোতে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন রোমার খেলোয়াড়রা। গত সপ্তাহে বার্সিলোনার মাঠে মানোলাস ও ডি রোসির আত্মঘাতী গোলে রোমা ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছিল। তারই প্রতিদান হয়তো দিলেন এই দুই রোমা তারকা। ম্যাচ শেষের আট মিনিট আগে দুর্দান্ত হেডে গ্রীস ডিফেন্ডার মানোলাসের গোলে রোমা যখন ম্যাচে সমতা ফেরায় তখন পুরো স্টেডিয়াম যেন উল্লাসে ফেটে পড়ছিল। সতীর্থদের উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ডাগআউটে কোচ ইউসেবিও ডি ফ্রান্সেসকোকে তখন মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর এই গোলেই হতবাক হয়ে যায় পুরো বার্সা শিবির। প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগের শুরু থেকেও দারুণ আগ্রাসী ছিল রোমা। তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের শুরুতেই স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন জিকো। ডি রোসির দারুণ পাসে কোন ভুল করেননি জিকো। ৫৮ মিনিটে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করে রোমা। জেরার্ড পিকে ডি বক্সের ভিতর জিকোকে ফাউলের অপরাধে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে রোমাকে আবারও এগিয়ে দেন ডি রোসি। এই গোলের পরেই মূলত রোমা সমর্থকরা বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়ে তোলে। আর এতেই বার্সা শিবির আরও বেশি চাপে পড়ে। ৬৯ মিনিটে ডি রোসির একটি হেড গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। ১০ মিনিট পরে স্টিফেন এল শারাভির শট অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন টার স্টেগান। ৮২ মিনিটে আলেক্সান্ডার কোলারোভের কর্নার থেকে মানোলাসের হেড আটকানোর সাধ্য ছিল না বার্সা গোলরক্ষকের। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই ৩-০ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রোমা। রোমার কাছে হেরে উয়েফা কাপ কিংবা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে লজ্জাজনক এক রেকর্ডও গড়েছে আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। প্রথম লেগে অন্তত ৩ গোলে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় লেগে হেরে টুর্নামেন্টের নকআউট পর্ব থেকে প্রথম দল হিসেবে বিদায় নেয়ার নজির গড়েছে বার্সিলোনা। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার রোমার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে তিনটি গোল হজম করে মেসি-ইনিয়েস্তারা। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এর আগের ১০ ম্যাচে সবমিলিয়ে মাত্র তিনবারই বার্সার জালে বল জড়াতে পেরেছিল প্রতিপক্ষ। অন্যদিকে বার্সাকে বিদায় করে ইতিহাস গড়েছে রোমা। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালের টিকেট কেটেছে তারা। শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে নকআউটপর্বে তৃতীয় দল হিসেবে প্রথম লেগে ৩ কিংবা তারও বেশি গোল হজম করে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় লেগ জিতে পরবর্তী রাউন্ডে জায়গা করে নেয় রোমা। তাদের আগে এই রেকর্ড আছে কেবল দুটি দলের। ২০০৩-০৪ মৌসুমে মিলানের বিপক্ষে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিল দেপোর্তিভো। আর গত মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ানের দল পিএসজিকে বিদায় করে এই রেকর্ড গড়েছিল বার্সিলোনাও। রোমার কাছে হেরে বিদায়ের পর বার্সার কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে বলেন, ‘এই পরাজয়ের পুরো দায়ভার আমার। আমি দল সাজিয়েছি, তাদের প্রস্তুত করেছি। আমরা জিতি বা হারি, গত সপ্তাহের একই দল নিয়ে আমি মাঠে নামতাম। তারপরও বলতে হয় এই পরাজয় হতাশার। সবকিছু ভুলে আমরা সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করব। এখন আমাদের অবশ্যই এই ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আরও প্রতিযোগিতা আছে, আমাদের উচিত সেগুলো জয় করা। কারণ এখনও আমরা কিছুই জিততে পারিনি।’
×