ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঙ্গির বাম্পার ফলনে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১২ এপ্রিল ২০১৮

বাঙ্গির বাম্পার ফলনে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরে বাঙ্গির বাম্পার ফলন হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এখানকার উৎপাদিত বাঙ্গি সুস্বাদু ও বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি মৌসুমি এই কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় বাঙ্গি চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের শত শত কৃষক আগাম বাঙ্গি চাষ করে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে আশানুরূপ অর্থ উপার্জন করছে। প্রতিবছর এখানকার আগাম বাঙ্গি ফলন ভাল হওয়ায় এবং বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষীরা আগাম বাঙ্গি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরের ভয়াবহ বন্যায় মাদারীপুরের কয়েক শ’ হেক্টর আবাদী জমিতে বালুরস্তর পড়ায় কৃষকদের জীবনে নেমে আসে এক ভয়াবহ বিপর্যয়। অনাবাদী হয়ে পড়ে শত শত হেক্টর জমি। বালু অপসারণ করে কৃষকদের ভাগ্যের চাকা বদলে দিতে শুরু করে আগাম বাঙ্গি চাষ। প্রতিবছর বাঙ্গি চাষে সফলতা আসতে শুরু করায় এ চাষে আবাদী জমির পরিমাণ ও কৃষকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বাঙ্গি চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষক। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৪ উপজেলায় এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হয়। এর মধ্যে রাজৈরে ৪৩ হেক্টর জমি। এই ৪৩ হেক্টরের মধ্যে ৩৫ হেক্টরই বাজিতপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের সুতারকান্দি, গঙ্গাবদ্দী, নয়াকান্দি ও কোদালিয়া গ্রামের শতাধিক কৃষক আগাম বাঙ্গি চাষ করে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করছে। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম বাঙ্গি চাষ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর বৃষ্টিপাতের কারণে বাঙ্গি চাষে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অন্যান্য বছর অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু করে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে আগাম বাঙ্গি চাষাবাদের কাজ সম্পন্ন হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাঙ্গি ফসল উঠতে শুরু করে। বাঙ্গি উত্তোলনের কাজ চলবে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। ৫২ শতকের প্রতি বিঘায় বাঙ্গি চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৫/২০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকা মাকড়ের বালাই না থাকায় এ বছর বাঙ্গির ফলন খুবই ভাল হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। আগাম বাঙ্গি ফসলে বিঘাপ্রতি প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা আয় হবে কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে। ভাল ফলনের জন্য জমিতে নিয়মিত পানি, ডিআইবি সার, টিএসপি ও পটাশ সার এবং পোকামাকড় মারার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়েছে। এ অঞ্চলের একই জমিতে বাঙ্গিসহ তিন ফসল উৎপাদন হওয়ায় মানুষ নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সুতারকান্দি, নয়াকান্দি ও গঙ্গাবদ্দী গ্রামের বাঙ্গি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে আসছে। এখানকার বাঙ্গি পাকানোর জন্যও কোন প্রকার ওষুধ বা কৃত্রিম কোন কিছু ব্যবহার করা হয় না বলে জানা গেছে। এখানকার বাঙ্গি বেশ সুস্বাদু। বাঙ্গি ফসল ওঠায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতশত কৃষক তাদের উৎপাদিত বাঙ্গি বিক্রি করছে। বাজিতপুরের সুতারকান্দি গ্রামের আব্দুল আলিম ফকির জানান, তিনি ৫২ শতকের ৭ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। তার প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি লাভ হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এ বছর তার জমিতে যে ফলন হয়েছে বিগত ১৫ বছরেও তা হয়নি বলে তিনি জানান। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি এলাকায় বাঙ্গি চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটানোর জন্য ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত কৃষি লোন দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এ এলাকার বাঙ্গি চাষী কালু ফকির জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আগাম বাঙ্গি চাষ করেছেন। প্রতিবিঘায় তিনি ৭০ হাজার টাকা লাভবান হবে বলে তিনি জানান। এখানকার বাঙ্গি প্রতিদিন তারা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশের সুতারকান্দি চাতাল এলাকায় বাঙ্গি হাটে বেচা কেনা করে থাকেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বাঙ্গি কিনে নিয়ে বিক্রি করছে। সারাদিন তারা মহাসড়কের পাশে বসে বাঙ্গি বিক্রি করে থাকে। পুরো এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলবে বাঙ্গি উৎপাদন ও বিক্রির কাজ। ৃসুতারকান্দি গ্রামের চুন্নু ফকির জানান, তিনি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। ফলন খুবই ভাল হয়েছে। এত ভাল ফলন এক যুগেও পাননি বলে তিনি জানান। অন্যান্য বছরের চেয়ে দামও ভাল। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ চন্দ্র বোস জানান, তিনি বাঙ্গি চাষে সফলতা আনার জন্য সার্বক্ষণিক কৃষকদের সকল প্রকার পরামর্শ দান করে যাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে এ বছর বাঙ্গি চাষ কিছুটা বিলম্ব হলেও পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহ যুগিয়েছেন। রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, বাঙ্গি একটি অর্থকারী ফসল। আগাম বাঙ্গি চাষ করে রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নের কৃষকরা ক্রমশ লাভবান হচ্ছেন। বাঙ্গি উৎপাদনে এবং পোকামাকড় দমনে কৃষকদের মাঝে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় কৃষকরা বিষমুক্ত বাঙ্গি উৎপাদন করতে সফল হয়েছে। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিএমএ গফুর জানান, জেলায় এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শিবচর উপজেলায় ২০ হেক্টর, রাজৈরে ৪৩ হেক্টর, কালকিনিতে ৫ হেক্টর ও মাদারীপুর সদর উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি আবাদ করা হয়েছে। রাজৈর উপজেলায় যে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে, তা সবই আগাম বাঙ্গি। বাঙ্গি চাষের জন্য রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। আগাম বাঙ্গি একটি লাভজনক অর্থকারী ফসল হওয়ায় আবাদী জমি ও কৃষকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
×