ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের নদনদীর দুই-তৃতীয়াংশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে

ওষুধ উপকরণ দায়ী ॥ পরিবেশ দূষণ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ এপ্রিল ২০১৮

ওষুধ উপকরণ দায়ী ॥ পরিবেশ দূষণ

পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ ওষুধ উপকরণ। ওষুধজাত সামগ্রী পরিবেশের সঙ্গে মিশে মাটি ও পানি দূষিত করছে। যে মাত্রায় এসব উপকরণ ছড়িয়ে পড়েছে তা বন্যপ্রাণী ও নদনদীগুলোর জন্য বড় হুমকি। ওষুধ সেবনের পর মানববর্জ্যরে মাধ্যমে ওষুধের রাসায়নিক উপাদান শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ছে মহাসাগরে। -গার্ডিয়ান। ওষুধ সামগ্রী ও উপকরণগুলো অসচেতনভাবে এখানে সেখানে ফেলে দেয়ার ফলে বিভিন্ন দেশে নদ-নদীগুলোর প্রবাহে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন ওষুধ বর্জ্য বহু জায়গায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ আটকে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের নদনদীর দুই-তৃতীয়াংশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়তে পারে। মঙ্গলবার ভিয়েনায় ইউরোপিয়ান জিয়োসায়েন্সেস ইউনিয়নের সম্মেলনে এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের ডেলফটে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার এডুকেশনের গবেষক ফ্রান্সিসকো ব্রেগোলি বলেন, ‘সুপেয় পানির উৎস নদনদীগুলোর একটি বড় অংশ এখন ওষুধ পণ্যের জন্য হুমকির মুখে পড়েছে। ওষুধবর্জ্য শনাক্তকরণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষকদের যে টিম কাজ করে যাচ্ছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রেগোলি। এ্যানালজেসিক, এ্যান্টিবায়োটিক, এ্যান্টি প্লেটলেট এজেন্ট, হরমোন, সাইক্রিয়াটিক ড্রাগ, এ্যান্টিহিস্টামিনসহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বা এর বর্জ্য এখন প্রকৃতিতে বিপজ্জনক মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে। যে মাত্রায় এ উপাদানগুলোর উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে তা বন্যপ্রাণীর জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে প্রাণীদের বিশেষ করে মাছের মতো জলজ প্রাণীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। ব্রেগোলি বলছেন ডিক্লোফেনাকের মতো প্রদাহ প্রতিরোধমূলক ওষুধের ফলে নদনদীর প্রতিবেশগত ভারসাম্য সবচেয়ে বেশি নষ্ট হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইইউ এনভায়রনমেন্টাল প্রকেটশন এজেন্সিও ডিক্লোফেনাককে জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিরোধমূলক ওষুধ ব্যবহারের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে শকুনের একটি উপপ্রজাতি বিলুপ্ত হতে বসেছে। ইইউ নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার ডিক্লোফেনাকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি নদীতে। প্রতি লিটারে সহনীয় মাত্রা হলো ১শ’ ন্যানোগ্রাম। ব্রেগোলি বলেন, নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে ডিক্লোফেনাকের মতো হাজার হাজার ওষুধ ও পার্সোনাল কেয়ার আইটেম থেকেও প্রকৃতিতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বে প্রতি বছর ২ হাজার ৪শ’ টন ডিক্লোফেনাক ব্যবহৃত হয়। শত শত টন মানববর্জ্যরে সঙ্গে এগুলো মিশে শেষ পর্যন্ত নদীতে গিয়ে পড়ে। এর ২০ শতাংশ প্রকৃতি শোষণ করে। ৭ শতাংশ পর্যন্ত পানি বিশোধনাগারগুলো-তে প্রক্রিয়াজাত হয়। বাকি পুরোটাই গিয়ে পড়ে মহাসাগরগুলোতে। ব্রেগোলি ও তার টিম এমন একটি কম্পিউটার মডেল উদ্ভাবন করেছেন যেটি জনসংখ্যার ঘনত্ব, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ওষুধ ব্যবহারের মতো মানদ-ের ভিত্তিতে ভবিষ্যত ওষুধ দূষণের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারবে। তারা এরই মধ্যে ডিক্লোফেনাক দূষিত ১৪শ’ স্থানের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বেশির ভাগ ইউরোপ বা উত্তর আমেরিক বা এর আশপাশের এলাকা। ধারণা করা হয়ে থাকে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় দূষণের মাত্রা বেশি। কারণ এসব অঞ্চলে পানি বিশোধনের পর্যাপ্ত প্রযুক্তি নেই। তবে কেবল প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়েই দূষণ রোধ করা যাবে না, ব্রেগোলি মনে করেন সমাধানের প্রক্রিয়া হওয়া চাই টেকসই। সম্মেলনে নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী মারিয়ানা স্ক্রোটালের উপস্থাপিত সমীক্ষায় বলা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দূষণ। বিশ্বজুড়ে নদীনালা দূষণের অন্যতম উৎস পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
×