ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবার বাসে গণধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ এপ্রিল ২০১৮

আবার বাসে গণধর্ষণ

আবার চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অকুস্থল রাজধানীর সন্নিকটে ধামরাই। গণধর্ষণের শিকার একজন পোশাককর্মী রবিবার রাতে কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন বাসায়। পথিমধ্যে সাভারগামী যাত্রীসেবা পরিবহনের একটি বাসে উঠলে এক পর্যায়ে ঘটে গণধর্ষণের ঘটনা। তবে আশার কথা এই যে, টহল পুলিশের ত্বরিত তৎপরতায় বেশ দ্রুতই ধর্ষকদের গ্রেফতার করা গেছে। ধর্ষক ৫ জনক রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। এখন যত দ্রুত সম্ভব ধর্ষকদের বিচার ও চরম শাস্তি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। উল্লেখ্য, গত বছর বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুন না¤œী এক চাকরিজীবী নারী গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন। ওই ঘটনায় মামলার রায়ে খুব দ্রুত নি¤œ আদালত বাসটির চালক ও সহকারীসহ ৪ জনকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। ধর্ষণের সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বাড়ছে দিন দিন। প্রতি মাসে ৫৫ শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ২৬৯টি বেসরকারী সংস্থার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই পরিসংখ্যান। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৭৬ জন শিশু শিকার হয়েছে ধর্ষণের। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৫ শিশুকে। গত বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ১৪৫ শিশু। ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকা জেলায়। আরও যা অবাক ব্যাপার, তা হলো ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে শিশুরাও। কেন এসব হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। এর আপাত কারণ হতে পারে দুর্বল চার্জশীট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি। নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার শিশুরা অসহায় ও দরিদ্র বিধায় অপরাধীরা ক্ষমতাবান হলে মামলার গতি মুখ থুবড়ে পড়ে। যে কারণে আজ পর্যন্ত কোন ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ফলে ধর্ষণের প্রকোপ বেড়েই চলছে। ধর্ষণকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা ঘটছে। আর ঘটনাটি কেবল বিয়ে বা ধর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে। অথবা ধর্ষিতা পরিবার সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করছে। তদুপরি তথাকথিত ফতোয়া বা সামাজিক বিচারের রায়ে ধর্ষকের পরিবর্তে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ধর্ষিতাকে। উৎপীড়িত পরিবারটিকে করা হচ্ছে একঘরে। কোথাও যদি ধর্ষকের শাস্তি হয়ও, তবে তা নামমাত্র। অথচ অসহায় ধর্ষিত মেয়েটিকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় কলঙ্কের বোঝা। আরও যা ট্র্যাজেডি তা হলো ধর্ষণ, নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনা অনেক সময় আসে না গণমাধ্যমে। পরিবারের মান-সম্মান, মেয়েটির সম্ভ্রম, সামাজিকতা ও লোকলজ্জার ভয়ে চেপে যাওয়া হয় অথবা দেয়া হয় ধামাচাপা। গত বছর সর্বাধিক আলোচিত ছিল সোহাগী জাহান তনুর ঘটনা। ২৩ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকায় ঝোপের মধ্যে পাওয়া যায় তনুর লাশ। আজ পর্যন্ত বিচার তো দূরের কথা, চার্জশীট পর্যন্ত দেয়া হয়নি, যা দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। অবশ্য এর বাইরেও সার্বিকভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতন-নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিয়ে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দান এমনকি যৌতুক না পেয়ে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর জিহ্বা ও পায়ের রগ কেটে দেয়ার মতো ঘটনা। অবশ্য নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে যথেষ্ট ভাল আইন রয়েছে। ধর্ষকদের ক্রস ফায়ারে দেয়ার দাবিও উঠেছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। অবশ্য এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা সীমিত। সরকার ও আদালত সে ক্ষেত্রে নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।
×