ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিপণ্য বিপণনে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ এপ্রিল ২০১৮

কৃষিপণ্য বিপণনে

পণ্য মজুদ রেখে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে অধিক মুনাফা লাভের লোভ অতি পুরনো। কত কিছু বদলে যায়। কিন্তু এই চর্চার আর রূপান্তর ঘটে না। হয়ত পরিবর্তনের অন্য দিগন্তটি জানা নেই। এখনও বাজারে চাহিদা থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির ভূরিভূরি উদাহরণ মেলে। আইন থাকলেও তার প্রয়োগের দৃষ্টান্ত মেলে না। মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও তাতে মজুদারদের মধ্যে কোন রেখাপাত করে বলে মনে হয় না। সে রকম নিদর্শন তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় তাদের শক্তিমত্তা বেশি বলেই পার পেয়ে যায়। কৃষি পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই সিন্ডিকেটের প্রভাব এমন যে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। দেশে পর্যাপ্ত আইনগত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বিদ্যমান আইনসমূহে নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মামলা করা হলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তাই বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যবসায়ী বা সরবরাহকারী কৃষি পণ্য ও কৃষি উপকরণ গুদাম, ওয়্যারহাউস থেকে খুচরা বিক্রেতা এবং ভোক্তার কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে অস্বীকার করে। পণ্য মজুদ থাকা সত্ত্বে¡ও তা বিক্রি করা হয় না। অপেক্ষা করা হয়, চাহিদা বাড়ার। যাতে অধিক দামে বেচা যায়। কৃষি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে উৎপাদক ও ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে ১৯২৮ সালে ‘রয়েল কমিশন অব এগ্রিকালচার’ গঠন করা হয়। কমিশনের সুপারিশে ১৯৩৪ সালে কৃষি বিপণন অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে কৃষিজাত পণ্য গুদামজাতকরণ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৫৯ সালে ওয়্যারহাউস অধ্যাদেশ এবং কৃষি পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৬৪ সালে দ্য এগ্রিকালচার প্রোডাক্ট মার্কেটস রেগুলেশন এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়। এই আইন ও বিধিবিধানসমূহে বাজার ব্যবস্থাপনা, মজুদদারি রোধ কিংবা তদারকির ক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা নেই। যে কারণে সরকার আইনগত কর্তৃত্ব ক্ষমতা প্রদান করে কৃষি পণ্য বিপণন আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, ভোক্তার জন্য সহনীয় মূল্য স্থিতিশীল রাখা, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, খাদ্যপণ্যে ভেজাল এবং কীটনাশক ও কেমিক্যালের অবাধ ব্যবহার রোধই হচ্ছে আইনটির উদ্দেশ্য। ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ ও কৃষি পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত মজুদকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করা হচ্ছে। অসাধুু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে এক বছরের কারাদ- এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অপরাধ দুই বা ততোধিক বার করলে শাস্তি হবে দ্বিগুণ। সংঘটিত অপরাধের বিচারের সুবিধার্থে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ জন্য ম্যাজিট্রেটকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফরমালিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেমন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তেমনি পণ্যের মোড়কে পণ্যের পুষ্টিমান উপাদানের শতকরা হার, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও বিক্রয় মূল্য উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা লঙ্ঘনে কারাদ- ও জরিমানার বিধান রয়েছে। পণ্যের ওজনে ঘাটতি থাকলেও শাস্তি হবে। নয়া আইনটি ভোক্তার অধিকার রক্ষা শুধু নয়, বাজার ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে সমস্যা হচ্ছে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে। যোগ্য, দক্ষ, সৎ, কর্মঠ, কুশলী ছাড়া আইনের অপব্যবহার ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। বিশেষ করে নিরীহ ও সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরী। আইনের যথাযথ ব্যবহার এই খাতকে সমৃদ্ধ করবে।
×