ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুতুপালং আশ্রয় শিবির পরিদর্শনে মিয়ানমার মন্ত্রীর ঘোষণা

রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আয়ে। তিনি বুধবার দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন। ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমারের মন্ত্রী কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছান। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিতে প্রথমবারের মতো উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করেন দেশটির সমাজকল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মায়াত আয়ে। রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর মিয়ানমারের কোন মন্ত্রীর এটিই প্রথম সফর। ক্যাম্পে আসার পর কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় দেশটির মন্ত্রীর কাছে। পরে ডি-৫ ব্লকে ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন সমাজকল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মায়াত আয়ে। নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নেন। এসময় ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডসহ-রোহিঙ্গাদের নাগরিক নানান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় রোহিঙ্গারাও মন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। পরে মিয়ানমারের মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ মর্যাদা ও অধিকার বিষয়ে মিয়ানমার সচেষ্ট থাকবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে দেশটির ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলসহ ১৮ জন নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। সেখান থেকে সড়ক পথে বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রতিনিধি দল নিয়ে উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছেন ড. উইন। সেখানে পৌঁছে কিছু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খোলামেলা অলোচনা করেন। এ সময় তিনি আগত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। আর আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে রাখাইনে ফেরত নেয়া হবে। কিন্তু কখন থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে এ বিষয়ে কোন ইঙ্গিত দেননি মন্ত্রী। তবে সেখানে তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পুনর্বাসন করা হবে এবং আস্তে আস্তে সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান দেন। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন শেষে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের মন্ত্রী বলেন, রোিহঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ মর্যাদা ও অধিকার বিষয়ে মিয়ানমার সচেষ্ট থাকবে। এরপর দুপুর ১টার পর পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মায়াত আয়েসহ প্রতিনিধি দলটি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়েন। তবে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্থান পরিদর্শনের কথা থাকলেও সেখানে না গিয়ে সরাসরি হোটেলে চলে যান প্রতিনিধি দল। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্টে হামলার জেরে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে নামে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা। তারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হত্যা করা হয় শত শত রোহিঙ্গাকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে বহু রোহিঙ্গা নারী। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের সীমান্ত মুখে ঢল নামে লাখ লাখ রোহিঙ্গার। যে সংখ্যা (নতুন) ১০ লাখের বেশি। পুরনো রোহিঙ্গাসহ মিলে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে উখিয়া-টেকনাফ দু’টি উপজেলার ৫টি ইউপি এলাকায়। এদিকে মিয়ানমারের মন্ত্রী উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে যাওয়ার সময় রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। এতে পুলিশ বাঁধা দেয়। তারপরও বিক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা সেøাগানে বলেছে, ‘হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করে রোহিঙ্গাদের এখানে বিতাড়িত করা হয়েছে। আমরা বাঙালী নই, রোহিঙ্গা হিসেবে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’ রাখাইন রাজ্যের সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা এ সময় বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উইন মায়াত আয়ে বাংলাদেশে সফর করার সময় রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার খবরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় রবিবার থেকে। উগ্র রোহিঙ্গারা তাদের দেশের মন্ত্রীকে ধিক্কার জানাতে গোপন বৈঠকও করেছে। শনিবার রাতে বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে খালি জায়গায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে তথ্য মিলেছে। রোহিঙ্গা যুবকদের মধ্যে অনেকে রাখাইন ভাষা জানে। রাখাইন ভাষায় মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সেøাগান দিয়েছে রোহিঙ্গারা। যাতে মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নিতে মন্ত্রী অনীহা প্রকাশ করে ও উচ্চপর্যায়ে জানান দেয়। রোহিঙ্গারা যাতে দীর্ঘস্থায়ী এদেশে থেকে যেতে পারে। সচেতন মহল জানান, উগ্র ওসব রোহিঙ্গাদের কারণে প্রত্যাবাসন কাজ বিলম্ব ঘটতে পারে। ক্যাম্পে অবস্থানকারী কিছু রোহিঙ্গা সহজে মিয়ানমারে ফিরে যেতে অপর রোহিঙ্গাদের চাপের মুখে রেখেছে। তাদের ইন্ধন দিচ্ছে আরএসও রোহিঙ্গা নেতা ও কিছুসংখ্যক এনজিও কর্মী।
×