নির্বাচনে ভোটাররা প্রার্থী রাজনীতিকদের বেছে নেয় আর রাজনীতিকরা বাগানোর চেষ্টা করেন ভোটারদের। মালয়েশিয়ায় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিকরা ইতোমধ্যে ভোটার বাগানোর কাজে নেমে পড়েছেন। নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী আগস্টে। ইতোমধ্যে ভোটার টানতে রাজনীতিকদের নানা কূটকৌশল শুরু হয়ে গেছে। শাসক কোয়ালিশন বারিসান ন্যাশনাল ৪৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং তার জন্য নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। তার একটি হলো নির্বাচন কমিশন বা ইসিকে দিয়ে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ। এতে শাসক কোয়ালিশন ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
নির্বাচন হওয়ার আগে সংসদের শেষ অধিবেশন সমাপ্ত হবে ৫ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই পার্লামেন্ট সদস্যরা নির্বাচনী এলাকার নতুন সীমানার ওপর ভোটাভুটি দিয়ে পাস করিয়ে সেটাকে বৈধতা দেবেন।
কিন্তু ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। বিরোধীরা বলছে এটা শাসকদের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা। নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ করে দারুণ অসম সাইজের করা হয়েছে এটাই তাদের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। এই সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গিয়ে বিরোধী শিবিরের সমর্থক হিসেবে ধরে নেয়া শহরাঞ্চলের ও সংখ্যালঘু ভোটারদের অতিমাত্রায় জনবহুল এলাকাগুলোতে ঠেলে দেশ হয়েছে এবং বারিসান ন্যাশনালের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মূলত গ্রামীণ ও মালয়ী ভোটারদের দেয়া হয়েছে জনবিরল প্রাদেশিক আসনের এলাকাগুলোতে। এর ফলে শাসক দলের প্রার্থী নির্বাচিত করতে যত ভোট লাগবে তারচেয়ে বেশি ভোট লাগবে বিরোধী দলের একজন এমপিকে নির্বাচিত করতে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রধানত এই কূটচালের কারণে বারিসান ন্যাশনাল সংখ্যালঘু ভোট পাওয়া সত্ত্বেও ৬০ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছিল।
নির্বাচনী এলাকাগুলোকে সুষম করার পরিবর্তে ইসি এভাবে সেগুলো অসম করে তুলছে। মালয়েশিয়ার শাসনতন্ত্রে বলা হয়েছে যে নির্বাচনী এলাকাগুলো আকারে মোটামুটি সমান হওয়া উচিত। গোড়াতে ওতে উল্লেখ ছিল মালয়েশিয়ার প্রতিটি প্রদেশ বা রাজ্যে এগুলোর আকারের তারতম্য ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। পরে তা সংশোধন করে ৩৩ শতাংশ করা হয়। ১৯৭৩ সালে এই নিয়মটি একেবারেই তুলে দেয়া হয়। ফলে ভোটার বণ্টন অতি অসম রূপ ধারণ করে। সর্বশেষ নির্বাচনী এলাকার মানচিত্র তো আরও খারাপ। শাসক দলের কূটকৌশল এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। নির্বাচনী এলাকার সীমা এমনভাবে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে যে বিরোধী দলের ভোটারদের গুটিকয়েক আসন এলাকায় রাখা হয়েছে আর শাসক দলের সমর্থকরা বিপুল সংখ্যায় থাকছে সংখ্যাগুরু আসনগুলোতে। ফলে বিরোধীদের নির্বাচনে জেতা অসম্ভব হয়ে উঠবে শুধু গুটিকয়েক আসন ছাড়া। প্রথম দিকে ইসির পদক্ষেপ নিয়ে প্রচুর আপত্তি উঠেছে। বেশকিছু মামলাও হয়েছে। বিশেষ করে জোহর ও পেরাকের মতো দোদুল্যমান ভোটারের প্রদেশগুলোতে। নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়তে চান এমন একজন মিজ চিন আবদুল্লাহ বলেছেন। নির্বাচন কমিশন আমাদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে। তারা আমাদের দেখা করতে দিতেও চায় না। অনুরূপভাবে বিচারকরাও কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে এবং মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, শাসনতন্ত্রে পার্লামেন্টকেই নির্বাচনী এলাকার মানচিত্র চূড়ান্তরূপে পুনর্নির্ধারণের অধিকার দেয়া হয়েছে। বিরোধী দল শাসিত একটি প্রদেশ মেলানগোরে একটি আপীল মামলা এখনও ঝুলছে। তবে এই মামলায় যুক্ত সরকারবিরোধীরা পর্যন্ত বলছে মামলায় জয়ী হওয়ার তেমন কোনই আশা নেই।
চলমান ডেস্ক
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: