ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিভাবে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১১ এপ্রিল ২০১৮

কিভাবে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়

বার্ধক্যকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। বার্ধক্য মানেই দৈহিক শক্তি ও সামর্থ্য ক্রমাগত হারাতে থাকা। দুর্বলতা বেড়ে চলা। শরীরে নানা রোগের বাসা বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি কমতে থাকা। দিন দিন মৃত্যু পায়ে পায়ে, আরও কাছে, আরও কাছে এগিয়ে আসতে থাকে। তারপর সেই অনিবার্য মৃত্যুর কাছে নিজেকে চূড়ান্তভাবে সমর্পণের মধ্য দিয়ে সব কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই প্রক্রিয়ার কাছে মানুষ একা নয়, সমস্ত প্রাণীই এর আওতায়। তবে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা এই সত্যটি জেনে নিয়েই গোটা জীবন কাটিয়ে দেয়, মৃত্যু আসছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির বদৌলতে বিশ্বব্যাপী মানুষের আয়ু বেড়েছে। এখন বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭১.৪ বছর। অল্প কিছু ভাগ্যবান মানুষের আয়ু এক শ’ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানের জানা মতে তা এ পর্যন্ত ১২২ বছর ১৬৪ দিন ছাড়িয়ে যায়নি। অতদিন বেঁচে ছিলেন এক ফরাসী মহিলা। নাম জিন ক্লামেন্ট। তিনি যখন জন্মান তখন ইউলিসিস পি গ্র্যান্ট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং যখন মারা যান বিল ক্লিনটন তখন হোয়াইট হাউজে। যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি, ঠিক ৭৯ বছরের নিচে। ১৯০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছরের কিছু উপরে। চিকিৎসা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যরক্ষা এবং রোগ নির্ণয়ের উন্নত পদ্ধতির বদৌলতেই যে এমনটি হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তথাপি এগুলোর কোনটাই জীবনের পরিসমাপ্তির ধারাকে বদলাতে পারে না। কিন্তু একটু যদি বেশি দিন বাঁচা যায় এবং কিছু আনন্দ স্ফুর্তিতে থাকা যায়, তাহলে ক্ষতি কি? এর জন্য সবচেয়ে আগে প্রয়োজন জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এতে সুফলও পাওয়া যায়। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ৭২ বছরের গড় বয়সী ৪৭৬৫ ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় যে, স্মৃতি অংশের সঙ্গে যুক্ত একটি জিন শরীরে ধারণ করা সত্ত্বেও বার্ধক্যের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এমন লোকদের এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এমন জিনের অধিকারী অন্য যারা বার্ধক্যের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখায় তাদের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম থাকে। বুড়ো বয়সে বন্ধুত্ব একটা জীবনীশক্তি হিসেবে কাজ করে। সমস্যা ও সঙ্কট মোকাবেলায় শক্তি যোগায়। বন্ধুদের নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা-তামাশা-মস্করা মনকে প্রফুল্ল রাখে। তবে অতিমাত্রায় প্রফুল্ল ও আশাবাদী লোকদের নিয়ে সমস্যাও আছে। শারীরিক সমস্যার লক্ষণগুলোকে সময় মতো এলে না নেয়ার এবং প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার প্রবণতা তাদের মধ্যে কাজ করতে পারে। ফলে সমস্যা ধরা পড়লে তখন হয়ত দেরিই হয়ে যায়। বার্ধক্যে শরীর যতটা সম্ভব ঠিক রাখার একটা উপায় মূল ব্যায়াম। কিছু কিছু মানুষ অতি বৃদ্ধ বয়সেও কত কি অসাধারণ সব অর্জন করতে পারে তার নজির নিউইয়র্কের হাওয়ার্ড বিচের ৮৪ বছর বয়স্কা জিনেট বেডার্ড। গত বছরের ৫ নবেম্বর এক ঝিরঝিরে বৃষ্টিস্নাত সকালে নিউইয়র্ক সিটির ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন। বেডার্ড ৬৯ বছর বয়সে প্রথম ম্যারাথনে অংশ নেন এবং তারপর থেকে ওই নগরীর প্রায় প্রতিটি ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। বেডার্ড এখন প্রতিদিন সৈকত ধরে তিন ঘণ্টা দৌড়ে থাকেন। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দিনে তিন ঘণ্টা করে দৌড়ানোর অভ্যাস রপ্ত করার পরামর্শ অতি উৎসাহী কোন চিকিৎসকও নিশ্চয়ই দেবেন না। তবে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ শরীর চর্চা স্বাস্থ্যের জন্য যে কল্যাণকর তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ালে সহ্যশক্তি ও ধৈর্য বাড়ে। পেশীর শক্তি ও ভারসাম্য অক্ষুণœ থাকে এবং পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কমে। এতে মানসিক মনোবলও বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধ বয়সে ঠিক কি পরিমাণ ব্যায়াম করলে সুফল পাওয়া যাবে তা অবশ্য গবেষণার বিষয়। ২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বয়স্ক লোকেরা দিনে ১৫ মিনিট দ্রুত হাঁটলে তাদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি যারা ওভাবে না হাঁটেন বা এ জাতীয় ব্যায়াম না করেন তাদের তুলনায় ২২ শতাংশ কম থাকে। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, সপ্তাহে মাত্র দু’দিন ব্যায়াম করলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। কানাডার একদল গবেষকের মতে মাত্র ৬০ সেকেন্ড ধরে শরীরের ঘাম ঝরালেই তা স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের উন্নতি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। শুধু ব্যায়াম করলেই তো হবে না, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও খেতে হবে। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ৫০ বছরোর্ধ যেসব মহিলাকে স্বাভাবিক ওজনের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে অথচ যাদের ওজন ওঠানামা করেছে যেমন কমপক্ষে তিনবার ওজন ১০ পাউন্ডেরও বেশি কমেছে এবং তারপর আবার ফিরে এসেছে তাদের আকস্মিক কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে মৃত্যুর আশঙ্কা যাদের ওজন একই রকম থেকেছে তাদের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি। তাই সোজা কথাটা হলো, স্বাস্থ্যতার পরিচায়ক এমন ওজনের পাল্লার মধ্যে থাকুন। কম খেলে বা ওজন কমিয়ে রাখলেই যে তা আপনাকে দীর্ঘায়ু করে তুলতে সহায়ক হবে এমন কোন কথা নেই। পানাহারকে উপভোগ্য করে তুলুন। এর মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিন। শুধু ব্যায়াম, পানাহার করলেই হবে না। একটু সেক্স করলেও মন্দ নয়। এটা আর গোপন ব্যাপার নয় যে সেক্সের ব্যাপারে সক্রিয় থাকাটা জীবনের পরিতৃপ্তির সঙ্গে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘায়ু হওয়ার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি বিখ্যাত গবেষণায় এ ব্যাপারে এক চমকপ্রদ তথ্য পরিবেশিত হয়। ওয়েলকোর একটি শহরের ৯১৮ জন পুরুষের ওপর দশ বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যারা অতি ঘন ঘন চরমপুলক লাভ করেছে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায় যে বুড়ো বয়সীদের মধ্যে যারা সপ্তাহে একবার বা তার বেশি সেক্স করেছে তাদের কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা যে সব পুরুষ কম সেক্স করেছে তাদের তুলনায় দ্বিগুণ থেকেছে। সুতরাং বুড়ো বয়সী আরও দীর্ঘায়ু হওয়ার ও সুস্থ থাকার মূলমন্ত্রগুলো হলো- মনকে প্রফুল্ল রাখুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্ত্যসম্মত পরিমিত খাবার খান ও একটু-আধটু সেক্স করুন, জীবনকে উপভোগ্য করে তুলুন। দীর্ঘায়ু হওয়ার গোপন রহস্য বৈশ্বিক গড় আয়ু এখন ৭১.৪ বছর। তাই বলে এটা সর্বব্যাপী নয়। কোথাও মানুষের আয়ু অনেক কম আর কোথাও অনেক বেশি। অনেক বেশি আয়ুর লোক আছে এমন পাঁচটি দেশ গবেষকদের ভাষায় ‘ব্লু জোন’। এসব দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী ও সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান কিছু মানুষের বাস। এসব দেশের লোকেরা কেন এত বেশি দিন বাঁচে? কি তার রহস্য? এখন সেটাই দেখা যাক। বলাবাহুল্য, দীর্ঘায়ু লোকেরা এই দেশগুলোর সর্বত্র নয়, নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাসিন্দা। ইতালির সার্ডিনিয়া। এখানে শতবর্ষী পুরুষের সমাবেশ বিশ্বের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি। প্রধানত উদ্ভিদনির্ভর ডায়েট, দৈহিক পরিশ্রম ও পরিবারের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য এদের দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণ বলে মনে করা হয়। এরা মূলত মেষপালক। দিনে কমপক্ষে ৫ মাইল হাঁটাহাঁটি করে। তাছাড়া আছে কিছু পুরুষ যারা বুড়ো বয়সে নিজেদের মেয়েদের কাছে বিশেষ ধরনের সেবাযতœ পেয়ে থাকে। তাই দেখা যায় সার্ডিনিয়ার বেশিরভাগ এলাকার তুলনায় এই জনগোষ্ঠীর আয়ু সব থেকে বেশি। তা ছাড়া অতিরিক্ত আয়ুর সঙ্গে যুক্ত একটি জিন মার্কার এম ২৬ এই নিভৃত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদ্যমান রয়েছে। জাপানের ওকিনাওয়ায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু মহিলারা, যাদের অনেকের বয়স এক’শ বছরেরও বেশি। এদের দীর্ঘায়ু হওয়ার রহস্য পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বলে মনে করা হয়। জাপানী সংস্কৃতির এই বৈশিষ্ট্য বা বন্ধন এখানে সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান। জীবনের শত উত্থান-পতনের মধ্যেও ছোট পরিসরের দৃঢ়-সংবদ্ধ সামাজিক বলয় ওকিনাওয়াবাসীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এই সমর্থনের জোরে তারা মানসিক ট্রেস বা চাপগুলো ঝেড়ে ফেলতে পারে। কোস্টারিকার নিকোয়ার মানুষদের অনেকেরই বয়স ৯০ বছর কি তারও বেশি। ব্লু জোনের বেশিরভাগ মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে। তবে নিকোয়ার অধিবাসীরা সেটিকে আরেক মাত্রায় নিয়ে গেছে। ঐতিহ্যগতভাবেই তারা ক্যালরির বেশিরভাগ পায় শিম, স্কোয়াশ নামে এক ধরনের সবজি এবং ভুট্টা থেকে। সেই সঙ্গে আছে স্থানীয় ফলমূল। এই উদ্ভিদনির্ভর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার এবং প্রচুর সময় বহিরঙ্গনে কাটানোর ফলে তাদের শরীর হয় শক্ত-সমর্থ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। তাছাড়া নিজেদের জীবনধারার কারণে তারা মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবেও পরিতৃপ্ত থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার লোমালিন্ডাই হলো যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র ব্লু জোন। এটি হলো প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের সেভেনথ ডে এভেনটিস্ট চার্চের স্বর্গরাজ্য। অভিন্ন কিছু নীতিমালা অনুসরণ, সমাজের ওপর গুরুত্বদান এবং ‘সাব্বাত’ মেনে চলা অর্থাৎ একটা দিন বিশ্রাম, স্মৃতিচারণ ও নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের ফলে লোমালিন্ডার এভেন্টিস্টরা অন্য আমেরিকানদের তুলনায় ১০ বছর বেশি বাঁচে। অনেকে মাংস পরিহার করে এবং প্রচুর শাক-সবজি, দানাদার শস্য ও বাদাম খেয়ে থাকে। গ্রীসের ইকারিয়া দ্বীপের জনগোষ্ঠীর প্রতি ৩ জনের একজন ৯০ এর কোটায় বেঁচে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের স্মৃতিভ্রংশ এবং ক্রনিক রোগব্যাধি হয় না। এদের সমাজ জীবন সংহত। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস তারা কঠোরভাবে মেনে চলে। প্রচুর ফল, সবজি, বিন, দানাদার শস্য, আলু ও অলিভ অয়েল খায়। আলঝেইমার ঠেকাতে হলে বার্ধক্যের একটা রোগ হলো আলঝেইমার। এতে অপরিবর্তনীয় রূপে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের বৈকল্য ঘটে। ফলে স্মৃতিশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা এবং শেষ পর্যন্ত সহজতম কাজগুলো করার সামর্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন- বুড়ো বয়সে এই রোগ ঠেকাতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করে, সামাজিকভাবে সক্রিয় থেকে এবং নতুন নতুন ক্রিয়াকলাপে মস্তিষ্ককে নিয়োজিত রেখে মস্তিষ্ককে সূক্ষ্ম ও সক্রিয় রাখতে এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবার খেতে হবে যা হচ্ছে ফলমূল ও শাক-সবজি প্রধান। সাঁতার কাটতে হবে ৭৬ বছর বয়স্কা জিটকা তাউফেরোডা চেক প্রজাতন্ত্রের এক সুইমিং ক্লাবের সদস্য। ঠা-া পানিতে সাঁতার কাটা শুরু করার পর থেকে উনি আর অসুস্থ হননি। শেষবারের মতো তার ফ্লু হয়েছিল ২৫ বছর আগে। তার পিঠের ব্যথা দূর হয়েছে। রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটায় ভাঙ্গা হাড় জোড়া লেগেছে। হৃৎপি-ের সবলতাও অনুভব করতে পারেন। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে সাঁতারে শরীরের পুরো অংশ, সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে। বুড়োদের জন্যও সাঁতার আদর্শ। প্রচলিত এ্যারোবিক ব্যায়ামের সব সুফল এতে পাওয়া যায়। হার্ট সবল করা থেকে শরীরের ব্যথা দূর করা, মনমেজাজ প্রফুল্ল করা সবই হয়। তবে কিছু কিছু গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে শীতল পানিতে সাঁতার অদ্ভুতভাবে শরীকে উজীবিত করে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক কেস স্টাডি রিপোর্টে দেখা যায়, নার্ভের ক্রনিক ব্যথায় ভোগা এক তরুণ মরিয়া হয়ে ৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের হিমশীতল পানিতে এক মিনিট সাঁতার কাটার পর তার ব্যথা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। আর ফিরেনি। তাই বলে হিমশীতল পানিতে সাঁতার সবার জন্য নিরাপদ নয়। প্রার্থনা কি আয়ু বাড়ায়? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ধর্ম-কর্ম করার সঙ্গে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার একটা সম্পর্ক আছে। প্রার্থনা মনকে উদ্বেগমুক্ত করে। দেহ মনে শিথিল ভাব নিয়ে আসে। এতে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমে। তার ফলে হার্টরেট ও ব্লাড প্রেসারও কমে আসে এবং ক্রনিক রোগের লক্ষণগুলো দূর হয়। মেডিটেশন ও যোগব্যায়ামে যা হয়, প্রার্থনাতেও তা হয় বলে কিছু কিছু গবেষক মনে করেন। তাদের মতে, ধর্মীয় আপ্তবাক্য নয় বরং ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে অর্জিত মূল্যবোধসমূহ যেমন শ্রদ্ধা, দয়া, সমবেদনা, কৃতজ্ঞতা, দানশীলতা, বিনয়, নম্রতা, সহানুভূতি, ধ্যান, দেহের শুচিতা রক্ষা এগুলো পরোক্ষভাবে আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। অধ্যাপক ম্যারিনো ব্রুস বলেন, এই বিশ্বে আপনি একা মন বরং এক মহাশক্তির অংশ এমন বিশ্বাস জীবনের সমস্যা মোকাবেলায় আস্থা এনে দেয়। জৈবিক দিক দিয়ে এটা স্ট্রেস বা চাপ কমায়। বন্ধুত্ব প্রয়োজন আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা বাড়ছে। ফলে বাড়ছে একাকীত্ব। একাকীত্ববোধ আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। মেদবহুলতা ও বায়ু দূষণের চাইতেও একাকীত্ববোধ শরীরের বেশি ক্ষতি করে। কারণ একাকীবোধ বিশেষভাবে সামাজিক সমর্থনের নিরাপত্তা জাল সরিয়ে নেয়। এতে হৃদস্পন্দন ও ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এর প্রতিকার সহজ। সেটা হলো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব দেহ ও মস্তিষ্ককে স্ট্রেস, উদ্বেগ ও বিচ্ছিন্নœতা থেকে রক্ষা করে। চারপাশে বিশ্বস্ত বন্ধুজন থাকা নিরাপত্তার সঙ্কেত দেয়। বিশেষ করে বুড়ো বয়সের বন্ধুত্ব কল্যাণকর। পারিবারিক বন্ধনের মতোই কল্যাণজনক প্রভাব ফেলে তা। লোকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে এমন লোকজনকে চায় যাদের সঙ্গে তারা কথা বলে আনন্দ পায়, যাদের ওপর তারা নির্ভর করতে পারে এবং যাদের সান্নিধ্য তাদের কাছে উপভোগ্য হয়। বন্ধুত্ব তাই আয়ু বাড়ানোর আরেক উপায়। সূত্র : টাইম
×