ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার হচ্ছে কক্সবাজারে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ এপ্রিল ২০১৮

দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার হচ্ছে কক্সবাজারে

মশিউর রহমান খান ॥ নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সীমানায় কঠোর নিয়ম কানুনে আবদ্ধ না রেখে বন্দীকে মুক্ত আলো বাতাসের স্বাদ প্রদান করতে দেশে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত কারাগার তৈরি করছে সরকার। এ কারাগারে কোন বন্দীকেই সকাল থেকে সন্ধ্যার নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে কারা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করতে হবে না। নিজের বাড়ির মতোই কারাগারের ভেতরে তৈরি বাড়িতেই সাধারণ মানুষের মতোই বসবাস করবেন। বর্তমান পদ্ধতির কারাগারের বর্তমান ধারণা পাল্টে দিতে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো বন্দীকে বন্দী মনে না করে সাধারণ মানুষের মতো মনে করতে বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন এই ওপেন জেলটি তৈরি করছে সরকার। ‘কারাগার হোক সংশোধনাগার’ কারা বিভাগের চলমান এই মূলমন্ত্রকে কাজে লাগাতেই কারা অধিদফতর এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে চায়। মূলত কারাবন্দীকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বন্দীর হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের জন্যই এ কারাগারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৩শ’ ১০ একর জমির ওপর কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলি বিল গ্রামে বাংলাদেশের প্রথম ওপেন জেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারী খাস জমি ও কিছু স্থানীয় ব্যক্তির জমি ক্রয় করে এ কারাগারটি নির্মাণ করা হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের হায়দারাবাদ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এ রকম ওপেন জেল চালু রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটিই হবে এদেশের সর্ববৃহত কারাগার। কারাসূত্র জানায়, জমি বুঝে পাওয়ার পর আগামী তিন বছরের মধ্যেই এ কারাগারটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে চায় কারা অধিদফতর। কারাসূত্র জানায়, এ কারাগারে স্থায়ী সুউচ্চ কোন দেয়াল নির্মাণ করা হবে না। কাঁটাতারের বেড়া বা নামমাত্র একটি সীমানা দেয়া থাকবে। যে সীমানার মধ্যেই বন্দীরা ইচ্ছা করলেই যে কোন স্থানে ঘুরাফেরা করতে পারবেন। সব বন্দী একে অপরের সঙ্গেই দেখা করতে পারবেন। কারাসূত্র জানায়, কারাগারটির নির্মাণকাজের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করেছে কারা অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এ ওপেন জেলের সীমানা খুঁটি ও প্রস্তাবিত স্থানে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে কক্সবাজার জেলা কারা কর্তৃপক্ষ। উন্নত বিশ্বের আদলে নির্মিতব্য এ কারাগারটিতে স্বল্পমেয়াদী সাজাপ্রাপ্ত বন্দী বা সাজা ভোগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে এমন বন্দীদের রাখা হবে। একইসঙ্গে বিচারাধীন বন্দীদেরই এই কারাগারে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। এটি হবে একটি মডেল কারাগার। যেখান থেকে বন্দীরা বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে সংশোধন করে সমাজের মূল ধারায় ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সূত্র জানায়, ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বা কম সশ্রম দ-প্রাপ্ত বন্দীদের এ কারাগারে রাখা হবে। এই বিশেষ কারাগারে দেশের ৬৮ কারাগারের বিভিন্ন শ্রেণীর বন্দীকে বেছে বেছে রাখা হবে। এ কারাগারের বন্দীদের সাজাভোগ শেষে যাতে করে সমাজে ফিরে গিয়ে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা যায় তার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। কারাসূত্র জানায়, স্বল্পমেয়াদে সাজাভোগকারী বন্দীদের বিশাল আয়তনের কারাগারে বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে বন্দীকে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ শেষে সরকারী বিভিন্ন ডিপ্লোমা সনদ প্রদান ও ব্যবসা পরিচালনা বা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য সরকারের সহায়তায় ঋণ প্রদানেরও ব্যবস্থা করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের চলমান কারাগারের ধারণা তৈরি করতে উন্নত বিশ্বের মতো ওপেন জেল বা উন্মুক্ত কারাগার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কক্সবাজারের উখিয়ায় এ কারাগারটি তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বন্দীরা সাধারণ কারাগারের মতো আটক থাকবেন না। সকাল সন্ধ্যায় তাদের লকআপ করা হবে না। সকল বন্দীই ইচ্ছামতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন। এ কারাগারের ধারণা পেতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বিদেশের ওপেন জেল পরিদর্শন করেছেন। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর মাধ্যমে কারাবন্দীকে বন্দী না ভেবে সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাবা হবে। এ কারাগারটি নির্মাণের পর বন্দীদের বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ প্রদান করে স্বাবলম্বী হতে সুযোগ দেয়া হবে। যাতে বন্দীরা কারাগারের সাজা শেষে বাইরে এসে সমাজের মূল ধারায় ফিরতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে বন্দীরা সাজা শেষে পুনরায় অপরাধী হবেন না। এভাবেই সরকারের কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করতে চেষ্টা করা হবে।
×