ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাটাগরি-১ হওয়ার পথে বড় বাধা অতিক্রম করল সিভিল এভিয়েশন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ এপ্রিল ২০১৮

ক্যাটাগরি-১ হওয়ার পথে বড় বাধা অতিক্রম করল সিভিল এভিয়েশন

আজাদ সুলায়মান ॥ নিরাপদ ও নির্ভরতার সঙ্গে বিমান চলাচলে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও)। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের অবস্থান আরও সুসংহত ও ভাবমূূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। গত সপ্তাহে এ স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে আইকাও। ‘আইকাও কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট’ নামের বহুল প্রতিক্ষীত এই এ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর করা হবে আগামী মাসেই। নেপাল দুর্ঘটনায় দেশ বিদেশে নেতিবাচক সমালোচানার মুখে এই এ্যাওয়ার্ড অর্জন দেশের এভিয়েশন সেক্টরের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী। সিভিল এভিয়েশনে বর্তমান স্ট্যাটাস থেকে ক্যাটাগরি-১ করার পথেও এই স্বীকৃতি বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে এই এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিকে বড় বাধা অতিক্রম হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান। বলেছেন, এটা অর্জন করতে যেমন পরিশ্রম করতে হয়েছে, এখন এটা ধরে রাখাটাও হবে আরও চ্যালেঞ্জিং। কারণ কোন কারণে এখন একটু বিচ্যুতি ঘটলে যদি র‌্যাংকিং কমে যায় বা নিচে নেমে যায়-তাহলে হৈচৈ পড়ে যাবে। তিনি এ কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবে সিভিল এভিয়েশনের এফএসআর উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবিরসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিরলস পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করেন। সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, সেফটি ওভারসাইড প্রগ্রেসের ভিত্তিতে প্রতি বছর আইকাও সদস্য দেশগুলোকে সার্টিফিকেট ও এ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে আইকাও। এভিয়েশন খাতের নিরাপত্তায় দ্রত উন্নতির বিবেচনায় এই বছর সিভিল এভিয়েশন-আইকাও কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট’ ও এ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে। আইকাও থেকে ৬ এপ্রিল এই সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছে সিভিল এভিয়েশন। উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সিভিল এভিয়েশনের সেফটি ওভারসাই কার্যক্রম নিরীক্ষাকল্পে আন্তজার্তিক এভিয়েশন সেফটি প্রোগ্রাম (আইএএসএ) অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের ফেডারেশন এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) প্রতিনিধি ঢাকায় আসেন। সিভিল এভিয়েশনের সার্বিক কারিগরি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে গত ২ এপ্রিল এ তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতেও তারা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের ভূয়সী প্রসংসা করেন। আইকাও এ্যাওয়ার্ড অর্জনের নেপথ্যে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সেই পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবির বলেন-২০১৭ সালের সেফটি স্ট্যান্ডার্ড কমপ্লায়েন্স -এর দিক থেকে শতকরা ৭৫ দশমিক ৩৪ স্কোর অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এটি আইকাও এর নির্ধারিত মানদ-ের থেকেও বেশি। আমরা সব সময়ই এভিয়েশন খাতের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কাজ করছি। আগের বছরের তুলনায় সেফটি স্ট্যান্ডার্ড কমপ্লায়েন্স ৫০ শতাংশের বেশি উন্নয়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। নিরাপত্তা বিষয়ে আমাদের চলমান অগ্রগতির এটি একটি স্বীকৃতি। এ দিকে সিভিল এভিয়েশনের বর্তমান স্ট্যাটাস থেকে ক্যাটাগরি-১ করতে হলে আরও দুটো অডিটের মুখোমুখি হতে হবে। এ এ্যাওয়ার্ডের পর আইকাও থেকে আরও একটি টিম ঢাকায় আসবে আগামী মাসে। তারা সর্বশেষ সেফটি ইস্যুতে সার্বিক অডিট করে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়ার পর আগামী ডিসেম্বরের আগেই চূড়ান্ত অডিটের আবেদন জানাবে সিভিল এভিয়েশন। মূলত ওই টিমের অডিটের প্রতিবেদন অনুকূলে গেলেই সিভিল এভিয়েশনের স্ট্যাটাস-১ এ উন্নীত করবে আইকাও। তখনই চালু করা সম্ভব হবে বহুল প্রতিক্ষীত নিউইয়র্ক ফ্লাইট। এ সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশনের সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান এ এ্যাওয়ার্ডের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে বলেছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় অর্জন। কারণ আইকাও-এমন একটা প্রতিষ্ঠান যা কোন প্রভাব তদবির বা লবির চাপে কখনও নতিস্বীকার বা কাজ করে না। আইকাও যখন এমন একটি স্বীকৃতি দিয়েছে তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিরাপদ বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ও আস্থার প্রতীক বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, এ অর্জন একদিনে হয়নি। এ জন্য অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে। বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনের এফএসআর বিভাগ ধারাবাহিকভাবে যথেষ্ট পরিশ্রম ও সাধনার করেছে বলেই আইকাও সন্তুষ্ট হয়ে এ স্বীকৃতি দিয়েছে।
×