ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের জমি নিয়ে দুই শিল্প গ্রুপে বিরোধ, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ এপ্রিল ২০১৮

রেলের জমি নিয়ে দুই শিল্প গ্রুপে বিরোধ, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জেলার সীতাকুণ্ডে লিজ দেয়া জায়গা দখল নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ দুই শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম (কবির স্টিল রি-রোলিং মিল্স) এবং পিএইচপি ফ্যামিলি। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন এবং গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সন্ত্রাসী বলতেও ছাড়ছে না। সোমবার লিজ হস্তান্তরকারী স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল আলম বলেন, ‘পিএইচপি গ্রুপের কাছে জমি বিক্রি করিনি। ভূমিটি হস্তান্তর করেছি কেএসআরএম গ্রুপকে।’ এই গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, পিএইচপি গ্রুপ তাদের লিজের সপক্ষে রেলওয়েকে যে কাগজপত্র দাখিল করেছে তা ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। নিয়মিত খাজনা প্রদান এবং ভোগ দখল সূত্রে এই ভূমি তাদেরই। সেখানে অন্য কোন পক্ষে মালিকানা বা দখল দাবি করার ভিত্তি নেই। কেএসআরএম গ্রুপের কর্মকর্তারা সোমবার নগরীর আগ্রাবাদে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, সীতাকু-ের বাড়বকু- এলাকায় রেলের ১ দশমিক ৬৪ একর জমির লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে তারা তা বৈধভাবে ভোগ দখলে রেখেছেন। এ সময় কর্মকর্তারা রেল থেকে এই ভূমির লাইসেন্স অর্জন এবং খাজনা প্রদানের কাগজপত্রসহ পুরো প্রক্রিয়াটির দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরেন। কেএসআরএম’র সিইও মেহেরুল করিম বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়বকু-ে অবস্থিত এই ১ দশমিক ৬৪ একর জমির বৈধ ইজারাদার ছিলেন স্থানীয় নূরুল আলম। এরপর তিনি জায়গাটির লিজ রেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কেএসআরএমকে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে এ ভূমি তাদেরই ভোগ দখলে। তবে সেখানে কোন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। পিএইচপি গ্রুপ যে দাবি করছে তা একেবারেই সত্য নয়। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিটাগাং চেম্বারের মধ্যস্থতায় আরবিট্রেশন চলছে। আরবিট্রেশন প্রক্রিয়ায় রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি এবং এম এ লতিফ এমপি একজন কৌঁসুলিও নিয়োগ করেছেন। দুই এমপি বর্তমানে দেশের বাইরে। তারা ফিরলেই এ বিষয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেএসআরএম গ্রুপের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০১৬ পর্যন্ত এই জমির লাইসেন্স ছিল স্থানীয় নূরুল আলমের নামে। এরপর তিনি ইজারা হস্তান্তর করেন কেএসআরএম গ্রুপের কাছে, যার দালিলিক প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। মাঝে ২০০৪-২০০৫ সালে অন্য কোন পক্ষ কিভাবে ঢুকে পড়তে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। পিএইচপি যে কাগজপত্র রেলকে দিয়েছে তা তদন্ত ও যাচাই-বাছাইয়ের মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। নূরুল আলমের যে স্বাক্ষর সেখানে রয়েছে তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। তিনি জানান, আরবিট্রেশনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। পিএইচপি গণমাধ্যমের কাছে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএম গ্রুপের জিএম সৈয়দ নজরুল আলম এবং লিজ হস্তান্তরকারী নূরুল আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূরুল আলম জানান, তিনি পিএইচপি গ্রুপের কাছে জমি বিক্রি করেননি। তাছাড়া রেলের জমি বিক্রির এখতিয়ারও তার নেই। তিনি রেলের মাধ্যমে ইজারা হস্তান্তর করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের কাছে, পিএইচপি গ্রুপের কাছে নয়। কেএসআরএম কর্মকর্তারা বলেন, দেশের দুই বৃহৎ শিল্প গ্রুপের মধ্যে এই ধরনের বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য সম্মানজনক নয়। আমরা আশা করছি ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
×